ঢাকা ১৯ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
৫ আগস্ট সরকারি ছুটির ঘোষণা আসছে ২৫৩ জনের গুমের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন প্রবাসীরা ফেরার সময় শুল্ক ছাড়াই আনতে পারবেন যে ১৯ পণ্য বাংলাদেশকে দুই প্রকল্পে ৬৪০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘এরিক’ ইসরায়েল-ইরান সংঘাত: জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম গ্রেপ্তার বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা প্রচারে লিফলেট বিতরণ ইসলামপুরে শরীর সুস্থ রাখতে কাঁঠালের উপকারিতা গাজায় ইসরাইলি হামলায় একদিনে ৭২ ফিলিস্তিনি নিহত

“পিটার হাসের রাজনৈতিক বক্তব্য কতটা সমীচিন”

#

১৮ অক্টোবর, ২০২৩,  4:45 PM

news image

-অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া-


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে বাংলাদেশের সচেতন জনগণ হতাশ হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতেরাও নানা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কথা বলছেন যা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত ও স্বাধীন দেশের জনগণের জন্য অসম্মানজনক। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের করা সকল কর্মকান্ড ও আচরণ সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অপরাধ্যোগ্য। বিএনপির প্রতি তার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন পক্ষপাতমূলক আচরণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের অবৈধ হস্তক্ষেপরেই ইঙ্গিত বহন করছে। যা কোনভাবেই বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন দেশে গ্রহনযোগ্য নয়।বিএনপির এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বুঝতে হবে বাংলাদেশের মূল শক্তি এদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ। বাংলাদেশের জনগণ যখন যা চেয়েছিল সবসময় তাই হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। নতুন কোন অবতার এসে বাংলাদেশের কোনো বিষয়ে অতীতে যেমন কখনও কোনো পরিবর্তন করতে পারেনি তেমনি ভবিষ্যতেও পারবেনা।

বিএনপিকে রক্ষা করতে এবং তাদের ক্ষমতায় আসীন করতে অবতার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। গত রোববার (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে একটি সেমিনারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের বক্তব্য থেকে তার স্পষ্টতা পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে আরও বলতে হবে, বাবা তুই আমাদের বাঁচা।’ তার এই বক্তব্যই প্রমাণ করছে যে পিটার হাস এখন বিএনপির অবতার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি অবতার হয়ে বিএনপির পক্ষে কথা বলে তাদের উস্কে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের এমন পক্ষপাতমূলক আচরণ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।বাংলাদেশে নিযুক্ত সকল রাষ্ট্রদূতের নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে এদেশের জনগণ। রাষ্ট্রদূতদের এদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ ও একপাক্ষিক কর্মকান্ড অশোভন, গর্হিত ও শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে বিবেচিত। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্দিষ্ট একটি দলের পক্ষ অবলম্বন করে তার কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন এবং সে লক্ষ্যে নানা সময় বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন। তার এই সকল কর্মকান্ড থেকেই প্রতীয়মান হওয়া যায় যে তিনি নতুন বিএনপির অবতার হিসেবেই এসেছেন।

আমরা দেখছি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির ওপর ভরসা করেই বিএনপির চূড়ান্ত আন্দোলনের রাজনৈতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিজেদের ‘ভগবান’ বলে দাবি করে তার কাছে নিজেদের রক্ষার জন্য বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এই আবেদন এখন সর্বজনবিদিত।আর গণতন্ত্রের নামে বিএনপির চলমান জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনে পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন বিএনপির এই আন্দোলনকে উস্কে দিচ্ছে।বিএনপির অবতার পিটার হাসের আচরণ সবসময়ই পক্ষপাতমূলক এবং একপেশে ছিল যা তিনি অনেক আগে থেকে করে আসছেন। গত বছর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিএনপির নিখোঁজ সাবেক এক নেতার বাসায় গিয়ে বিশেষ আলোচনা করেছেন। তিনি মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে নিখোঁজ ব্যক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়ে আলোচনায় অংশ নিলেও সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সহস্রাধিক গুম হওয়া সরকারি কর্মকর্তার স্বজনদের কথা কর্ণপাত করেননি। এমনকি ওই সকল জনহারা ব্যক্তিদের উদ্যোগে গঠিত ‘মায়ের কান্না’ নামের সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দেওয়া স্মরকলিপিও গ্রহণ করেননি বিএনপির অবতার এই মার্কিন রাষ্ট্রদূত। এ সময় পিটার হাসের আচরণ ছিল অদায়িত্বসূলভ, অপেশাদারী এবং অংশত অমানবিক, যা ভিয়েনা কনভেনশনের (১৯৬১) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর তথা বিএনপির স্বার্থসিদ্ধির জন্য অসৌজন্যমূলক এবং পক্ষপাতমূলক আচরণের মাধ্যমে তার কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করছেন।এছাড়া সংবাদপত্রের মারফতে আমরা জানতে পারি যে, মায়ের কান্না নামের সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কথা না শুনে ও তাদের স্মারকলিপি গ্রহণ না করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্থান ত্যাগ করেন, যা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দ্বৈত আচরণের বহিঃপ্রকাশ। তিনি মুখে মানবাধিকারের কথা বললেও আদতে তিনি মানবাধিকার হরণের পন্থায় হাঁটছেন। বাংলাদেশের জনগণ এমন কোন রাষ্ট্রদূতের কাছে এহেন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ আশা করে না এবং কোনো রাষ্ট্রদূতের এমন আচরণ সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক আইন বিরোধী এবং একটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হ¯স্তক্ষেপস্বরূপ।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্বে বাঙালি জনগণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে পেরেছিলেন বলেই আজকে বাংলাদেশ উন্নতি করতে পেরেছে। বিএনপির সময়ে যে বাংলাদেশ ছিল সন্ত্রাসের, দুর্ভিক্ষের, দুর্নীতি এবং দুবৃত্তায়নের, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বে গণতন্ত্রের এবং উন্নয়নের বিস্ময়।যে বাংলাদেশ একসময় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছিল প্রায় অচেনা। সে দেশ এখন জাতিসংঘের ‘শান্তি রক্ষায়’ সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চিন্তকদের মতে বাংলাদেশের এ অভাবনীয় সাফল্যের মূলে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুকরণীয় নেতৃত্ব। তাঁর দেশ পরিচালনার নীতি ও দূরদর্শী নেতৃত্ব সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের দিন বদল করেছে। মজার বিষয় হচ্ছে এখন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থা শেখ হাসিনা প্রণীত দারিদ্র্য বিমোচন নীতি অনুসরণ করে যাচ্ছে। গণতন্ত্রমনা বাঙালি জনগণের আশা-ভরসার একমাত্র নির্ভরযোগ্য স্থল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির উন্নয়ন ও তার গতিধারা অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

বাঙালি জাতি বিশ্ব ইতিহাসে একটি সাহসি জাতি, বীরের জাতি এবং বিজয়ী জাতি। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি এমন হস্তক্ষেপ এবং তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণ কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের উচিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের অবতার হিসেবে আবির্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের বিরোধিতা সত্ত্বেও সাহসী বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের বুকের রক্তে আমরা অর্জন করেছি আজকের এই সোনার বাংলা।সুতরাং শহীদের বুকের তাজা রক্তে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলার সাধারণ জনগণ অতীতে যেমন অন্যায়ের নিকট মাথা নত করেনি তেমনি ভবিষ্যতেও করবেনা। বিএনপির অবতার হিসেবে আবির্ভূত পিটার হাসের উচিত বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সব ধরনের পক্ষপাতমূলক এবং একপেশে আচরণ ও কর্মকান্ড পরিত্যাগ করা। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো রাষ্ট্রদূত তথা বিদেশিদের কোনো অবৈধ হস্তক্ষেপকে এই বাংলার গণতন্ত্রকামী জনগণ মেনে নিবেনা। তাছাড়া জনসমর্থনহীন ও জনবিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপির উচিত এই ধরনের বিদেশি প্রভু নির্ভর অপরাজনীতি বন্ধ করা। বিদেশি প্রভুদের ইন্ধনে পরিচালিত আন্দোলনের নামে সব ধরনের জ্বালাও-পোড়াও নীতি বন্ধ করা। তা নাহলে বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক দেশ থেকে ভবিষ্যতে বিএনপির অস্তিত্ব বিলীন হবে। কারণ তাদের মনে রাখ উচিত বাঙালি জনগণ ছাড় দেন তবে ছেড়ে দেননা। উপযুক্ত সময়ে সব ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের উচিত জবাব দিতে বাঙালি জনগণ সবসময়ই প্রস্তত। 

লেখক: অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া
ট্রেজারার
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
সাবেক চেয়ারম্যান
ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম