
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭ জুন, ২০২৫, 11:13 AM

চড়া সুদের মাশুল দিচ্ছে সরকার
সরকারের ধারকর্জ ও ঋণের বোঝা দিন দিন ভারী হচ্ছে। এতে সুদ পরিশোধের ব্যয়ও বাড়ছে। বর্তমানে চড়া সুদহার থাকায় বেসরকারি খাতে যেমন ব্যয় বাড়ছে, তেমনই সরকারকে অতিরিক্ত মূল্য দিতে হচ্ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বাড়বে। গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে সরকারের সুদ ব্যয় বাড়ছে ৫১ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের সুদ ব্যয় হয়েছিল ৭০ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য এই ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। চড়া সুদহার থাকলে এই ব্যয় আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি ২০২৫-২৬ থেকে ২০২৭-২৮’ তথ্যে প্রকাশ করা হয়েছে, সরকারের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের ১৮.৭৫ শতাংশ গত অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে। আগামী দিনে সুদ পরিশোধে ব্যয় প্রায় ১৫ শতাংশে আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। কিন্তু আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে সুদ ব্যয় এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা বাজেটে প্রস্তাব করা হলেও এটি আরো বাড়তে পারে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দীর্ঘদিন ৯ শতাংশ ব্যাংকঋণের সুদের হার আটকে ছিল। তখন সরকারের নীতি সুদহার ৭ শতাংশের ঘরে ছিল। বর্তমানে ব্যাংকঋণের সুদহার ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এদিকে নীতি সুদহার উন্নীত হয়েছে ১০ শতাংশে। এ ছাড়া ট্রেজারি বন্ড, বিল ও সঞ্চয়পত্রের সুদহার প্রায় ১২ শতাংশ হারে পরিশোধ করতে হচ্ছে সরকারকে। এই সুদহার ধরে না রাখতে পারলে আরো চড়া সুদের মূল্য দিতে হবে। আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসাবে দেখা যায়, আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ এক লাখ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এক লাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ২০২৭-২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে এক লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য। সুদ পরিশোধের প্রবণতা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত মোট রাজস্ব বাজেটের ২০ শতাংশের কম সুদ পরিশোধে খরচ হতো। ২০০৯-১০ অর্থবছরে মোট রাজস্ব বাজেটের ১৮.৬৫ শতাংশ খরচ হয় সুদ পরিশোধে। শুধু ২০২০-২১ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে খরচ মোট রাজস্ব বাজেটের ২১ শতাংশে পৌঁছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে মোট রাজস্বের প্রায় ২৮ শতাংশ। সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ