ঢাকা ২৩ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
রংপুর মেডিক্যাল থেকে ৫ দালালকে আটক করেছে পুলিশ ৩১ দফা বাস্তবায়নে সোনারগাঁওয়ে আজহারুল ইসলাম মান্নানের নির্দেশে গণসংযোগ লিফলেট বিতরণ হজে ৩৮ বাংলাদেশির মৃত্যু, দেশে ফিরেছেন প্রায় ৪৩ হাজার হাজি ১৮ দিনে এলো ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি রেমিট্যান্স শামীম ওসমানের দুই প্লট জব্দ, ২৯ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ অবশেষে শক্তিশালী সেই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালাল ইরান উপদেষ্টা পরিষদে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন কালো টাকা সাদা করা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত গাজীপুর মহানগর প্রেসক্লাবের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত সাবেক ৩ সিইসির বিরুদ্ধে বিএনপির মামলা

সীতাকুণ্ডের পথে-প্রান্তরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কদমফুলের অপরূপ সৌন্দর্য

#

নিজস্ব প্রতিনিধি

২২ জুন, ২০২৪,  3:43 PM

news image

কদমফুল মনে করে দিচ্ছে আষাঢ়-শ্রাবণ মাস নিয়ে প্রকৃতিতে এখন চলছে বর্ষাকাল। সীতাকুণ্ডের গ্রাম-গঞ্জে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে থাকা কদমফুলগুলো খুব সহজেই মনকাড়ে ফুল প্রেমীদের। আবার গ্রামের ছোট বাচ্চাদের খেলার প্রধান উপকরণ হিসেবে এ ফুলের নেই কোন জুড়ি। এছাড়া মধু সংগ্রহে ফুলে ব্যস্থতা বেড়েছে মৌমাছি‘সহ নানা রকম পতঙ্গের। বৃষ্টির টুপটাপ শব্দে ধুয়ে মুছে অমলীন বিমোহিত সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে অবহেলিত সাদা-হলুদ রঙের কদমফুলগুলো। আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি ভেজা গাছে গাছে ঝুলছে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে সাদা-হলুদ রঙের নান্দনিক কদমফুল। পৌরসদরস্থ বাসিন্দা ডা. এস এম সাইফুল আলম বলেন, কদমফুল সৌন্দর্য পিপাসুদের এনে দেয় নিদারূণ তৃপ্তি। তরুণ-তরুণীরা কদমের এ নান্দনিক ফুল তাদের প্রিয়জনকেও উপহার দেয়। খেলায় মেতে উঠে শিশুরাও। আর কন্যা শিশুরা মনের আনন্দে খোঁপায় বাঁধে কদমফুল। আবার কতেক শিশুরা ফুলগুলো ছিঁড়ে ভেতরে থাকা গোলাকার অংশটি ছোট্ট বল বানিয়ে খেলাধুলা করে।

আদিকাল থেকে বর্ষার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে যাওয়া নান্দনিক কদমফুল আজ ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার সর্বত্র কদমফুল দেখা গেলেও এর আদি নিবাস চীন, মালয় ও ভারতের উষ্ণাঞ্চলে। সেখানে কদম নীপ নামেও পরিচিত। বৃত্তপুস্প, মেঘাগমপ্রিয়, কর্ণপূরক, মঞ্জুকেশিনী, পুলকি, সর্ষপ, ললনাপ্রিয়, সুরভি ইত্যাদি মনোহর‘সহ কদমের রয়েছে আরো অগনিত নাম। ছোট্ট বলের মতো দেখতে এ ফুলের ভেতরে রয়েছে মাংসল পুষ্পাধার, যাতে হলুদ রঙের পাঁপড়িগুলো আটকে থাকে। পাঁপড়ির মাথায় থাকে সাদা রঙের পরাগ। হলুদ-সাদা রঙের কদমফুল গাঢ় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে হাসতে থাকে প্রকৃতির মাঝে। ফুলে ভরা কদমগাছ দেখতে নান্দনিক হলেও এর আর্থিক মূল্য খুবই স্বল্প। কদম কাঠ নরম বলে আসবাবপত্র তৈরিতে অনুপযোগী। তবে কাঠ দিয়ে বাক্সপেটরা, দিয়াশলাই ও কাগজ তৈরি হয়ে থাকে। শুধু সৌন্দর্যে আর মাধুর্যে নয়, ভেষজগুণের পাশাপাশি কদমে রয়েছে আরো কতেক গুরুত্ব।

কদমের ছাল, পাতা কিংবা ফুলের রস পিপাসা নিবারণের পাশাপাশি কৃমি ও জ্বরনাশক এবং বলকারক হলেও গ্রাম বাংলায় সেই কদমের ঘ্রাণ এখন অনেকটাই অতীত। আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টিতে দক্ষিণা হালকা বাতাসে হলুদ-সাদা ফুলে দোল খাওয়া কদমের নেই আগের মতো সেই জৌলুস। দূর থেকেও দৃষ্টিনন্দন গাছে গাছে সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে যেন বেরিয়েছে হলুদ-সাদা ফুলের ঝর্ণা। প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ধণ ছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এ বৃক্ষের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড মহাদেবপুরের বাসিন্দা ও সীতাকুণ্ড পৌরসদর ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির সহ-দপ্তর সম্পাদক মোঃ কামরুল আলম বলেন, এক সময় সৈয়দপুর, বারৈয়াঢালা, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, মহাদেবপুর, আমিরাবাদ, ইকোপার্ক এবং সীতাকুণ্ড পাহাড়‘সহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে বাড়ীর সামনে, রাস্তার পাশে, পুকুর ও খালের পাড় কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নান্দনিক বড় বড় কদমগাছের বনায়ন দেখা গেলেও বর্তমানে তা শুধুই স্মৃতি। সীতাকুণ্ড ডিগ্রী কলেজের সিনিয়র প্রভাষক ফেরদৌস খান বলেন, মহাসড়ক ডিভাইডারে ঝুলছে মনোরম সাদা-হলুদ রঙ্গের কদমফুল।

গতকাল চট্টগ্রাম শহরে যাওয়ার পথে গাড়ীতে বসাবস্থায় মহাসড়ক ডিভাইডারে কদমফুলের নান্দনিক দৃশ্যে মনটা ভরে যায়। বর্তমানে বৃক্ষ রোপনের তালিকায় নেই কদমগাছ, তবে নিয়মিত কর্তন হচ্ছে। এ গাছ রোপনে এখন পর্যন্ত নেই কোন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগও। তিনি আরো বলেন, গাছ মানবদেহের অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত ও বায়ু দূষণমুক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এ গাছের পাতা, ফুল ও ফল যেমন সু-স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তেমনি আমাদের চারপাশকে কদম গাছের সবুজ পাতা ও ফুল সৌন্দর্য বর্ধন করে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুল্লাহ বলেন, কদম ফুল শুভ্রতার প্রতীক। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে কদমফুল বর্ষার বৃষ্টিস্নাতক দিনে বাঙালীদের মনে অন্য রকম অনূভূতি এনে দেয়। বাল্য বয়স থেকেই গ্রামীণ পরিবেশে কদমফুলের সাথে পরিচিত হয়ে আসছি। বর্তমানে শিমুল‘সহ অন্যান্য ফুল বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হলেও কদমের বেলায় দেখা যাচ্ছে না তেমন‘টা। আষাঢ়-শ্রাবণে এক সময় পথে প্রান্তরে প্রচুর পরিমাণে কদমফুলের দেখা মিলতো যা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বিলুপ্ত হওয়া কদমগাছ সংরক্ষণ ও বনায়নে রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম