
নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ আগস্ট, ২০২২, 4:23 PM

ফিড নয়, ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই বেড়েছে ডিমের দাম
দেশের পোলট্রি শিল্প কীভাবে মাত্র ১৫ দিনে ৫১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করেছে। তা বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের কাছে জানতে চেয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। সোমবার (২২ আগস্ট) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর বাজার ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায় এ কথা জানানো হয়। এফবিসিসিআই-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ সম্মেলন করে বললেন ১৫ দিনে ৫০০ কোটি টাকার বেশি অতিরিক্ত মুনাফা করেছে পোল্ট্রি কোম্পানিগুলো। এটা কি মনগড়া মন্তব্য? মন যা চাইলো তাই বলে দিলো তা তো হবে না। কোনো তথ্য দিলে তা বাস্তবসম্মত হতে হবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, জন্মাষ্টমীর দিন থেকে নিয়ে টানা তিনদিন সারা দেশে অভিযান চালিয়েছি। এর পেছনে কারা আছে আমরা তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এফবিসিসিআই একটি বহুমুখী সৎ ব্যবসায়ীদের সংগঠন। কিছু অসাধু লোকের জন্য যেভাবে সমাজে ব্যবসায়ীদের অসৎ তকমা দেওয়া হচ্ছে তা সত্যিই দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, ভোক্তার অভিযানে কয়েকদিনেই ডিমের হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় নেমে এসেছে। তাহলে স্পষ্ট বোঝা যায় ডিম নিয়ে কারসাজি করা হয়েছে। আমরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে আমরা মামলার দিকে যাবো বলে জানান সফিকুজ্জামান। সফিকুজ্জামান জানান, দেশে ভোক্তা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রিত তিনটি বৈধ অ্যাসোসিয়েশন আছে। বাংলাদেশ এগ প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ অর্গানিক প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন। এগুলো বৈধ অ্যাসোসিয়েশন। এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বিশ্বে জালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছেন তা মানলাম। কিন্তু আপনারা এফবিসিসিআইয়ের কাছে আসেন না কেন। এসে আলোচনা করুন। আপনারা লস করলে আমাদের বলুন। কীভাবে সেটা থেকে উত্তরণ করা যায় আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করব। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে এই মন্দা সময়েও ভালো করছে। ব্যবসা লাভ-লসের মধ্যেই চালিয়ে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ব বাজারে যখন দাম কমতে শুরু করেছে আপনারা সেই সময় ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমাদের প্রতিবেশী দেশেও এখন ডিমের দাম কম। ফিডের দামও কম। একটা যুক্তি থাকতে পারতো আপনারা সেটাও ফলো করেননি। এখন ভোক্তা অধিকার অভিযান শুরু করেছে তখন আপনারা ডিমের দাম ডজনে ১৫ টাকা ২০ টাকা কমিয়েছেন। তার মানে হলো ফিডের দামে নয় আপনাদের কারসাজিতে বেড়েছে ডিমের দাম। ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিভাজনের কথা উল্লেখ করে জসিম উদ্দিন বলেন, আজ সাংবাদিক ভাইয়েরা আমাদের নানা প্রশ্ন করছে। একমাত্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঐক্য না থাকার কারণে এই অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছি। আর কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য এমন অবস্থা হচ্ছে। আমাদের দিকে আঙুল তোলার সুযোগ পাচ্ছে সবাই। বাংলাদেশ এগ প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে বলা হয়, একটি পক্ষ দাদন দেওয়ার মাধ্যমে গুদামজাতকারীদের হাত করে নিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা কোটি কোটি টাকা মুনাফা করে নিচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এর আগে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন দাবি করে, ১৫ দিনে ৫১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করেছে দেশের পোলট্রি কোম্পানিগুলো। অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা জানান, দেশে দৈনিক ডিমের চাহিদা ৪ কোটি ৫০ লাখ। এর মধ্যে কোম্পানিগুলো উৎপাদন করে ২ কোটি ৫০ লাখ। আর খামারিরা উৎপাদন করেন ১ কোটি ৩০ লাখ। কর্মকর্তাদের দাবি, কোম্পানিগুলো প্রতিটি ডিমে অতিরিক্ত ৩ টাকা বেশি মূল্য নির্ধারণ করে। এতে গত ১৫ দিনে তারা শুধু ডিম থেকে ১১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করেছে। পোলট্রি খামারিরা জানান, প্রতিদিন ১৯ কোটি ৫০ লাখ কেজি মুরগির মাংসের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এবং পরবর্তী সময়ে তা বাজারে ছেড়ে প্রতি কেজিতে বাড়তি নেওয়া হয়েছে ১৫ টাকা। এর ফলে কোম্পানিগুলো গত ১৫ দিনে ১৭২ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে।