
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, 1:00 PM
ভোলায় বরই চাষে বাজিমাত
বাণিজ্যিকভাবে আগে কখনো বরই চাষ হয়নি। তবে এ মৌসুমে বরই চাষাবাদ করে নিজের ভাগ্য বদল করেছেন বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের কৃষক মাইনুদ্দিন হাওলাদার (মফিজ)। তার সফলতা দেখে জেলায় অনেকেই বরই চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। ভোলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার আর বোরহান উদ্দিন সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে কাচিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে কৃষক মফিজ চোখ জুড়ানো বরই বাগান করে সবাইকে তাক লাগিয়েছেন। ২০১৯ সালে শুরু করা বাগানটি ফসলে ভরে গেছে। গাছগুলো চার থেকে সাড়ে চার ফুট লম্বা গাছগুলো রঙ-বেরঙের বরইয়ের ভারে নুইয়ে পড়ছে। প্রায় ৫ একর জমিতে বলসুন্দরী, আপেল কুল, কাশ্মিরি, ইন্ডিয়ান সুন্দরী, বাউফুল,
আগাম টক জাতের বরই। গাছ ভর্তি আপেলের মতো লাল বরই দেখলে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে। বাগান দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে লোক আসছেন এবং বরই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। মফিজ বাগানে বলসুন্দরী জাতের বরই বেশি চাষ করেছেন। এ ছাড়া, কাশ্মিরি বরইও পরীক্ষামূলক চাষ করেছেন। চারা সংগ্রহ করেছেন নাটোর থেকে। চারা লাগানোর দুই বছরের মধ্যেই গাছে ফুল এসেছে। এখন ফল সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন। এসব বরই দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু। বাজারে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এ পর্যন্ত ৩ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। ৩০ ফাল্গুন পর্যন্ত ২৬-২৭ লাখ টাকা বিক্রি করা যাবে বলে মফিজ জানান। স্থানীয় বাজারে প্রতি মণ বরই পাইকারী বিক্রি করছেন ২৪০০ টাকা করে।
জানা যায়, পড়াশোনায় মফিজ এসএসসির গ-ি পেরোতে পারেননি। ২ বছরের এক কন্যা সন্তানের বাবা। তিনি বলেন, আমি নতুন কিছু করতে পছন্দ করি। সে সঙ্গে চ্যালেঞ্জও। কৃষি কাজের প্রতি একটা মায়া জন্মে গেছে। বরই বাগান ছাড়াও থাই পেয়ারা, মাল্টা বাগান, সবজি বাগানে আমার কয়েক লাখ টাকার বিনিয়োগ। দীর্ঘ দিনের সঞ্চয়, পৌরসভায় জমি বিক্রির টাকা দিয়ে কৃষির দিকে ঝুঁকি। এ পরিমাণ টাকা দিয়ে আমি পছন্দসই ব্যবসা করতে পারতাম। কিন্তু ওই দিকে আমার মন টানে না। এ নিয়ে কিছুটা পারিবারিক মনোমালিন্যও হয়েছে। এ কাজে আমি আনন্দ পাই। মফিজ আরও বলেন, বছর দুই আগে আমি উত্তরবঙ্গের নাটোর জেলায় চলে যাই। সবকিছু জেনে-শুনে নাটোর থেকে বলসুন্দরী জাতের বরই চারা নিয়ে আসি। এর বৈশিষ্ট হলো দেখতে আপেলের মতো। যথেষ্ট পুষ্টি গুণসম্পন্ন। এ ছাড়া, এ জাতের বরইয়ের বিচি অনেক ছোট। বাগানের জমি লিজে নেওয়া। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১০-১১ লাখ টাকা। ক্ষেতে রাসায়নিক ও জৈব সার দুটোই প্রয়োগ করা হয়েছে। এবছর পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়েছে। তবে পাখি, বাদুর মিলে লাখ খানেক টাকার বরই খেয়ে ফেলে। এবছর প্রথম সিজন হওয়ায় খরচ একটু বেশি হয়েছে। আগামী বছর খরচ কম হবে। কারণ বরই চারা কিনতে হবে না। সেচ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অবকাঠামো খরচ আর হচ্ছে না। মফিজের মতে, কৃষিতে যথাযথ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে লোকসান হওয়ার কথা নয়। তার স্বপ্ন কৃষির পাশাপাশি গরু, ছাগল আর ভেড়ার একটি আধুনিক ফার্ম করা। তবে এর জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে বাস্তবায়ন দুঃসাধ্য। এ ব্যাপারে বোরহানউদ্দিন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক বলেন, কৃষি অফিস মফিজকে সব রকম পরামর্শ দিয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। তাকে জৈব ও রাসায়নিক সার সরবরাহের পাশাপাশি সেচের জন্য বরই ক্ষেতে ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেকার যুবকদের জন্য মফিজের কাজ একটি অনন্য উদাহরণ।