ঢাকা ২৪ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো জনপ্রিয়তার শীর্ষে ইসরায়েলি হামলায় আইআরজিসির ১০ সদস্য নিহত ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে কলারোয়ায় দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা যশোরে বাসচাপায় কলেজ শিক্ষার্থী নিহত নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে স্কাউটরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে: প্রধান উপদেষ্টা লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইরানের ৬ বিমানবন্দরে হামলা, ১৫ উড়োজাহাজ–হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত ইরানের দফায় দফায় হামলা, ইসরায়েলজুড়ে বিস্ফোরণ বরগুনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান রাষ্ট্রপতিকে স্পিকারের শপথ পড়ানোর বিধান নিয়ে রুলের শুনানি ৭ জুলাই

সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

#

নিজস্ব প্রতিনিধি

১৯ জুন, ২০২২,  10:28 AM

news image

পাহাড়ি ঢল আর অতি ভারী বৃষ্টিতে নদনদী ও হাওরের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও বিস্তৃতি ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগীয় কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে ০১৭১৬২৬০২১১ এবং ০১৭১৫৫০০৮৩৯ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দুই জেলার প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। পানিবন্দি মানুষের মধ্যে হাহাকার ও আর্তনাদ চলছে। আশ্রয়ের খোঁজে পানি-স্রোত ভেঙে ছুটছে মানুষ। সবচেয়ে বিপদে আছেন শিশু ও বয়স্করা। আটকেপড়াদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হচ্ছে। যেখানেই শুকনো ও উঁচু জায়গা পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। সিলেটের সবকটি উপজেলা ও অর্ধেক শহর, সুনামগঞ্জের উপজেলা ও পৌর শহর বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক ও সিলেট-ভোলাগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু রহমান মহাসড়ক। দুই জেলায় শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সিলেটের অন্যতম বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র কুমারগাঁও স্টেশনে পানি ঢুকে বন্ধ হয়ে যায় সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। তবে কয়েকটি জায়গাতে চালু করা হয়েছে। সুনামগঞ্জে গত দুদিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। সিলেটের নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার দিনগত রাতে সিলেটে বৃষ্টি কিছুটা কম ছিল। এতে পানি এক-দুই ইঞ্চি কমেছে সকাল ৯টা পর্যন্ত। এরপর থেকে সিলেটে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। ফলে, বন্যার পাশাপাশি নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানির নিচে রয়েছে সবগুলো রাস্তাঘাট। বন্যায় নদনদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। এদিকে সিলেটে বোরবার (১৯ জুন) থেকে আগামী সোমবার ৪৮ ঘণ্টা ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। জেলায় বন্যা দুর্গত এলাকায় পানিবন্দি লোকজনকে উদ্ধারে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী তৎপর রয়েছে। গত শুক্রবার বিকেল থেকে সেনাবাহিনীর ১০ প্লাটুন, ৬টি মেডিকেল টিম, শনিবার থেকে নৌবাহিনীর ৩৫ সদস্য দুটি টিমে ভাগ হয়ে কাজ শুরু করেছে। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। উদ্ধার কাজে নৌবাহিনী সদস্যরা নিজস্ব ক্রুজ ও বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার ব্যবহার করছেন। শনিবার বিকেলের মধ্যে ৬০ জনের আরেকটি দল আরও ক্রুজ ও হেলিকপ্টারসহ উদ্ধার কাজে যুক্ত হয়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নৌবাহিনীর ৩৫ সদস্যের একটি দল শুক্রবার রাতে সিলেট এসে পৌঁছায়। শনিবার সকাল থেকে ৩৫ সদস্যের দল কোস্টগার্ডের ১টি ক্রুজ ও বিমানবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে। সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নে একটি টিম শনিবার সকাল থেকে কাজ শুরু করে। আরেকটি টিম কোম্পানিগঞ্জে কাজ শুরু করছে। জেলা প্রশাসন সূত্র আরও জানায়, বিকেলে নৌবাহিনীর আরও ৬০ সদস্যের একটি দল সিলেট এসে পৌঁছায়। আরও দুটি ক্রুজ উদ্ধার কাজে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে একটি সিলেটে ও অন্যটি সুনামগঞ্জে উদ্ধার কাজে যুক্ত হবে। সিলেটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ শাখা জানিয়েছে, ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৭ হাজার ৯০০ বস্তা শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় আরও ৮ হাজার প্যাকেট খাবার ও ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জের ১২ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। এসব এলাকায় আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানি ঢুকে পড়ায় স্বাভাবিক সেবাদানে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক হাসপাতাল বিদ্যুৎহীন থাকায় রোগীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলায় বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় রোগীদের ওপর তলায় নেওয়া হয়েছে। আইসিইউ সেবা ও জরুরি অস্ত্রোপচার চালু রাখার জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘খাওয়ার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি ও জরুরি ওষুধ কীভাবে পৌঁছানো যায়, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমরা সমন্বয় করে কাজ করার চেষ্টা করছি।’ এছাড়াও সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগীয় কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে ০১৭১৬২৬০২১১ এবং ০১৭১৫৫০০৮৩৯ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। এ ছাড়া ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম বন্যা পরিস্থিতির জন্য খবরাখবর রাখছে। নিয়ন্ত্রণকক্ষে যোগাযোগের জন্য ০১৭৫৯১১৪৪৮৮ নম্বরে ফোন করা যাবে। এসব নম্বরে ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগ করা যাবে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এ অবস্থায় ৩০ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. বদরুল ইসলাম এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। সূত্র বাসস।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম