
নিজস্ব প্রতিনিধি
০৪ আগস্ট, ২০২৪, 2:01 PM
সংঘর্ষে রণক্ষেত্র রংপুর, নিহত ২
রংপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। রোববার (৪ আগস্ট) সকালে শহরের সুপার মার্কেটের সামনে এ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের পরিচয় জানা যায়নি। তবে তাদের বয়স ৩০-৩৫ বছরের মধ্যে হবে। জানা গেছে, সকালে আন্দোলনকারীরা শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হন। এ সময় আকস্মিকভাবে আওয়ামী লীগের ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেন। আন্দোলনকারীরাও তাদের পাল্টা ধাওয়া দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ। এতে উভয়পক্ষের ৩২ জন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। রমেকের ডেপুডি ডিরেক্টর আক্তারুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সংঘর্ষে আহত ৩২ জনকে হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতদের মরদেহ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আবু মারুফ হোসেন (অপরাধ) জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। ২০১৮ সালে সরকার চাকরিতে কোটা বাতিল করে সরকারের জারি করা পরিপত্র চলতি বছরের জুনের শেষে অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে জুলাইয়ের শুরুতে মাঠে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা প্রথমে পরিপত্র ফিরিয়ে আনতে, অর্থাৎ কোটা না রাখার দাবিতে রাজপথে নেমে কোটা সংস্কারের দাবি জানান। গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে এই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে সংঘাত হয়। এতে চট্টগ্রামে এক ছাত্রদল নেতাসহ তিন জন, ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ছাত্রলীগ কর্মী ও একজন হকার এবং রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু সাঈদ নামে এক ছাত্র নিহত হন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৭ জুলাই জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ১৮ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সেদিন ঢাকার উত্তরা ও বাড্ডায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েকজনের প্রাণহানির পর পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে থাকে। সেদিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে হামলা চালানো হয়। এরপর ১৮ জুলাই ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও উত্তরা এলাকায় পরিস্থিতি ভয়বহ রূপ নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ১৯ জুলাই দিবাগত রাতে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং কারফিউ জারি করে সরকার। প্রথম দিকে দিনে দু-তিন ঘণ্টা করে কারফিউ শিথিল করা হলেও পরে ধীরে ধীরে তা বাড়ানো হয়। ১৭ থেকে ২১ জুলাই এই পাঁচদিনের সহিংসতায় দেড়শ মানুষের মৃত্যুর তথ্য দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। আহত হন আরও কয়েকশ মানুষ।
সংঘর্ষ থামার পর পুলিশ ব্লক রেইড দিয়ে গ্রেফতার অভিযানে নামে। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে গ্রেফতার অভিযান বন্ধ, হত্যার বিচারসহ নানা দাবি জানানো হতে থাকে। আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, মৃত্যু, গ্রেফতারে বদলে গেছে আন্দোলনের ধরন ও কর্মসূচি। সবশেষ শনিবার (৩ আগস্ট) রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা করে রোববার থেকে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। এদিকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ রোববার থেকে রাজপথে অবস্থান নেয়া এবং পুরো আগস্ট জুড়ে রাজপথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।