
নিজস্ব প্রতিনিধি
০৫ ডিসেম্বর, ২০২১, 7:59 PM

তেঁতুলিয়ায় পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় দুর্বিষহ দিন পার করছে স্থানীয়রা
পঞ্চগড় জেলা যে সকল কারনে বিখ্যাত তার মধ্যে একটি হল পাথর । এ জেলার মাটির নিচে প্রচুর পরিমাণে পাথর পাওয়া যায় । বিশেষ করে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায়। সনাতন পদ্ধতিতে শ্রমিকরা মাটি কেটে পাথর উত্তোলন করে । শুধু তেঁতুলিয়া উপজেলা নয়, সমগ্র পঞ্চগড় জেলা,ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানের কয়েক লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে এর সাথে সম্পৃক্ত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল । মাটির নিচ থেকে পাওয়া পাথর বহু মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন এনে দিয়েছিল ।
কিন্তু সময়ের ব্যবধানে ও প্রযুক্তির উন্নয়নকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি একত্রিত হয়ে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন শুরু করে ।উপজেলার ভজনপুর পাথর বালি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ মজিবর রহমান এর নেতৃত্বে কিছু অসাধু ব্যক্তি একত্রিত হয়ে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন শুরু করে । তারা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরকে ম্যানেজ করত বিনিময়ে যারা রাতের আধারে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করতো রাত চুক্তি এক ট্রলি পাথর অথবা ৭০০০/৮০০০ টাকা নিত । এভাবে উপজেলায় প্রতি রাতে লক্ষ লক্ষ টাকা মজিবর বাহিনী উত্তোলন করত । এমতাবস্থায় বিষয়টি বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে আসলে পরিবেশ ধ্বংস বন্ধ করতে আন্দোলন ও মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা শুরু হয় । ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবি জানান মাটিকাটা ও পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকরা। পরবর্তীতে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপের কারনে ড্রেজার মেশিন এর সাথে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সনাতন পদ্ধতিতেও পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায় । পরবর্তীতে মাটি কাটা ও পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে সড়ক অবরোধ করতে নামানো হয় । পুলিশ শ্রমিকদের রাস্তা হতে সরাতে গেলে পুলিশ ও শ্রমিক সংঘর্ষে জরিয়ে পরে । সংঘর্ষে শ্রমিকদের সাথে অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয় । ঘটনায় একজন সাধারণ মানুষ যে কিনা বাড়িতে মেহমান আসার কথা শুনে বাজারে মাংস কিনতে গিয়েছিল সে পুলিশের রাবার গুলিতে নিহত হন । সাধারণ মানুষ আহত হওয়ার পরেও আতঙ্কিত অনেকেই চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন নি। পরবর্তীতে স্থানীয়রা সীমিত পরিসরে মাটি কেটে পাথর উত্তোলনের চেষ্টা করলেও পুলিশের বাধার মুখে তা সম্ভব হয় নি । হটাৎ করে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঋনগ্রস্থ হয়ে পড়ে বহু মানুষ । বিভিন্ন এনজিও থেকে ব্যবসার জন্য নেওয়া লক্ষ লক্ষ টাকার কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় এনজিও গুলো অনেক ঋন গ্রোহীতার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন । আবার অনেকেই যারা চুক্তিতে অন্যের জমি থেকে পাথর উত্তোলন করবে এই মর্মে জমি মালিকদের টাকা দিয়েছে তারা পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় জামি মালিকদের কাছ থেকে চুক্তির টাকা ফেরত দিতে চাপ সৃষ্টি করছেন । অনেক ব্যবসায়ী সরকার দলীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় থানায় অভিযোগ দিয়ে জমি মালিকদের বাড়িতে পুলিশ পাঠাচ্ছেন । অনেকেই পাওনা টাকা ফেরত পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে । চথুর্মুখি চাপে দিশাহারা ব্যবসায়ী সহ জমির মালিকেরা। পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় জেলায় অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলেছে, সেই সথে মাদক, গরু চোরাচালান তেঁতুলিয়া উপজেলাতেই বেড়েছে কয়েকগুণ। সীমান্তে চোরাচালান বিশেষ করে তেঁতুলিয়া উপজেলার সীমান্তে বিপুল সংখ্যক গরু চোরাচালান দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে । এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশের ইন্সপেক্টর (তদন্ত) বলেন , যাঁরা বৈধ কাগজপত্রের মাধ্যমে অন্যের জমি থেকে পাথর উত্তোলনের জন্য লিখিত চুক্তিতে জমির মালিককে টাকা দিয়েছে । এবং চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাদের পাওনা টাকা ফেরত না পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা জমির মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন । অভিযোগের সত্যতার উপর ভিত্তি করে অভিযোগ গ্রহণ করা হচ্ছে । এদিকে জমির মালিকরা দাবি করেন চুক্তির পর তারা পাথর উত্তোলনের সময় পেলেও তা করে নি । বর্তমানে আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক । ঠিক মত সংসারের খরচ করতে পারি না । তাহলে টাকা দিব কিভাবে । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জমি মালিক বলেন, একদিকে এনজিও থেকে মামলা । অপরদিকে যারা পাথর উত্তোলনের জন্য জমি বায়নামা(চুক্তি) করেছে তারা পাথর উত্তোলন করতে না পেরে চুক্তির টাকা ফেরতের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে । বাড়িতে পুলিশ পাঠাচ্ছে । এভাবে চলতে থাকলে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন পথ আমার জন্য খোলা নেই ।