ক্যপশন : চলতি পথের সেই আপদ কিংবা বিপদ এখনো ঝুলছে রাজধানীতে। রিকশায় যেতে, হাঁটতে গিয়ে সারাক্ষণ সতর্ক থাকতে হয়। প্রায় সময় গলায় আটকায় ঝুলে থাকা তার, ঝুঁকিপূর্ণ ছেঁড়া তার চোখে লাগে। ঝুলন্ত তার ছিঁড়ে মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন মোড় এলাকা থেকে ছবিটি তুলেছেন সিনথিয়া আক্তার।

রাজধানীবাসীর চলতি পথের সেই আপদ কিংবা বিপদ এখনো ঝুলছে। রিকশায় যেতে, হাঁটতে গিয়ে সারাক্ষণ সতর্ক থাকতে হয়। প্রায় সময় গলায় আটকায় ঝুলে থাকা তার, ঝুঁকিপূর্ণ ছেঁড়া তার চোখে লাগে। ঝুলন্ত তার ছিঁড়ে মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ ছাড়া নগরের সৌন্দর্যহানি তো আছেই ঝুলন্ত তার ও তারের জটলায়। রাজধানীতে সরেজমিনে অনেকের সঙ্গে আলাপে তাদের এমন অভিজ্ঞতার কথা জানা গেছে। তাদের আরও কথা, পথচারীদের জন্য ঝুলন্ত তার এখন বিপদের ভয়ংকর প্রতিমূর্তি। ঝুলন্ত তার অপসারণে বার কয়েক উদ্যোগ নিয়েছিল দুই সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পিতভাবে ঝুলন্ত তার মাটির নিচে স্থানান্তরের কথা ছিল। কিছু কিছু এলাকায় অল্পবিস্তর কাজ হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। সিটি করপোরেশন বলছে,

চলতি বছরের মধ্যে রাজধানীতে আর কোনো ধরনের ঝুলন্ত তার থাকবে না। যেসব প্রতিষ্ঠানের তার ঝুলে আছে তাদের সময় দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের সময় দেওয়া হয়েছিল। অনেকেই ঝুলন্ত তার নিয়ে কাজ করেছে, অনেকে করেনি। ঝুলন্ত তার সরিয়ে নিতে ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ও ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বারবার বৈঠক করেছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ। রাজধানীতে তারের জঞ্জাল কমার বদলে দিন দিন যেন বাড়ছেই। অলি-গলি কিংবা রাজপথে বিদ্যুতের খুঁটিতে ঝুলে আছে নানা প্রতিষ্ঠানের তার। বিদ্যুতের লাইনের পাশাপাশি স্যাটেলাইট টিভির ক্যাবল, ইন্টারনেট ও টেলিফোনের তার যত্রতত্র জড়াজড়ি করে ঝুলছে। কোথাও কোথাও তারের জটলা কিংবা ছেড়া তার নেমে এসেছে সড়ক ও ফুটপাতের ওপর। সরেজমিনে, রামপুরা, বাড্ডা, বনশ্রী, মহানগর প্রজেক্ট, মালিবাগ, মগবাজার, কাকরাইল, নয়া পল্টন, পুরান পল্টন, গুলিস্তান, লালবাগ, নীলক্ষেত, ইস্কাটন গার্ডেন, শাহবাগসহ রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতে ঝুলন্ত তারের সমস্যা। বিদ্যুতের খুঁটিতে এসব তারের জটলা বড় ধরনের অগ্নিকা-ের কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন নগরবাসী। মালিবাগের স্থানীয় বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, ঝুলন্ত তারের কারণে খুব অস্বস্তি নিয়ে পথ চলি। মাটির নিচ দিয়ে এসব তার নিয়ে গেলে আমরা নিরাপদে চলাচল করতে পারি। শুনেছি কিছু এলাকায় বিদ্যুতের তার মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সব এলাকায় এই ব্যবস্থা হলে বিপদ কমে এবং সড়কের পরিবেশও ভালো লাগত। রামপুরার মূল সড়কের পুটপাত দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন চাকরিজীবী মো. মুক্তার হোসেন। তিনি জানান, যে এলাকায় ছেঁড়া ঝুলন্ত তার আছে, সেই রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করতে ভয় লাগে। কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে। মৌচাকের বাসিন্দা সৌরভ খন্দকারের মতে, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে ছেড়া তারের সমস্যা ঝুলে আছে। তিনি বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটি রাজধানীর পথেঘাটে সর্বত্র তারের এমন আগ্রাসী জটলা আমাদের হতাশ করে। শিক্ষার্থী জুনায়েদ আহমদও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ঝুলন্ত তার ঝুলেই রইল। বছর বছর শুনে আসছি ঝুলন্ত তার খুব শিগগির সরানো হবে। ঝুলন্ত তার সব মাটির নিচে দিয়ে নিবে। কাজ শুরু হওয়ার কথাও শোনা যায়, কিন্তু এর নমুনা তো দেখি না। কাকরাইল এলাকার বাসিন্দা পলাশ চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রায় সময় শুনি ঝুলন্ত তার অপসারণের অভিযান শুরু করবে। কিন্তু বিদুৎ, ইন্টারনেট, কেবল টিভির তার ঝুলেই রইল। ঝুলন্ত তার দিন দিন রাজধানীবাসীর জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। ডিপিডিসি প্রকল্প পরিচালক শাহেদ মাহবুব ভুঞা বলেন, আমরা উন্নয়ন আর্থিং স্থাপন করছি। এতে ঝুঁকি নেই বললেই চলে। সব কেবল আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যাবে। জনগণের কোনো ধরনের ঝুঁকির কোনো আশঙ্কা থাকবে না। এর সঙ্গে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা চলে আসবে। প্রথমবারের মতো ধানমন্ডিকে স্মার্ট গ্রেড-এর আওতায় নেওয়া হচ্ছে বলে জানান ডিপিডিসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান। তিনি বলেন, দএকটা লাইন যখন বন্ধ হয়ে যাবে ওপর লাইন থেকে বিদ্যুৎ চলে আসবে। এ বছরেই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আমরা এটাকে মন্ত্রণালয়ের কাছে প্লেনিং করতে পাঠিয়েছি। আশা করি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে। ২০২২ এর মধ্যে রাজধানীতে ওপরে কোনো ধরনের ঝুলন্ত তার থাকবে না- এমনই তাদের পরিকল্পনা বলে জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) ফরিদ আহাম্মদ। তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের তার ঝুলে আছে, তাদের সাথে আমরা একাধিকবার মিটিং করে সময় দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের সময় দেওয়া হয়েছিল। অনেকে ঝুলন্ত তার নিয়ে কাজ করেছে, অনেকে করেনি। তবে ঝুলন্ত তার সরিয়ে নেওয়ার কথা থাকলেও কার্যক্রম হয়নি। যারা এখন পর্যন্ত ঝুলন্ত তারের কার্যক্রম সম্পন্ন করেনি, আমরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট দিয়ে তা সরিয়ে নেব। বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিদ্যুতের ঝুলন্ত তার মাটির নিচে নেওয়ার ব্যবস্থা করছি। তবে একটু সময় লাগবে পুরো বাস্তবায়ন করতে। ধানমন্ডিতে এ মাসেই কাজ শুরু হবে মাটির নিচে দিয়ে তার নেওয়ার। আর আমরা চেষ্টা করছি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও যেন মাটির নিচে দিয়ে তাদের তার নিয়ে যায়।