ঢাকা ১৮ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
সোনারগাঁয়ে বেরিবাঁধ থেকে যুবকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ শপথ ভেঙেছেন: ইশরাক সাভারে অসহায় বিধবা নারীকে আর্থিক সহায়তা দিলেন বিএনপি নেতা খোরশেদ আলম ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তৃনমূল দ্বায়ীত্বশীলদের সাথে পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত জুলাইয়ের মধ্যেই 'জুলাই সনদ' তৈরি করতে পারবো: আলী রীয়াজ ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে যোগ দেয়নি জামায়াত সাগরে তৈরি হচ্ছে বজ্রমেঘ, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত একাত্তরে ৫ রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যা করা মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম আর নেই সচিবালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত ইরানের শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের

এবার সঞ্চয়পত্র বন্ধক রেখে মিলবে ঋণ

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ এপ্রিল, ২০২৫,  10:43 AM

news image

আগামী অর্থবছরে কার্যকর

এফডিআরের (স্থায়ী আমানত) মতো এবার সঞ্চয়পত্র বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া যাবে। বর্তমানে এফডিআরের বিপরীতে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেয় ব্যাংক। একই ভাবে সঞ্চয়পত্র ইস্যুকারী ব্যাংক থেকেই মিলবে ঋণ। সে ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্র জামানত হিসেবে বিবেচ্য হবে। ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করবে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে ঋণ ব্যবস্থা চালু করতে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সঞ্চয় স্কিমগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করতে এবং বাজারে বেশি সংখ্যক সঞ্চয় উপকরণ যুক্ত করার অংশ হিসেবে সঞ্চয়পত্রগুলো লেনদেনযোগ্য করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ঋণ বাজার উন্নয়নে একটি ভালো পদক্ষেপ। এবিষয়ে অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে গত সপ্তাহে একটি বৈঠক করেছে অর্থবিভাগে। বৈঠকে বন্ড মার্কেট উন্নয়ন এবং সম্পদ সিকিউরিটাইজেশন পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা হয়। সম্পদ সিকিউরিটাইজেশন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র এবং সম্পদ একত্র করে সিকিউরিটিতে রূপান্তরিত করা হয় এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে বন্ধক রাখা হয়। ফলে সম্পদের মালিকরা মূলধন মুক্ত করে নতুন অর্থায়নের সুযোগ পায়।

সূত্র জানিয়েছে, যদি কোনো বিনিয়োগকারী চান এফডিআর জামানত হিসেবে বন্ধক রেখে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন। এ সুবিধার কারণে প্রয়োজনে কোনো গ্রাহক নিজের আমানত বন্ধক রেখে অর্থ ঋণ নিতে পারেন। কিন্তু বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের কোনো জামানত মূল্য নেই এবং এগুলো বন্ধক হিসেবে ব্যবহার করে ঋণ নেওয়া যায় না। সঞ্চয়পত্রকে জামানত হিসেবে বন্ধক রাখার জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়নের আলোচনা হয়েছে বৈঠকে, যাতে সঞ্চয়পত্র বন্ধক হিসেবে ব্যবহার করে ঋণ নেওয়া যায়। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রকে শেয়ারবাজারে লেনদেনযোগ্য করার প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি এবং এটি কার্যকর করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছি। কর্মকর্তাদের মতে, বর্তমানে ঋণ বাজারে খুবই অল্প কিছু লেনদেনযোগ্য উপকরণ রয়েছে। সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ড এমনকি করপোরেট ডিবেঞ্চারগুলোও ঋণ বাজারে লেনদেন হয় না।

বর্তমানে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর পরিচালিত চার ধরনের সঞ্চয়পত্র বাজারে রয়েছে; পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্র। এ ছাড়াও বাংলাদেশ প্রাইজ বন্ড, ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড নামে চার ধরনের বন্ডও রয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৭৮ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা, আর পরিশোধ হয়েছে ৯৯ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। ফলে নিট বিক্রি কমেছে ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। অর্থবছরের শেষে সঞ্চয়পত্রে মোট বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ সুদের হার ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ।

এবিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে ঋণ বাজার বিকাশের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক লেনদেনযোগ্য উপকরণের অভাব একটি বড় বাধা। সঞ্চয়পত্রগুলো লেনদেনযোগ্য হলে ঋণ বাজারে উপকরণের বৈচিত্র্য বাড়বে। তিনি বলেন, যদি সঞ্চয়পত্র জামানত হিসেবে ব্যবহার করে ঋণ নেওয়া যায়, তাহলে এগুলোর আকর্ষণ আরও বাড়বে। কারণ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে অর্থ আটকে থাকবে না। বরং মানুষ এই সঞ্চয়পত্র বন্ধক রেখে অর্থ ধার নিতে পারবে, বিনিয়োগ ছাড়াই।

তিনি আরও বলেন, এটি জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সংগ্রহের একটি বিকল্প পথ খুলে দেবে। একবার এটি মাধ্যমিক বাজারে লেনদেনযোগ্য হয়ে গেলে বাজারে তারল্যও বাড়বে। যদি কেউ সঞ্চয়পত্র কিনতে ওবিক্রি করতে পারে, তাহলে সুদের হারের ওঠানামার সঙ্গে মূল্যও পরিবর্তন হবে। এ উদ্যোগটি ঋণ বাজার উন্নয়নের জন্য একটি ভালো পদক্ষেপ, কারণ মানুষ সঞ্চয়পত্রকে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ মনে করে।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন 

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম