
NL24 News
১৬ এপ্রিল, ২০২২, 11:26 AM
কালকিনিতে হত্যার হুমকি দেওয়ার একদিন পর গৃহবধুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
কালকিনি (মাদারীপুর) প্রতিনিধি: প্রেমকরে বিয়ে করাই ছিল অপরাধ। আর এই অপরাধে শশুড় শাশুড়ী সহ প্রেমিক স্বামীর নির্যাতন সইতে হয়েছে দিনের পর মাস আর মাসের পরে বছর। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি গৃহবধুর। শেষে লাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে পিত্রালয়ে। এমন এক নির্মম পরিনতির শিকার হয়েছে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ি এলাকার চর কানুর গাও গ্রামের কুদ্দুস শরীফের মেয়ে এক সন্তানের জননী সুমি বেগম (২০)’র। তবে শশুড় শাশুড়ির হাত থেকে বাঁচতে গোপনে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করলে সেখানেও হানা দেয় শশুড় বাড়ির লোকজন। আর প্রকাশ্যে মারপিট করা শুরু করলে নিজের প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে গিয়ে প্রতিবেশীর ঘরে পালিয়ে জীবন রক্ষা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। শশুড় শাশুড়ীর দেয়া হত্যার হুমকীর একদিন পরেই ভাড়া বাসায় ঘরের আড়ার সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় গৃহবধু সুমির মরদেহ উদ্ধার করে কালকিনি থানা পুলিশ।
আর গৃহবধুর মৃত্যুর কারন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা রহস্য। সরেজমিনে গিয়ে জানাজায়, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ি এলাকার চর কানুর গাও গ্রামের কুদ্দুস শরীফের মেয়ে সুমি বেগমের সাথে পারিবারিক ভাবে একই গ্রামের লাবু কাজীর সাথে বিয়ে হলে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। সেখানে ন্বামী সন্তান নিয়ে এক প্রকার সুখেই বসবাস করছিলেন গৃহবধু সুমি। কিন্তু তার ওপরে লোলুপ দৃষ্টি পরে প্রতিবেশী আসলাম সিকদারের ছেলে লম্পট মোস্তাকিন সিকদারের। নানা ভাবে প্রলোভন ও ফুসলিয়ে সে সুমিকে ভাগিয়ে বিয়ে করতেও সক্ষম হয়। কিন্তু এ বিয়ে মানতে নারাজ আসলাম সিকদারের পিতা মাতা। তারা গৃহবধু সুমির ওপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করলে সুমি নিজেকে বাঁচাতে গোপনে উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারের পাশে একটি টিনসেট ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। কিন্তু খবরপেয়ে গত ৮এপ্রিল সকালে শুশুড় আসলাম সিকদার ও শাশুড়ী মিলে গৃহবধূর ওপর সেখানে গিয়েও হামলা চালায়। আর তাদের থেকে বাঁচতে গৃহবধু সুমি বেগম নিজের প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে গিয়ে প্রতিবেশী ডালিয়া বেগমের ঘরে গিয়ে পালিয়ে রক্ষা মেলে। কিন্তু তক্ষন অন্যের ঘরে গিয়ে মারতে না পারলেও সুমি বেগমকে হত্যা করা হবে বলে প্রকাশ্যে হুমকী দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এঘটনার একদিন পরেই ৯এপ্রিল সকালে গৃহবধু সুমির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অপরদিকে লাশ উদ্ধারের আগেই ভোর রাতে লম্পট স্বামী মোস্তাকিন সিকদার দিক বেদিক হয়ে পালাতে গেলে তাকে ধরার চেষ্টা করে বাজারের পাহারাদার রতন হাওলাদার। যদিও সে পালাতে সক্ষম হলেও তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠালেও এঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবী করেছে নিহতের পরিবার ও গ্রামবাসী। নিহতের পিতা কুদ্দুস শরীফ, মাতা মঙ্গলি বেগম, ভাই সোহরাব শরীফ, জাকির শরীফ নিজাম শরীফ অভিযোগ করে অশ্রুসজল চোখে বলেন ‘ সুমিকে হত্যা হুমকী দেয়ার পরেই তার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে। আর তার স্বামী আসলাম সিকদারই বা কেন চুপি সারে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। এঘটনার পর আমাদেরকে চুপ থাকতে কেনইবা বিভিন্ন ভাবে হুমকী দেয়া হচ্ছে। তাই এই মৃত্যু নিয়ে অনেক রহস্য রয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার দাবী করছি। এব্যাপারে কালকিনি থানার ওসি তদন্ত মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন ‘ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। আর ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী মামলা নেয়া সহ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’