ঢাকা ১৮ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
জাতীয় ট্যালেন্ট হান্ট ক্রিকেটে সাপাহারের ২ শিক্ষার্থী স্বর্ণের দামে বড় পতনের পূর্বাভাস আগামীকাল সচিবালয়ে বিক্ষোভের ঘোষণা ১১ মাসে রাজস্ব আদায় ৩ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা: এনবিআর দেশে ফিরেছেন ২৯ হাজার ৭৩ হাজি ঈদযাত্রার ১২ দিনে সড়কে ঝরল ৩১২ প্রাণ নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন চান রিজভী জনসংযোগ-নিরাপত্তার মিশ্রণে দায়িত্ব পালনে এসএসএফের সদস্যদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান সন্ধ্যায় হাসপাতালে যাবেন খালেদা জিয়া বন্দর নবীগঞ্জে পাষণ্ড স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন

পদ্মা সেতু: মাছ চাষিদের আয় বাড়বে ২০০ কোটি টাকা

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ জুন, ২০২২,  2:46 PM

news image

পদ্মা সেতু চালু হলে গোপালগঞ্জে মৎস্য চাষিদের  আয় বাড়বে ২০০ কোটি টাকা। ধানের পর নিম্ন জলাভূমি বেষ্টিত গোপালগঞ্জ জেলার চাষিদের আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তর খাত মৎস্য চাষ। মৎস্য চাষ করে জেলার ৫ উপজেলার ১৭ হাজার  চাষি সামলম্বী হয়েছেন। মিষ্টি পানিতে গোপালগঞ্জে উৎপাদিত মাছ খুবই সুস্বাদু। তাই সারা দেশে এ মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।  গোপালগঞ্জ থেকে চাষিরা তাদের উৎপাদিত মাছ মধ্যসত্ত্বা ভোগীর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠান। তাই তারা মাছের ন্যায্য মূল্য পান না। পদ্মা সেতু চালু হলে তারা সরাসরি ঢাকার আড়তে মাছ বিক্রি করে আরো বেশি লাভবান হবেন। গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় জানিয়েছে, গোপালগঞ্জের ৫ উপজেলায় ১১৪ টি বিল, ১২৫ টি খাল, ৫ টি নদী ও ৬ টি বাঁওড় রয়েছে।

এসব উৎসতে প্রতি বছর ১০ হাজার মেট্রিক টন পুঁটি, ট্যাংরা, শৈল, মাগুর, কই, শিং, টাকি, খলিশা, গজার, রুই, কাতলা, বোয়াল, আইড়, চিংড়ি, ইলিশ, নান্দেল সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদিত হয়। জেলার ১৬ হাজার ৯৯৮ টি পুকুর ঘোর ও মৎস্য খামারে ১৬ হাজার ১৮৫ জন খামারী ৩০ হাজার ২০০ মেট্রিকটন রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, গ্রাস কার্পসহ কার্প জাতীয় মাছের উৎপাদন করেন। এছাড়া ১ হাজার খামারী ১ হাজার ঘেরে ৭৫২ মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদন করেন। সব মিলিয়ে জেলায় ৪০ হাজার ৯৫২ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। প্রতি কেজি মাছ গড়ে ২০০ টাকা কেজি দরে চাষি ও মৎস্যজীবীরা বিক্রি করেন। সে হিসেবে এ জেলায় ৮১৯ কোটি ৪ লাখ টাকার মাছ উৎপাদিত হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে চাষি সরারসি ঢাকায় মাছ বিক্রি করতে পারবে।  প্রতি কেজি মাছে তারা অন্তত ৫০ টাকা বেশি পাবেন। সে হিসেবে গোপালগঞ্জে মাছে আয় বাড়বে ২০৫ কোটি টাকা।  গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাজুলিয়া গ্রামের মৎস্যচাষি হাফিজুর রহমান  বলেন, আমি মাছ চাষ করে সামলম্বী হয়েছি। আমরা বিলের শ্যাওলা, গমের ভুষি ও চালের কুড়া দিয়ে কার্প জাতীয় মাছ চাষ করি। তাই আমাদের মাছের স্বাদ নদী বা বিলের মাছের মতই। সারাদেশে আমাদের মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরা সরাসরি ঢাকার করওয়ান বাজারে এই মাছ নিয়ে বিক্রি করতে পারি না। মাছ পাঠালে ঘাটেই পঁচে যাওয়ার আশংকা ছিল। পদ্ম সেতু চালু হলে আমরা সরাসরি ঢাকা মাছ বিক্রি করতে পারব। এতে আমরা প্রতি কেজি মাছে ৫০ থেকে ৭৫ টাকা বেশি পাব। বেশি দামে মাছ বিক্রি করে পরিবহন খরচ বাদেও  বছরে অরো অন্তত ২০ লাখ টাকা অরিরিক্ত  আয় করতে পারব। মুকসুদপুর উপজেলার উজানী গ্রামের মৎস্য চাষী খলিলুর রহমান সোহেল বলেন, মৎস্য খাদ্যের দাম বেড়েছে। আমরা মৎস্য খাদ্য নির্ভর মাছ চাষ করলে লাভবান হতে পারতাম না। চান্দা বিলে আমার ঘের। এখানে ন্যাচারাল পরিবেশে ও বিলের খাবার দিয়ে খুব কম খরচে আমরা মাছ উৎপাদন করি। তাই এ মাছ চাষে আমাদের লাভ থাকে। এখন পদ্মা সেতু চালু হলে আমরা সরাসরি ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় মাছ বিক্রি করে আরো বেশি টাকা আয় করতে পরবো। মৎস্য খাদ্য নির্ভর খামারীদের কথা চিন্তা করে মাছের খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবি জানান ওই মৎস্য খামারী। ফড়িয়া জামাল শেখ বলেন, গোপালগঞ্জের মাছ আমরা খামারীর কাছ থেকে কিনে সাধারণত ফরিদপুরের ভাঙ্গা, ঢাকা, খুলনা , মাদারীপুর সহ বিভিন্ন জেলায় চালান করি। এতে আমাদের পরিবহন খরচ বাদে কিছু লাভ থাকে। এখন পদ্মা সেতু খুলে দিলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ হবে। খামারী সরাসরি মাছ বিক্রি করে লাভবান হবেন।  জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বৈরাগী বলেন,গোপালগঞ্জ জেলা নিম্নজলাভূমি বেষ্টিত একটি জেলা। এ জেলার ৫ উপজেলাতেই মাছ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি বছরই নতুন নতুন মাছের খামার গড়ে উঠছে। মাছ চাষ করে  এখন পর্যন্ত গোপালগঞ্জের ১৭ হাজার খামারী সাবলম্বী হয়েছেন। এ জেলায় কৃষি ও মৎস্য নির্ভর শিল্প গড়ে উঠলে মাছের খাবার আরো সহজ লভ্য হবে। তখন মৎস্য চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে। এ জেলায় বর্তমানে প্রতি বছর ৪০ হাজার ৯৫২ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। যার বাজার দর ৮১৯ কোটি ৪ লাখ টাকা। পদ্মা সেতু চালু হলে কৃষক এ মাছ সরাসরি ঢাকা বিক্রি করতে পারলে প্রতি কেজি মাছে তারা কমপক্ষে ৫০ টাকা বেশি পাবেন। এতে তাদের আয় বাড়বে ২০৫ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুকে ঘিরে এ অঞ্চলে মৎস্য চাষ বৃদ্ধি, মৎস্য ও কৃষি নির্ভর শিল্প স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোপালগঞ্জ জেলার একটি বিশাল জনগোষ্ঠি তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারবে।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম