ঢাকা ০৯ আগস্ট, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
রংপুরে যাত্রীবাহী বাসে র‌্যাবের তল্লাশি গাঁজাসহ গ্রেফতার-২ ডেঙ্গুতে প্রাণ গেলো আরও ৩ জনের আগামী ১০ বছরের মধ্যে যমুনায় কোন মাছ পাওয়া যাবেনা, দাবি জেলেদের যমুনার বুকে জেগে উঠা চরে সোনালী ফসলে কৃষকের হাসি লোকসানে চলা স্থলবন্দরগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে: নৌ পরিবহন উপদেষ্টা প্রাথমিক শিক্ষকরা পাচ্ছেন ১১তম গ্রেড, বেতন বাড়বে কর্মকর্তাদের দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন চুন্নু সাংবাদিক তুহিন হত্যার দ্রুত বিচারের দাবীতে সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাব একাংশের মানববন্ধন সাংবাদিক তুহিনকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত জম্মু-কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষ, ২ ভারতীয় সেনা নিহত

যমুনার বুকে জেগে উঠা চরে সোনালী ফসলে কৃষকের হাসি

#

০৯ আগস্ট, ২০২৫,  4:15 PM

news image

শাহীন খন্দকার: চলতি বছর টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ণে যমুনা নদীর বুকে জেগে উঠা চরাঞ্চলে নানা জাতের রবিফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। গাবসারা ইউনিয়নের চাষী মোহম্মদ ওসমান আলী আকন্দ বলেন, উল্লেখযোগ্য ফসলের মধ্যে ভুট্টা, কালোজিরা, তিল-তিসি , মরিচ, বাদাম, পিয়াজ, রসুন, আলু, বেগুন, রাধুনীসজ, ধনিয়াসজ, মৌরীসজ, মাসকলাই, খেসারী কলাইসহ তামাক চাষে চাষীরা সফল। অতিতে বর্ষা এলেই সরকারসহ বিভিন্ন এনজিওর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তেন চরের কৃষকেরা। এখন চরের কৃষকেরা যদি ইচ্ছে করে সরকারকে ত্রান দিতে পারবে বলে দাবি করেন! চলতি বছর অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টার চাষে তুলনামূলক খরচ কম হয়েছে এবং উৎপাদন বেশি বলে জানিয়েছেন। এছাড়াও উৎপাদিত ভুট্টা  ভালো দরে বিক্রি করে লাভবান হওয়া যায় বলে কৃষকরা ভূট্টা চাষে ঝুঁকছেন। এ বছর কৃষকরা বাম্পার ফলনসহ বাজার দর ভালো বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

জানা যায়, ভুঞাপুর উপজেলার যমুনার বুকে জেগে উঠা অর্জুনা, গাবসারা, গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ব্যাপক পরিমানে ভুট্টার চাষের পাশাপাশি অন্যান্য ফসলও ভালো হয়েছে। বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভুট্টা তিলসহ বাদাম ও কালোজিরা চাষের মাধ্যমে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন কৃষকেরা। বন্যার পানিতে পলি জমে জমি উর্বর হয়েছে। তাই ভুট্টা বাদাম, তিল-তিসি, কালোজিরা চাষে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। কৃষকদের দাবি এক মন কালোজিরা বিক্রি হচ্ছে পাইকারি ১০ হাজার টাকায়, তিল-তিসি বিক্রি হচ্ছে প্রতিমন ৩-৪ হাজার টাকায়, ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে ১২-১৭ শত টাকায়, শুকনা মরিচ পাকা ৮ হাজার টাকা মন দরে। চরের কৃষকেরা বলেন, যমুনা এপাড় ভাঙ্গঙ্গে ওপারে গিয়ে বসতিসহ কৃর্ষিকাজ করে থাকেন। প্রশ্নের জবাবে বলেন, যমুনা পাড়ের কৃষকেরা ঝড়বৃষ্টি বর্ষা-যমুনার সঙ্গে প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধ করে। কৃষি অধিদপ্তর বা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তারা কোন ধরণের সহযোগিতা পান না। বিঘা প্রতি কালোজিরা চাষ হচ্ছে ৩-৪ মন, ভুট্টা বিঘা প্রতি ৩০-৩৫ মন, মাসকালাই বিঘাপ্রতি ৫-৭ মন খিসাড়ি কালাই ৮-৯মন,মসুরি কালাই ৪-৬ মন পিয়াজ-রসুন বিঘা প্রতি ১০-১৮মন গমবিঘা প্রতি ১৮-২০মন, বাদাম হচ্ছে বিঘাপ্রতি ৮-১০মন। চরে এক সময় প্রচুর আউশ-আমন, তুলশিমালা, ভাতুরি ধান, কালামানিক ধান , ইজুলী ধান, লালঢেপা , পুইটা ঢেপা, কার্ত্তিজুলধান চাষ হতো এবং ভাতও খুবই সু-স্বাদ ছিলো! তবে ধানের জমি দখল করে নিয়েছে ভুট্টা ও তামাক চাষিরা। কিছু কিছু জমিতে চাষ হচ্ছে ইরি ব্যুরোধান।

কৃষক আবেদ শেখ জানিয়েছেন, বর্ষার শেষে যমুনার কিনারে ভেদরের মধ্যে বরোধানসহ ভাদ্র-আশ্বিনে গাইঞ্জাধান চাষ হচ্ছে। মোহম্মদ হাকিম আলী বলেন, এই অঞ্চলের আউশধান থেকে সু-স্বাদের চিড়া হতো যা দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয় খাবার ছিলো ।  ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোখলেসুর বলেন, কৃষক রয়েছে ৫৫হাজার মোট কৃষি জমির পরিমান ১৬হাজার ৪৪০ হেক্টর। চরাঞ্চলের কৃষি জমির পরিমান ২হাজার ৯৭০ হেক্টর। কালোজিরা চাষ হয়েছে ১০ হেক্টর জমিতে, তিল চাষ হয়েছে ২হাজার ১০ হেক্টর, ভুট্টা ৩ হাজার ৪৫ হেক্টর, মরিচ চাষ হয়েছে ১৯৫ হেক্টর, বাদাম ১ হাজার ৭৩০ হেক্টর , রাধুনী ৩৫ হেক্টর , ধনিয়া ৫৫ হেক্টর, খেসারীকলাই ১২৬০ হেক্টর , মাসকালাই ১৫৫৫ হেক্টর , মসূরকলাই ৮৫৫ হেক্টর।

এছাড়া চরে যে সব ধান চাষ হতো তার মধ্যে বিলীন হয়েছে, কুনাই বোরো,কালি বোরো, ঢেকিধান, হাসি কলসি এবং ঢোলকলমি। কৃষিকর্মকর্তা আরো বলেন, চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলসহ উপজেলায় ৪০ হাজার ৬৪২ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে।উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের যমুনা চরাঞ্চলের ভুট্টা চাষি কোরবান তালুকদার, আব্দুল মালেকসহ কৃষকরা বলেন, বন্যার কারণে আমাদের তৈরি করা বীজতলা, সবজি ক্ষেত ও ফসল সব নষ্ট হয়ে যায়। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বালু চরের জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ফলন বেশি হয়েছে। তবে বর্তমান বাজারদরও ভালো। স্থানীয় হাটে রামপুর গ্রামের ভুট্টা চাষি চান্দু শেখ বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পলি জমে জমি আরো উর্বর হয়। এছাড়াও এখানকার মাটি ভুট্টা চাষের উপযোগী হওয়ায় বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর আমি ১৫ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। বিঘাপ্রতি ২৫-৩০ মণ করে ফলন পেয়েছি। সকল খরচ বাদ দিয়ে ৫ লাখ টাকা লাভের আশা করছি। তিনি বলেন, গত বছর প্রতিমণ ভুট্টা ১২০০-১৫০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারলেও এবছর আশা করছি আরো বেশী দরে বিক্রি হবে।

উপজেলা কৃর্ষি কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছর যমুনার চরাঞ্চলে জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের চেয়েও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। কম খরচে চাষ করে বেশি উৎপাদন করা যায় বলে কৃষকরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছেন। এছাড়াও আমরা মাঠ পর্যায়ে  কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করছি। সেই সঙ্গে সরকারের প্রনোদনাও দেওয়া হচ্ছে। তবে ৫৫ হাজার কৃষককে আমাদেও পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব না হলেও দরিদ্র কৃষকদের সরকারী প্রণোদনা দেওয়া হয়।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম