ঢাকা ২১ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
এ পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন ৩৬ হাজার ৬০১ হাজি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮ সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত এশিয়া কাপ আর্চারিতে সোনা জিতলেন বাংলাদেশের আলিফ পরমাণু ইস্যুতে ‘রেড লাইন’ স্পষ্ট করল ইরান সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ৬ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ ৫ আগস্ট সরকারি ছুটির ঘোষণা আসছে ২৫৩ জনের গুমের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন প্রবাসীরা ফেরার সময় শুল্ক ছাড়াই আনতে পারবেন যে ১৯ পণ্য বাংলাদেশকে দুই প্রকল্পে ৬৪০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘এরিক’

সূর্যমুখীর হাসি দেখতে ২০ টাকা লাগে

#

নিজস্ব প্রতিনিধি

০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২,  3:01 PM

news image

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের ছয় তরুণ বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েন। ভাবতে থাকেন কী করবেন? এই ভাবনাতেই তাদের চলে যায় কয়েক মাস। অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেন সূর্যমুখী ফুলের চাষ। গড়ে ওঠে বাগান। নাম দিয়েছেন ‘স্বপ্ন ছোঁয়া সানফ্লাওয়ার গার্ডেন’। এখন তাদের বাগানে দর্শনার্থী সমাগম বেড়েছে। দর্শনার্থী প্রতি ২০ টাকা হারে প্রতিদিন আয় হচ্ছে প্রায় ৮ হাজার টাকা।ছয় তরুণ হলেন- নজরুল ইসলাম, রেজাউল করিম, রুকনউদ্দিন, ফরহাদ আহমদ, পারভেজ আহমদ ও রুবেল হোসেন। গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের স্বাধীন বাজারের পাশে প্রায় ৬০ শতাংশ জমিতে এই বাগান করেছেন তারা। জমি তৈরি ও বীজ কেনা বাবদ খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। বাগানের ভেতরে বাচ্চাদের দোলনা ও অন্যান্য আসবাবপত্র দিয়ে সাজাতে খরচ হয়েছে আরও ২৫ হাজার টাকা।

এই দুয়ের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে তাদের ‘স্বপ্ন ছোঁয়া সানফ্লাওয়ার গার্ডেন’। শুক্রবার ও শনিবার বিকেলে সড়কের পাশে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি দেখা গেল। বাগান বিলাসীদের বহন করে এনেছে এসব যানবাহন। এক অটোরিকশা চালক জানান, সূর্যমুখী বাগানের কারণে আমাদের ভাড়া বেড়ে গেছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বনানীপাড়ার বাসিন্দা তুষার আহমেদ টিপু দৈনিক মুক্ত খবরকে বলেন, এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসেছি। তারা বইয়ে সূর্যমুখী ফুলের ছবি দেখেছে। এখন বাস্তবে দেখছে।হাসি দিয়ে দর্শনার্থী কাছে টানছে সূর্যমুখী রবিবার বিকেল ৩টায় শিমুল বাগানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এসেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুদ্র। সঙ্গে আরও কয়েকজন বন্ধু রয়েছে তার। সাময়িক যাত্রা বিরতি নিলেন এখানে। তারা জানান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করা মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। যাত্রা পথে হলুদবর্ণের ফুল আমাদের কাছে টেনে এনেছে। স্মৃতি ধরে রাখতে সূর্যমুখীর সংস্পর্শে গিয়ে কিছু ছবি তুলেছি। বাগানটি খুবই সুন্দর। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সামছুনেহার বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে সূর্যমুখী বাগানে বেড়াতে এসেছি। এমন একটা সময় পার করেছি যখন সবাই ঘরবন্দী ছিলাম। অতীতের সব ভুলে যেতে চায়। তাই এখন ঘুরতে এসেছি। এই বাগানে এসে আমার খুব ভালো লেগেছে। এতো সুন্দর একটা বিকেল পার করতে পারব কল্পনাও করিনি।জামালগঞ্জ উপজেলার জালালাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুমি আক্তার বলেন, স্বাধীন বাজারের পাশে এতো সুন্দর প্রকৃতির নিসর্গের ছোঁয়া আগে জানতাম না। এখানে এসে বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারছি। শুধু আমি না এখানে অনেক পর্যটকরা এসেছেন। সবাই প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গেছেন। বাগানের মালিক নজরুল ইসলাম দৈনিক মুক্ত খবরকে বলেন, আমি একজন শিক্ষার্থী। পড়ালেখার পাশাপাশি চাইছিলাম কিছু একটা করার কথা। পরে ছয় বন্ধু মিলে সূর্যমুখী ফুল চাষ শুরু করি।তিনি বলেন, তিন মাস আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি। কৃষি অধিদপ্তর থেকে আমাদের সহযোগিতা করেছে। এখন ফুল ফুটেছে। অনেক দর্শনার্থী আসছেন। তাদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে নিচ্ছি। প্রতিদিন দুইশ থেকে ছয়শ দর্শনার্থী বাগান দেখতে আসেন। এতে একদিনে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা আয়ও হয় আমাদের।বাগানের মালিক মো. ফরহাদ আহমদ বলেন, আমি ছোটখাটো একজন ব্যবসায়ী। করোনাকালীন ব্যবসায় লোকসান হয়। তারপর কয়েকজন বন্ধু মিলে সূর্যমুখী ফুলের বাগান করি। এখন বাগানে প্রায় সব গাছেই ফুল এসেছে। দর্শনার্থীও আসছেন। আমাদের আয়ও হচ্ছে। বাগানটি আমরা অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছি। একটা ব্রিজ করেছি। বাগানের ভেতরে বাচ্চাদের দোলনা, ছবি তোলার ফ্রেম, বসার ব্যবস্থা করেছি।আমার বাড়ি লালপুর। এই বাগানটি হয়েছে লালপুরে। আমাদের তরুণরা খুব সুন্দর একটি পরিবেশের সৃষ্টি করেছে এখানে। সুনামগঞ্জে কোনো বিনোদনের জায়গা নেই। তারা বিনোদনের একটি জায়গা তৈরি করে মানুষকে প্রকৃতির সঙ্গে মেশার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। বেকার তরুণরা এভাবে নিজেরা উদ্যোক্তা হলে সমাজ থেকে মাদক বিদায় নেবে। এসব তরুণদের পাশে ভবিষ্যতেও থাকবেন বলে জানান অত্র এলাকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফুল মিয়া।  জেলা কৃষি অফিসের উপপরিচালক মো. ফরিদুল হাসান দৈনিক মুক্ত খবরকে বলেন, এই ছয় তরুণকে সূর্যমুখী বাগান করার জন্য আমরা প্রণোদনা দিয়েছি। এখন তারা সফলতা পেয়েছে। যারা এ রকম উদ্যোগ নিবে তাদের পাশে আমরা সব সময়  থাকবো।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম