
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৩ জুন, ২০২৫, 11:13 AM

১৫ বছরেও সরেনি আনফিট বাস, ফের আয়ুষ্কাল নির্ধারণ
ঢাকার গণপরিবহন
আবারও বাস-ট্রাকের মতো পরিবহনের আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করেছে সরকার। একটি বাস সর্বোচ্চ ২০ বছর ও পণ্যবাহী যান ২৫ বছর সড়কে চলতে পারবে। কিন্তু এরপর এসব বাস-ট্রাকের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে পরিষ্কার কোনো ধারণা তৈরি হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আয়ুষ্কাল নির্ধারণ জটিলতা আরও বেড়েছে।
সাধারণত মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়িকে ধ্বংস (স্ক্র্যাপ) করতে হয়। কিন্তু স্ক্র্যাপ নীতিলামা এখনো খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। তাই স্ক্র্যাপ নীতিলামার অধীনে এসব গাড়ি ধ্বংস করার আনুষ্ঠানিক উপায় তৈরি হয়নি। তাহলে যেসব বাস ও ট্রাকের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাচ্ছে, এসব গাড়ি কী করা হবে, সে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। একই সঙ্গে স্বাভাবিক চলাচলের অনুপযোগী এসব যান সড়কে থেকে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সংস্থাপন শাখা একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ধারা ৩৬ অনুযায়ী গণ ও পণ্য পরিবহনের আয়ুষ্কাল (ইকোনমিক লাইফ) নির্ধারণ করা হয়। এটি আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে প্রজ্ঞাপনে ব্যক্তিগত গাড়িসহ অন্যান্য যানের আয়ুষ্কাল নিয়ে কিছু বলা হয়নি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিচালক শীতাংশু শেখর বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, ‘এই প্রশ্নগুলো ওঠা স্বাভাবিক। আপাতত এগুলো ডাম্পিং করতে বলা হয়েছে। স্ক্র্যাপ নীতিমালা আগাচ্ছে। ওইটা চূড়ান্ত হয়ে গেলে ইকোনমিক লাইফ টাইম শেষ হওয়া গাড়ির ভবিষ্যৎ আইনিভাবে নির্ধারিত থাকবে।’
মেয়াদোত্তীর্ণ বাস-ট্রাক ৭৩ হাজার: গত বছরের এপ্রিলে বায়ুদূষণ রোধে ঢাকায় চলাচলকারী ২০ বছরের বেশি পুরোনো বাস তুলে দিতে উদ্যোগ নেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। ওই সময় বিআরটিএর কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি দেয় পরিবেশ মন্ত্রণালয়। তখন ওই চিঠির বিপরীতে এ ধরনের যানের তথ্য দেওয়া হয়।
পুরোনো যানের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০ বছরের পুরোনো মোট বাস এবং মিনিবাস আছে ৩৫ হাজার ৭৮২টি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে বাস আছে আট হাজার ১৩২টি এবং মিনিবাস ছয় হাজার ৪৭৮টি। ঢাকা মহানগরের বাইরের সব সার্কেলে বাস আছে সাত হাজার ৭০৪টি এবং মিনিবাস আছে ১৩ হাজার ৪৬৮টি।
এ ছাড়া ২৫ বছরের পুরোনো মোট ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং ট্যাঙ্কার আছে ৩৭ হাজার ২৫৭টি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে ট্রাক আছে পাঁচ হাজার ৯৫৮টি, কাভার্ডভ্যান ১৪৯টি, ট্যাঙ্কার ২৮২টি। ঢাকা মহানগরের বাইরের সব সার্কেলে ট্রাক আছে ২৯ হাজার ২১টি, কাভার্ডভ্যান ৩৫৫টি এবং ট্যাঙ্কার এক হাজার ৫১০টি।
আর নিবন্ধিত যান সংক্রান্ত বিআরটিএর নথির তথ্য বলছে, চিঠি দেওয়ার অবস্থায় অর্থাৎ গত বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত মোট ২০ ধরনের গাড়ি মিলিয়ে ৬০ লাখ ১৭ হাজার ৪৩৮টি মোটরযানের নিবন্ধন দিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে নিবন্ধন পাওয়া বাস আছে ৫৪ হাজার ৬৮৭টি, মিনিবাস ২৮ হাজার ৩২২টি, ট্রাক এক লাখ ৫০ হাজার ৬৭৬টি, কাভার্ডভ্যান ৪৮ হাজার ৯৮৩টি এবং ট্যাঙ্কার ছয় হাজার ৯৪৪টি। সব মিলিয়ে এই পাঁচ ক্যাটাগরিতে বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন পাওয়া মোট মোটরযান ছিল দুই লাখ ৮৯ হাজার ৬১২টি। এর মধ্যে ৭০ হাজার ৫৩টির বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে। এরপর গত এক বছরে আরও কতগুলো গাড়ির আয়ুষ্কাল ২০-২৫ বছর পেরিয়েছে, সে সংখ্যা জানা যায়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম কালবেলাকে বলেন, ‘ফিটনেস যদি ঠিক থাকে তাহলে একটি বাস ৩০ বছর পর্যন্ত চলতে পারে। বাসের লাইফ টাইম পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি। সরকার চাইলে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। চেসিস ইঞ্জিন এগুলো আমাদের দেশে তৈরি হয় না। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। আর যদি লাইফ টাইম বাড়ানো না হয়, তাহলে যন্ত্রপাতির দাম কমানোর কথা বলেছি।’
১৫ বছরেও সরেনি আনফিট বাস: সর্বপ্রথম ২০১০ সালে ২০ বছরের বেশি পুরোনো বাস এবং ২৫ বছরের বেশি পুরোনো পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর ২০১৫ সালে একবার নির্বাহী আদেশ জারি করা হয়। ২০২৩ সালে আবার প্রজ্ঞাপন জারি হয়। কিন্তু কোনো কিছুতেই কিছু হয়নি। উল্টো একই বছরের আগস্টে প্রজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, পরিবহন মালিকদের চাপে বিআরটিএ তখন পিছু হটে। পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামছুল হক বলেন, ইকোনমিক লাইফ টাইম গাড়ির ফিটনেসের ওপর ওঠানামা করতে পারে। সব গাড়ি ২০ বছর টিকবে, তা নয়। আগেও বাতিল করে দেওয়া যায়। আবার ফিটনেস ঠিক থাকলে আরও কিছু দিন চালানো যেতে পারে। তবে স্ক্র্যাপ নীতিমালা দ্রুত চূড়ান্ত করা উচিত। সূত্র : কালবেলা