ঢাকা ১৯ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
৫ আগস্ট সরকারি ছুটির ঘোষণা আসছে ২৫৩ জনের গুমের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন প্রবাসীরা ফেরার সময় শুল্ক ছাড়াই আনতে পারবেন যে ১৯ পণ্য বাংলাদেশকে দুই প্রকল্পে ৬৪০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘এরিক’ ইসরায়েল-ইরান সংঘাত: জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম গ্রেপ্তার বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা প্রচারে লিফলেট বিতরণ ইসলামপুরে শরীর সুস্থ রাখতে কাঁঠালের উপকারিতা গাজায় ইসরাইলি হামলায় একদিনে ৭২ ফিলিস্তিনি নিহত

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হয়রানির পরিবর্তে মিলছে স্বস্তি

#

০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪,  3:33 PM

news image

বিশেষ প্রতিবেদক: মাস কয়েক আগেও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নিয়মিত ব্যবহার করা যাত্রীদের জন্য সুখকর ছিল না মোটেও। লাগেজ কাটা বা চুরি, বোর্ডিং পাস, ইমিগ্রেশন থেকে শুরু করে সবখানেই হয়রানির শিকার ছিল নৈমিত্তিক বিষয়। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর নতুন পরিস্থিতিতে বদলে গেছে এই আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের পরিবেশ। আগের মতো যাত্রী হয়রানি ও লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটছে না। নেই লাগেজ কেটে মালালাল চুরি, ইমিগ্রেশন পুলিশের ঘুষ বাণিজ্যসহ পদে পদে হয়রানি ও নানাবিধ যন্ত্রণা। সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘদিন পর যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্স (এভসেক) ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যৌথ প্রয়াসে সার্বিক নিরাপত্তায় নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন যাত্রীসেবায় প্রশংসায় ভাসছে বিমানবন্দরের দায়িত্বরত কর্মকর্তারাও। জানা যায়, শেখ হাসিনার পতনের দিন ৫ আগস্ট জনগণের ক্ষোভের মুখে পড়ার আশঙ্কায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঝুঁকির মুখে রেখে পালিয়ে যায়। এতে চরম নিরাপত্তা সংকট তৈরি হলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অনুরোধে কাজ শুরু করে বিমান বাহিনীর ২০০ সদস্যের বিশেষ টাস্কফোর্স। পাশাপাশি এভসেক আগের মতোই তাদের দায়িত্ব পালন করে চলে।

এখন বিমানবন্দরটির এয়ার সাইড ও ল্যান্ড সাইড দু’দিকেই সামাল দিচ্ছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের প্রায় ২১ শতাংশ যাত্রী ব্যবহার করেন চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এভসেক ও বিমান বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে গত ৫ আগস্টের আগে-পরে এক ঘণ্টার জন্যও এখানে বিমান উড্ডয়ন-অবতরণ বন্ধ হয়নি। এখান থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানবন্দরের গ্রাউন্ডস হ্যান্ডলিং সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানের বিশ্বস্ত মাধ্যমের দুর্নামও কমতে শুরু করেছে। এসব ক্ষেত্রে শুন্য সহিষ্ণুতা নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বর্তমান পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আব্দুল্লাহ আলমগীর জানান, এটিকে বিশ্বমানের ও আধুনিক করে গড়ে তুলতে তিনটি পর্যায়ে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলছে। তিনি বলেন, ‘শাহ আমানতের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রায় ৪৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের লাইটিংয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। টার্মিনাল সুবিধা বাড়াতে বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন করা হচ্ছে, চলমান রয়েছে টার্নিং প্যাড সম্প্রসারণ কাজ।' 

টাস্কফোর্সের যাত্রী হয়রানি রোধ, সালাম দিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধ: 

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে যাত্রী চাপ বাড়ছে ক্রমশ। বর্তমানে গড়ে এখানে প্রতিদিন ১৮টি আন্তর্জাতিক এবং ৪০টি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ওঠানামা করে। এই বিমান বন্দরের সম্প্রসারণে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জানা যায়, শাহ আমানত বিমানবন্দর বছরে ব্যবহার করেন প্রায় ১৭ লাখের মতো যাত্রী। ২০৩০ সালে এটি ৩০ লাখ, ২০৪০ সালে ৫০ লাখ এবং ২০৭০ সালে দাঁড়াবে ১ কোটির বেশিতে। এই বিমানবন্দর ২০২৩ সালেই ১৬ লাখ ১০ হাজার ৪২৮ জন যাত্রী বহন করে রেকর্ড গড়ে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী ৬ লাখ ৪২ হাজার ৪২৮ জন এবং আন্তর্জাতিক রুটের ৯ লাখ ৬৮ হাজার ৪ জন। নানাদিক বিবেচনায় এই বিমানবন্দরের গুরুত্ব বাড়ছে। জানা যায়, এই বিমান বন্দরে যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে মনোনিবেশ করেছে বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এখন মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই মিলছে লাগেজ। বিমানবন্দরে বছরের পর বছর অচল ফ্রি টেলিফোন বুথও এখন হয়েছে সচল। বিমানবাহিনীর টাস্কফোর্সের সহযোগিতায় প্রান্তিক ভবন ও কার পার্কিং এ যাত্রী হয়রানি রোধ করা অনেকটাই সম্ভব হয়েছে। কোন রকম টানা পার্টির তৎপরতা নেই। সালাম দিয়ে ট্রলিম্যানদের ও আনসার সদস্যদের চাঁদাবাজিও বন্ধ হয়েছে। উন্নত বিশ্বের বিমানবন্দরগুলোর মতোই এখানে যাত্রীদের সহায়তার জন্য বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে ‘মিট অ্যান্ড গ্রিট’ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। শাহ আমানতে সেবায় সন্তুষ্ট প্রবাসীরাও। তারা বলছেন, আগে বিমানবন্দরে নানাভাবে হেনস্তার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এখন হয়রানিমুক্ত সেবা পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে তাদের কণ্ঠে।

বিমানবন্দরের ভেতরে-বাইরে  নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার:

গত ৫ আগস্ট থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর আন্তরিক সহযোগিতায় এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্স (এভসেক) বিমানবন্দরের প্রবেশ পথ, টার্মিনাল ড্রাইবওয়েতে, এপ্রোন এরিয়াতে প্রবেশের গেইট (৪ নম্বর গেইট), এপ্রোন এলাকা, রানওয়ে ৫ ও ২৩, যাত্রী কারপার্কিং এই পয়েন্টগুলোতে তৎপর রয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ২০০ সদস্যকে অস্থায়ী ভিত্তিতে মোতায়েন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিমানবন্দরের ভেতরে-বাইরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিমান বাহিনীর বিশেষ টাস্কফোর্স ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা শাখার সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ কমিটির নেতৃত্বে প্রতি ২ ঘণ্টা পরপর বিমানবন্দরের প্রতিটি তল্লাশি চৌকি ও জনমানবশূন্য পয়েন্টগুলোতে নিরাপত্তা টহল নিশ্চিত করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সহযোগিতায় বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর এপ্রোন এরিয়ায় প্রবেশের ৪ নম্বর গেইট, রাডার স্টেশন, ভিওআর, ট্রান্সমিটিং স্টেশন, পাওয়ার হাউস, জিপি-লোকারাইজার স্টেশন- এসব পয়েন্টে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে নিরবচ্ছিন্ন যাত্রীসেবা প্রদানে বিমানবাহিনীর সদস্যরা প্রান্তিক ভবনের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসমূহে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। বিশেষ করে গত সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে আনসার সদস্যরা কর্মবিরতি শুরু করলে বিমান বাহিনী টাস্কফোর্স দক্ষতার সঙ্গে বিমানবন্দরটিকে সুরক্ষিত করে।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও এভসেক’র সম্মিলিত প্রয়াসে সামগ্রিক কার্যক্রমে পরিবর্তনের সূত্রপাত করেছে। ইতোমধ্যেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিমানবন্দরটি। জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, 'যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। আপনি নিজেও বিমানবন্দর ব্যবহার করার সময় বুঝতে পারবেন, আগের চেয়ে এখন যাত্রীসেবার মানের পার্থক্য কতটুকু। যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে আমরা দিন-রাত কাজ করেছি, এখনও করে যাচ্ছি। এটা এখন শুধু আমাদের কথা নয়, বিমানবন্দর ব্যবহার করা দেশি-বিদেশি যাত্রীরাই বলছেন, যাত্রীসেবার মান অনেক বেড়েছে। এর মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে।'

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম