
নিজস্ব প্রতিনিধি
১১ জুন, ২০২৫, 12:31 PM
‘প্রাকৃতিক নিষেধাজ্ঞার’ কবলে কক্সবাজারের জেলেরা
সাগরে মাছ শিকারে সরকারি ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে বুধবার (১১ জুন) মধ্যরাতে। তাই কক্সবাজার উপকূলে নোঙর করা ট্রলারে ফিরেছে অনেক জেলে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি হিসেবে ট্রলারে তুলছেন ইঞ্জিন, বাঁশ, ড্রাম থেকে শুরু রশি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য। তবে সরকারি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এখন প্রাকৃতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পুড়ছে জেলেরা, তাই অনেক ট্রলার সাগরে পাঠানো হচ্ছে না বলে জানিয়েছে জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতি। সাগরে মাছ শিকারে সরকারি ৫৮ নিধেষাজ্ঞা শেষ হচ্ছে বুধবার মধ্যরাতে। এর আগেই কক্সবাজার উপকূলে ফিরতে শুরু করেছেন শত শত জেলেরা। উপকূলে নোঙর করা ট্রলারে পার করছেন ব্যস্ত সময়। মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুরে বাঁকখালী নদীতে নোঙর করা সারি সারি ট্রলার। এসব ট্রলারে ওঠানো হচ্ছে ইঞ্জিন। একই সঙ্গে মেরামত করা হচ্ছে ট্রলারের খুঁটিনাটি অংশ। আবার অনেক ট্রলারে ওঠানো হয়েছে ড্রাম, তেল, বাঁশ ও রশিসহ জেলেদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য। জেলেরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে চলছে সাগরে যাবার প্রস্তুতি। এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের জেলে জাহাঙ্গীর ও রশিদ বলেন, ‘আমরা সবসময় সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে চলি। নিষেধাজ্ঞার ৫৮ দিন অলস সময় কাটিয়েছি। এ সময় কোনো আয়-রোজগার না থাকায় কষ্টে দিন কাটিয়েছি। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষে আবার সাগরে মাছ শিকারে যাব। এ জন্য ১০ দিনের চাল, ডাল, কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন খাবার ও ওষুধ সামগ্রী নিয়েছি। আশা করছি, এবার সাগরে গিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশসহ বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ শিকার করতে পারব। ৫৮ দিনের ধার-দেনা ও অভাব দূর হয়ে যাবে।’এফবি সালমা ট্রলারের মাঝি ছৈয়দুল আলম বলেন, ‘৫৮ দিন সাগরে যেতে পারেনি তাই অনেক কষ্ট ছিলাম। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে তাই ট্রলার নিয়ে সব মাঝি-মাল্লারা চলে এসেছে। এখন মালামাল ট্রলারে ওঠানো হচ্ছে। আমরা সাগরে মাছ ধরতে পারলেই খুশি।’এদিকে উপকূলে নোঙর করা ট্রলারে যেমন জেলেরা রয়েছেন, ঠিক তেমনি অনেক ট্রলার মালিক অবস্থান করছেন ঘাটে। নিষেধাজ্ঞার পরপরই শুরু হচ্ছে আষাঢ় মাস, তখন সাগর থাকে বৈরী। তাই সাগরে ট্রলার কিংবা জেলেদের মাছ শিকারে পাঠানো নিয়ে ট্রলার মালিক কিংবা অনেক জেলে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। মাঝিরঘাট এলাকার ট্রলার মালিক রফিক বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শেষ কিন্তু ঝড়-তুফানের মৌসুম শুরু। কোথায় যাব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। আবহাওয়া ভালো না এখন সাগরে জেলেসহ ট্রলার পাঠালে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আপাতত সাগরে জেলেদের পাঠাবো না চিন্তা করছি।’ এদিকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এখন প্রাকৃতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পুড়ছে জেলেরা। তাই অনেক ট্রলার সাগরে পাঠানো হচ্ছে না বলে জানিয়েছে জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতি। জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে তাই সাগরে যেতে ৩০ শতাংশ ট্রলার প্রস্তুত। বাকি ৭০ শতাংশ ট্রলার সাগরে গিয়ে মাছ ধরার প্রস্তুতি নেই। কারণ হচ্ছে ১১ জুন ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ আর একদিন পর আষাঢ় মাস শুরু। ফলে প্রাকৃতিকভাবে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যাবে। এবারের ৫৮ দিনের বন্ধটা আমরা ৯০ দিন হিসেব করছি।’ দেলোয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘জেলে কার্ডের তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। কারণ অনেক জেলে মারা গেছে, অনেক জেলে প্রবাস কিংবা পেশা পরিবর্তন করেছে। আবার অনেকেই জেলে না হয়েও রাজনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে জেলে কার্ড নিয়েছেন। তাই নতুন করে জেলে কার্ড হালনাগাদ করার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ করছি।’জেলা মৎস্য অফিসের দেয়া তথ্য মতে, কক্সবাজারে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান রয়েছে ৬ হাজার ৭৮৪টি। আর নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার। সূত্র : সময় সংবাদ