ঢাকা ১৯ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
জাতীয় ট্যালেন্ট হান্ট ক্রিকেটে সাপাহারের ২ শিক্ষার্থী স্বর্ণের দামে বড় পতনের পূর্বাভাস আগামীকাল সচিবালয়ে বিক্ষোভের ঘোষণা ১১ মাসে রাজস্ব আদায় ৩ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা: এনবিআর দেশে ফিরেছেন ২৯ হাজার ৭৩ হাজি ঈদযাত্রার ১২ দিনে সড়কে ঝরল ৩১২ প্রাণ নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন চান রিজভী জনসংযোগ-নিরাপত্তার মিশ্রণে দায়িত্ব পালনে এসএসএফের সদস্যদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান সন্ধ্যায় হাসপাতালে যাবেন খালেদা জিয়া বন্দর নবীগঞ্জে পাষণ্ড স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন

‘রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর কাজ করছে সরকার’

#

০১ মার্চ, ২০২৫,  1:54 PM

news image

-কক্সবাজারে ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে জেনারেল অব জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘কক্সবাজারে অপহরণের প্রবনতা অনেক বেশি। ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। তারা অপহরণসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। রোহিঙ্গাদের যত দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যাবে ততই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গল। তারাই সমস্যা বৃদ্ধি করছে। তাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছে বর্তমান সরকার।’

এছাড়া সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির হাতে থাকায় আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মি উভয়পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে বলেও জানান এই উপদেষ্টা।

আজ শনিবার সকালে কক্সবাজারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতবিনিময় সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে পণ্য আনার সময় সিটওয়েতে মিয়ানমার সরকার ও পরে সীমান্ত অতিক্রমের সময় আরাকান আর্মিকে ট্যাক্স দিতে হচ্ছে এবং সীমান্ত বানিজ্য পরিচালনায় নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে মিয়ানমার সরকারসহ উভয়পক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে। উভয় পক্ষের সাথে আলোচনার জন্য মন্ত্রীর মর্যাদায় সরকার একজন বিশেষ সহকারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি মিয়ানমার সরকার এবং আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।’  এটি একটি বড় সমস্যা এবং তা সমাধানে সরকার কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে সভা শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘কক্সবাজারে অপহরণ ও মাদকের বিস্তার বেড়েছে। প্রায় এসব বিষয় গণমাধ্যমে আসছে। আপনারা (সাংবাদিকরা) এবং স্থানীয় সচেতনমহল জানেন, কারা এসব করছে। মানবিক কারণে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কাগজে কলমে ১২ লাখ বলা হলেও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। এরা আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে। এদের প্রত্যাবাসন ছাড়া সীমান্ত এলাকার অপরাধ কর্মকান্ড থামানো মুশকিল। আবার তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনও সম্ভব নয়। বলতে গেলে রোহিঙ্গা নিয়ে আমরা 'শাঁখের করাতে' রয়েছি।’

দলীয় পরিচয়ে পর্যটন এলাকায় দখল-বেদখল, মারামারি ও ছিনতাই বাড়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কোনো দলের বদান্যতায় কাজ করছি না। দেশের কল্যাণে যা যা করণীয় তাই করা হচ্ছে। প্রশাসনের কাউকে কোনো দপ্তর থেকে বলে দেয়া হয়নি, অমুখ দলের লোকজনকে সহানুভূতি দেখাতে। কোনো দলের নেতাকর্মী দখল বা অন্য কোনো অপরাধে জড়ালে প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে জেলা পুলিশ ও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা এ বৈঠকেই দিয়ে যাচ্ছি। দলীয় বিবেচনায় নয়, অপরাধ বিবেচনায় ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।’

তিনি দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলেন, ‘আমাদের প্রশাসনের একটি রোগ জারি হয়ে আছে, তা হলো ক্ষমতায় কে আসতে পারে- সেই সম্ভাব্যতা থেকে সেই দলের নেতাকর্মীদের আগাম তেল দেওয়া। এখানে ঊর্ধ্বতন বা মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা থাকে না।’

উল্লেখ্য, মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধের ফলে সীমন্তে নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি মাদক চোরাচালান ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, মানবপাচার শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে আজ শনিবার উখিয়া ব্যাটালিয়ন ৬৪ বিজিবি যাত্রা শুরু করছে। এসব বিষয় নিয়ে দুদিনের সফরে গতকাল কক্সবাজার এসেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আল চৌধুরী। আজ বিকেলে তিনি কক্সবাজার ত্যাগ করবেন।

এদিকে, ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ‘রাখাইনের পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান প্রথম প্রকাশ্যে 'বাংলাদেশ আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলে বক্তব্য রেখেছিলেন। এর দুদিন পর কক্সবাজারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা একই কথার পুনাবৃত্তি করলেন।

তথ্যমতে, মিয়ানমারে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে জেনারেল মিন অং হ্লায়িং। এর পর থেকে দেশটিতে সহিংসতা শুরু হয়। রাখাইনে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আরাকান আর্মি লড়াই করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের পুরো ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করছে আরকান আর্মি।

বর্তমান সরকারের মতে, যেদিন আরাকান আর্মি সীমান্তে তাদের পতাকা উত্তোলন করেছিল, সেদিনই বুঝা গিয়েছিল এটি একটি নতুন বিশ্ব। ফলে তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। এটা বুঝা গিয়েছিল যে, আরাকান আর্মিকে একটি সংকেত পাঠানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সীমান্ত, আমাদেরই রক্ষা করতে হবে, সুরক্ষিত করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা অন্য প্রান্তে যে আছে, তার সঙ্গে সহযোগিতা করে কাজ করব। আমরা একটি নির্দিষ্ট স্তরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের আগে জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত জুলি বিশপের সঙ্গে বৈঠক করেন খলিলুর রহমান, এমনটি জানানো হয়।

সরকারের তরফ থেকে আরও বলা হয়, মানবিক বিবেচনার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার থাকলেও আরাকান আর্মিকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আরাকান আর্মিসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে উন্মুক্ত সংলাপ অব্যাহত রাখতে হবে।

সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের প্রেক্ষিতে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে কক্সবাজারের চকরিয়া থানার ওসি মনজুর কাদের ভূঁইয়াকে আজকের মধ্যেই প্রত্যাহারের জন্য আদেশ দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

মতবিনিময় সভায় সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), আনসার, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কক্সবাজার জেলার দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

দুপুরে কক্সবাজার বিজিবি ব্যাটালিয়ন এর প্রশিক্ষণ মাঠে নবগঠিত উখিয়া বিজিবি ব্যাটালিয়ন স্টেশন সদর দপ্তর, গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং কে-নাইন ইউনিট এন্ড ট্রেনিং সেন্টার এর আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে জেনারেল অব জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম