ঢাকা ২০ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
এ পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন ৩৬ হাজার ৬০১ হাজি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮ সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত এশিয়া কাপ আর্চারিতে সোনা জিতলেন বাংলাদেশের আলিফ পরমাণু ইস্যুতে ‘রেড লাইন’ স্পষ্ট করল ইরান সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ৬ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ ৫ আগস্ট সরকারি ছুটির ঘোষণা আসছে ২৫৩ জনের গুমের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন প্রবাসীরা ফেরার সময় শুল্ক ছাড়াই আনতে পারবেন যে ১৯ পণ্য বাংলাদেশকে দুই প্রকল্পে ৬৪০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘এরিক’

আওয়ামীলীগ নতুন নির্বাচন কমিশন দিয়ে আবার কৌশলে ভোট চুরির চিন্তা করছে- মির্জা ফখরুল

#

০৫ নভেম্বর, ২০২২,  9:04 PM

news image

বরিশালে বিভাগীয় গণ সমাবেশ

মাছউদ শিকদার: আমাদের এই আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়, খালেদা জিয়ার জন্য নয়, তারেক রহমানের জন্য নয় কিংবা আমাদের নেতাদের জন্য নয়। এ আন্দোলন জাতি ও দেশের প্রয়োজনে। সমগ্র জাতিকে রক্ষা করার জন্য। এ সরকারকে পদত্যাগ করে একটি জাতীয় সরকার গঠন করে নির্বাচন দিতে হবে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন দেশে উন্নয়ন করেছে, আর আওয়ামীলীগ দিয়েছে দূর্ভিক্ষ। দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধির কারনে বাজারে যাওয়া যায়না। তাই তারেক রহমান বলেছেন আন্দোলনের মাধ্যমে এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। বরিশালে বিভাগীয় গণ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধি, লাগাতার লোডশেডিং, দূর্নীতি-দুঃশাসন, লুটপাট, মামলা-হামলা, গুম, হত্যাজনগণের ভোটাধিকার পূনঃপ্রতিষ্ঠা ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে শনিবার (০৫ নভেম্বর) নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিএনপির বরিশাল বিভাগের আয়োজনে এ গণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আরো বলেন, শেখ হাসিনা বলেছিলো ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়াবে। ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। তা দিয়েছে ঠিকই। তবে তা ছাত্রলীগ কর্মীদের। সেজন্য অবশ্য ২০ লাখ টাকা করেও নিয়েছে তারা। আওয়ামীলীগের চরিত্রে আছে শুধু চুরি আর সন্ত্রাসী। আজ আওয়ামী লীগ বর্গীর রূপ নিয়েছে। ভোটের অধিকার একবার নয়, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই ভোট চুরি করে।


তারা সন্ত্রাস করবে, চুরি করবে- এটা হয় না। তিনি আরো আরও বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে তারা। এখন আবার নতুন করে ভোট চুরির ফায়দা আঁটছে। নতুন বুদ্ধি এটে নতুন কমিশন দিয়ে আবার কৌশলে ভোট চুরির চিন্তা করছে। কিন্তু এই হাসিনা, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন না হবে না। আওয়ামীলীগকে পদত্যাগ করে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। সমাবেশে প্রধান অতিথি তার ১০ মিনিটের বক্তব্যে আরও বলেন, একটা জায়গা দেখান, যেখানে এই সরকার দুর্নীতি করে নাই। বিনা পয়সার সার দেয়ার কথা বলেছে, কিন্তু আমাদের সময়ের থেকে তিন গুন দেশি দামে সার দিচ্ছে। ভোলায় লঞ্চে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে আবার আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেই মামলা দিয়েছে। এই বরিশালের উন্নয়নও করেছেন বেগম জিয়া। বরিশালে বিভাগ দিয়েছে বেগম খালেদা জিয়া, বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। সুতরাং উন্নয়ন চাইলে বিএনপিকে আবারো রাষ্ট ক্ষমতায় আনতে হবে। 

বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক মোঃ মনিরুজ্জামান ফারুকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বরিশালে বিএনপির সমাবেশ ঠেকাতে পদে পদে বাঁধার সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপরও সমাবেশ ঠেকাতে পারেনি। বিএনপি বলেছিলো আওয়ামীলীগ পালানোর যায়গা পাবেনা। আর অওয়ামীলীগের ওবায়দুল কাদের স্বীকার করেছেন তারা পালাবেননা, জেল খাটবেন। সুতরাং তারাই তাদের পরিনতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। আওয়ামীলীগ বলেছে দেশে ২৩ সালে দূর্ভিক্ষ হবে। কেন হবেনা, এই সরকারে আমলে বিদেশে পাচার হয়েছে তিন লক্ষ কোটি টাকা। এই সরকারকে যদি সড়াতে না পারি তবে এ দেশে আর কিছু বাকি থাকবেনা। এই সরকার এমন কাজ করছে যারা এ দেশে ১৫ বছর আগে ভোটার হয়েছে তারা জানেনা ভোট কিভাবে দিতে হয়। সেই সুযোগ আওয়ামীলগি দেয়নি।  


সমাবেশের বিশেষ অতিথি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বরিশালের মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে গনতন্ত্রের জন্য আন্দোলন কাকে বলে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি দূর্বিষহ করেছে আওয়ামী লীগ। এ দেশে শিক্ষা নেই, সততা নেই। সরকারের যারা আছে মিথ্যা ছাড়া কিছু বলে না। আওয়ামী লীগ যা বলে, তা করে না। আর যা করে, তা বলে না। সুস্থ্য রাজনীতি নাই, ব্যাংকে টাকা নাই। এই যে মিডিয়াগুলো আছে, আমাদের বক্তব্যগুলো এডিট করে প্রচার করবে। কেননা সংবাদপত্রে স্বাধীনতা নেই। এ দেশে দিনের খেভাট রাতে হয় যায়। বাংলাদেশে কোন গণতন্ত্র নাই।

সমাবেশে আরেক বিশেষ অতিথি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, মানুষকে খাওয়ানোর পয়সা নাই, কিন্তু ভোট চুরির মেশিন ইভিএম কেনার পয়সা আছে। তবে এবারের পরীক্ষায় আওয়ামী লীগ নকল করেও পাশ করতে পারবে না। আমীর খসরু আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া চাইলে আওয়ামী লীগের মতো গুম-খুন করে ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। তাই দেশের শান্তি ও উন্নয়নের জন্য তিনি ক্ষমতা ধরে রাখেননি। এ সময় তিনি দেশের গুম-খুন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ সবকিছুর কারণ হিসেবে ভোট চুরিকে দায়ী করেন। আজ মানুষ দুবেলা খেতে পারেনা। আইনের শাসন নেই, ভোটাধিকার নেই। এরকম সংকোট থেকে উত্তরনের সময় এসেছে।  সমাবেশের বিশেষ অতিথি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ কী করলো? বাঁধা দিয়ে একদিনের সমাবেশ তিনদিনে শেষ করলো। ষড়যন্ত্র করে খালেদা জিয়া-তারেক রহমানকে একের পর এক মামলা দিয়েও বিএনপিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। এর প্রমাণ আজকের জনসমুদ্র। তেল, গ্যাস ও চালসহ দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণ আজ ফুসে উঠেছে। জনগণের পক্ষে কথা বলায় ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫ জন বিএনপি নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

সমাবেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সরকারি দলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রত্যেকটি জিনিস পাই পাই হিসাব করা হবে। জনগণের আদালতে সবকিছুর বিচার হবে। আমরা মানুষের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করে যাচ্ছি। এবং এ আন্দোলনে সফল হবে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, আজকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। বেতন বাড়েনি, কিন্তু নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। জনগণকে বাদ দিয়ে কোনো উন্নয়ন হবে না। স্বাধীনতাযুদ্ধ থেকে শুরু করে গণতন্ত্রপুনরুদ্ধারের এই লড়াইয়ে বরিশালের মানুষ রক্ত দিয়ে দিয়েছে। তাই তাদের দাবি কখনোই দাবিয়ে রাখা যাবে না। এই সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরে যাবো না। প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে শেখ হাসিনা। আইনের কোনো ব্যাপার নেই। কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে পালিয়ে যাননি, যুদ্ধের মাঠে ছিলেন। আমরা তারই সন্তান, তাই পালিয়ে যেতে শিখিনি। আমরা দেশের মানুষের দায়িত্ব নিতে চাই। বরিশালের মানুষ বিএনপিকে বিশ্বাস করে, যার প্রমাণ এই মহাসমাবেশ। মহাসমাবেশে জনসমুদ্র প্রমাণ করেছে বরিশাল খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ঘাঁটি, ধানের শীষের ঘাঁটি। নানা বাঁধা উপেক্ষা করে সমাবেশস্থলে নেতা-কর্মীদের উপচেপরা ভির ছিলো চোখে পড়ার মত। দুপুর ২ টায় জনসভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের ৩ ঘন্টা আগেই তা আরম্ভ হয়। প্রায় অর্ধশত নেতার বক্তব্য শেষে বিকাল সোয়া ৫ টার দিকে বরিশালে বিএনপির গণ সমাবেশ শেষ হয়। 

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম