ঢাকা ২৪ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো জনপ্রিয়তার শীর্ষে ইসরায়েলি হামলায় আইআরজিসির ১০ সদস্য নিহত ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে কলারোয়ায় দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা যশোরে বাসচাপায় কলেজ শিক্ষার্থী নিহত নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে স্কাউটরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে: প্রধান উপদেষ্টা লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইরানের ৬ বিমানবন্দরে হামলা, ১৫ উড়োজাহাজ–হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত ইরানের দফায় দফায় হামলা, ইসরায়েলজুড়ে বিস্ফোরণ বরগুনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান রাষ্ট্রপতিকে স্পিকারের শপথ পড়ানোর বিধান নিয়ে রুলের শুনানি ৭ জুলাই

টানা বর্ষণে হাটু পানিতে ভাসছে চট্টগ্রাম নগরী

#

নিজস্ব প্রতিনিধি

১৯ জুন, ২০২২,  2:58 PM

news image

চট্টগ্রামে টানা বর্ষণে মহানগরীর বেশ কিছু এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। একদিকে টানা বৃষ্টি, অন্যদিকে জলাবদ্ধতার কারণে বিপাকে পড়েছেন নগরবাসী। শুক্র ও শনিবারের টানা বর্ষণে মহানগরীর কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া ডিসি রোড, বহদ্দারহাট, কাপাসগোলা, শুলকবহর, মুরাদপুর, ষোলশহর ২ নম্বর গেইট, আগ্রাবাদ সিডিএ, হালিশহর, মোগলটুলি, তালতলা, চাঁন্দগাও, খতিবের হাট, ফিরিঙ্গিবাজার সহ নগরীর বিভিন্ন নিচু এলাকায় সড়কে পানি জমেছে। গত দুদিনের হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের কারণে এসব সড়কে যানবাহনও কম ছিল। বৃষ্টির কারণে সাধারণ মানুষ ঘর ছেড়ে বের হননি। তবে কর্মস্থলমুখী লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বিশেষ করে অনেক সড়কে সিএনজি অটোরিকশার স্বল্পতা ছিল। শনিবার সকালে জলাবদ্ধতার কারণে মুরাদপুর এলাকার লোকজনকে পানির মধ্য দিয়ে হেঁটেও কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে।

একইভাবে গত দুদিন আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালও পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে হাসপাতালের নিচতলায় হাঁটু সমান পানি জমায় রোগী ও তাদের স্বজনদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই জলাবদ্ধতার এমন দুর্ভোগের জন্য অপরিকল্পিতভাবে খাল ভরাট করে রাখাকে দায়ী করছেন নগরবাসী। বিশেষ করে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ৫ বছর ধরে বাস্তবায়নাধীন ১০ হাজার কোটি টাকার চারটি প্রকল্পই তাদের বেশি করে ভোগাচ্ছে বলে অভিমত অনেকের। নগরবাসীরা বলছেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), সিটি কর্পোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প ছাড়াও বিভিন্ন খালে বাঁধ দিয়ে রাখার কারণে ভবিষ্যতে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশংকা করছেন অনেকে। বর্তমানে সামান্য বৃষ্টিতে জলজটে শহরের সড়কে নামা লোকজনকে যেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়, তেমনই নিচু এলাকার কিছু বাসা বাড়িতে পানি ঢোকায় নগরবাসীকে পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভেোগ। গত ৫ বছর ধরে সিডিএ ও পাউবো কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে ৪০টি স্লুইসগেট নির্মাণ শুরু করলেও তার একটিও পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের কোনো সুফলই পাচ্ছে না নগরবাসী। এ নিয়ে গত মে মাসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়রও। জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান নির্মাণ প্রকল্পের জন্য খালের মুখে যেসব বাঁধ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো খুলে দেওয়ারও দাবি জানান তিনি। এদিকে ফ্লাইওভারে পানি নিষ্কাশনের যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তা অপ্রতুল এবং পানি নিষ্কাশনের পাইপের মুখগুলোতে বালি জমে পানি আটকে যাচ্ছে। এর ফলে ফ্লাইওভারেও জলজট তৈরি হচ্ছে। আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে পৌঁছে সিএনজি অটোরিকশা থেকে নেমেই জলাবদ্ধতার জন্য বেকায়দায় পড়তে হয় রুগী ও রুগীর স্বজনদের। পানি মাড়িয়েই হাসপাতালের অভ্যন্তরে যেতে হচ্ছে রুগীকে। গত ক'বছর ধরে শুধু জলাবদ্ধতা নিরসন করার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে বলে শুনছি। কিন্তু জলাবদ্ধতা কমছে না। এই জলাবদ্ধতা নিয়ে কখনো সিটি কর্পোরেশন সিডিএকে দোষারোপ করে, কখনো সিডিএ সিটি কর্পোরেশনকে দোষারোপ করে এরকম মন্তব্য করেছেন ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ। চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ৯ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের আগস্টে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএর নেওয়া ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের অনুমোদন পাওয়ার পর কাজ শুরু করে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। একই বছরের ২৫ এপ্রিল ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক কাম বাঁধ নির্মাণ’ প্রকল্পের অনুমোদন পায়। পরের বছর থেকে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু করে সংস্থাটি। এছাড়াও নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৯ সালে এক হাজার ৬২০ কোটি টাকা ব্যয়ে পাউবো আরেকটি প্রকল্পের অনুমোদন পায়। এ প্রকল্পে ২৩টি খালের মুখে রেগুলেটর স্থাপনের পাশাপাশি কর্ণফুলীর তীরে ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যাপ্রতিরোধক দেয়াল নির্মাণ করা হবে। সেটির কাজও চলমান রেখেছে পাউবো। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) বিভিন্ন সময় খাল-নালা পরিষ্কারে নিজস্বভাবে প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। সবশেষে সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে এই জলাবদ্ধতার আগ্রাসন থেকে মুক্তি চায় নগরীর ভুক্তভোগী নিরীহ বাসিন্দারা।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম