
নিজস্ব প্রতিনিধি
০৬ মার্চ, ২০২২, 8:47 PM

হাসপাতাল থেকে দিন-দুপুরে ৮ দিনের নবজাতক চুরি
যশোর শিশু হাসপাতাল থেকে দিনেদুপুরে নবজাতক চুরির ঘটনা ঘটেছে। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বারবার হাসপাতাল বেডে মূর্ছা যাচ্ছেন মা আসমা খাতুন। চিৎকার করতে করতে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলছেন আমার বুকের ধনরে এনে দাও। তার কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে পুরো হাসপাতাল। রোববার (৬ মার্চ) বেলা ১২ টার দিকে এক নারী এ ঘটনা ঘটায়। চুরি হওয়া শিশুটির বয়স ৮দিন। ওই শিশুটির মা আসমা খাতুন ও বাবা মেহেদী হাসান জনি ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দা। সন্তান হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন শিশুটির মা, বাবাসহ স্বজনরা।
এক বছর আগে কালিগঞ্জ পৌর শহরের একটি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের দপ্তরি মেহেদী হাসান জনির সঙ্গে বিয়ে হয় কোটচাঁদপুরের গাংনা এলাকার আসমা খাতুনের। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কালিগঞ্জের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তাদের সংসারে আসে প্রথম সন্তান। জন্মের পরপরই ছেলে নবজাতকটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে ওইদিন রাতেই স্থানীয় ক্লিনিকের চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর শিশু হাসপাতালে রেফার্ড করেন। শিশু হাসপাতালে ৭ দিন চিকিৎসা শেষে রোববার বেলা ১১ টার দিকে চিকিৎসক নবজাতকটিকে সুস্থ ঘোষণা করে রিলিজ দেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় শিশুটির বাবা তাদের সবাইকে বাড়িতে নেয়ার জন্য গাড়ি আনতে গেলে শিশুটির মা ও নানীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বোরকা পরিহিত ৪০ বছর বয়সী এক নারী হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যান। পরে তারা ওই নারীকে পুরো হাসপাতাল ও আশপাশের এলাকায় খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানান। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বারবার হাসপাতাল বেডে মূর্ছা যাচ্ছে মা আসমা খাতুন। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “সংসারে প্রথম সন্তান হয়েছে, তাও ছেলে সন্তান। আমার শ্বশুর বাড়ি ও স্বামীর বাড়িতে আনন্দের বন্যা বইছে। সন্তান হওয়ার পরে ছেলেটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই দ্রুত যশোর শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে ৭ দিন চিকিৎসা শেষে আজ দুপুরে বাড়ি নেওয়া কথা ছিলো। তার আগেই আমার সোনার মানিকরে চুরি করে নিয়ে গেছে। আমি এখন কার নিয়ে বাঁচবো। আমার শ্বশুর বাড়িতে কি জবাব দিবো। আপনারা সবাই আমার বুকের ধনরে খুঁজে বের করে দেন।’ নবজাতকের বাবা মেহেদী হাসান জনি বলেন, সকালে হাসপাতালের চিকিৎসক রাউন্ড শেষে আমার ছেলেকে রিলিজ দিয়ে দেয়। তার পর ছেলে ও তার মাকে বাড়ি নেওয়ার জন্য একটা ইজিবাইক আনতে গিয়েছিলাম। নিচে ইজিবাইক দাঁড় করে এসে শুনি আমার ছেলেকে কে যেন চুরি করে নিয়ে গেছে। অনেক খুঁজাখুজি করেও আমার ছেলেটার খোঁজ পায়নি। শিশু হাসপাতলের তত্ত্ববাবধায়ক ডা. সৈয়দ নূর ই হামিম বলেন, নবজাতক চুরি যাওয়ার ঘটনাটি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যান এবং সাথে সাথে পুলিশ প্রশাসনকে জানান। এখানে আমাদের কোন নিরাপত্তার ঘাটতি ছিলো না। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে পুলিশের একাধিক কর্মকতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। তবে কোতয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) তাসমীম আলম জানান, খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। শিশুটিকে উদ্ধারে কাজ করছেন তারা। গত দেড় বছরে শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আরও ৩টি শিশু চুরির ঘটনা ঘটেছে।