ঢাকা ১৮ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
সোনারগাঁয়ে বেরিবাঁধ থেকে যুবকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ শপথ ভেঙেছেন: ইশরাক সাভারে অসহায় বিধবা নারীকে আর্থিক সহায়তা দিলেন বিএনপি নেতা খোরশেদ আলম ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তৃনমূল দ্বায়ীত্বশীলদের সাথে পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত জুলাইয়ের মধ্যেই 'জুলাই সনদ' তৈরি করতে পারবো: আলী রীয়াজ ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে যোগ দেয়নি জামায়াত সাগরে তৈরি হচ্ছে বজ্রমেঘ, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত একাত্তরে ৫ রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যা করা মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম আর নেই সচিবালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত ইরানের শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের

সাহরির সুন্নাহ ও আমাদের অবহেলা

#

০৪ মার্চ, ২০২৫,  10:44 AM

news image

সাহরি খাওয়া সুন্নত, এর মধ্যে অনেক বরকতও আছে। সাহরি একজন রোজাদারকে শক্তিসামর্থ্য ও রোজা রাখতে সাহায্য করে এবং পুরো দিন সহজে কাটাতে সহায়তা করে। এ ছাড়াও সাহরি খাওয়া আমাদের এবং আহলে কিতাবদের রোজার মধ্যে পার্থক্য করে। সাহরির সর্বোত্তম সময় হলো ফজরের আজানের ২৫ বা ৩০ মিনিট আগে। এই সময়ে সাহরি খাওয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, সে ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করতে সক্ষম হবে। 

সাহরির জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার বা অনেক কিছু থাকা জরুরি নয় এবং পেট ভরে খাওয়াও আবশ্যক নয়, সাহরির নিয়তে খেজুর বা এক ঢোক পানি খেলেও সাহরির সুন্নত আদায় হবে। তবে কেউ যদি সাহরি না খেয়েই রোজা রাখার নিয়ত করে তবু তার রোজা সহিহ হবে; কিন্তু সে সাহরির বরকত থেকে বঞ্চিত হবে। (বাদায়েউস্ সানাইয়ে ২/২৬৬, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১৯৫).

রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা সাহরি খাও, কেননা সাহরি খাবারে বরকত রয়েছে। (বুখারি শরিফ, হাদিস নং ১৯২৩, মুসলিম শরিফ, হাদিস নং ১০৯৫).

হাফেজ জ ইবনে হাজার (রহ.) লিখেছেন, সাহরি খাওয়া নানাভাবে বরকত বয়ে আনে, সাহরি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহর অনুসরণ, আহলে কিতাবদের বিরোধিতা, রোজা রাখাতে সহায়তা, ক্ষুধার কারণে বদ মেজাজ প্রতিরোধ, সাহরির সময় খাবার খেলে শেষ রাতে দোয়া-মোনাজাতের সুযোগ হয় ও অসহায়দের সাহায্য করা বা সঙ্গে বসিয়ে সাহরি খাওয়ানোর সুযোগ পাওয়া যায়। (ফাতহুল বারী-৪/১৪০).

যারা সাহরি খায় তাদের ওপর আল্লাহতায়ালা রহমত বর্ষণ করেন। হাদিস শরিফে এসেছে, সাহরিতে বরকত রয়েছে, তোমরা তা পরিহার কর না; এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরি গ্রহণ কর। কেননা যারা সাহরি খায়, আল্লাহতায়ালা তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ১১০৮৬ ও ১১৩৯৬)

রোজার বিধান শুধু এই উম্মতের জন্য নয়, পূর্ববর্তী উম্মতের জন্যও রোজার বিধান ছিল। তবে আমাদের রোজা ও আহলে কিতাবদের রোজার মাঝে সাহরি একটি বিশেষ পার্থক্য। ইহুদি-খ্রিস্টানদের জন্য রাতে ঘুমানোর পর সাহরি খাওয়া হারাম ছিল, তেমনিভাবে ইসলামের শুরুতে মুসলমানদের জন্যও ছিল একই নিয়ম। কিন্তু পরে তা মুসলমানদের জন্য জায়েজ হয়ে যায়। তাই সাহরি খাওয়া মুসলমানদের অনন্য বৈশিষ্ট্য, সঙ্গে আল্লাহ প্রদত্ত মহান নেয়ামতের শুকরিয়াও আদায় হচ্ছে এবং আহলে কিতাবদের বিরোধিতাও হচ্ছে। 

হাদিস শরিফে এসেছে রসুলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেন, আমাদের রোজা ও আহলে কিতাবদের রোজার মাঝে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া। (মুসলিম শরিফ, হাদিস নং ১০৯৬)। 

এই সব হাদিস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, সাহরি খাওয়া সুন্নত ও বরকতময়। আর ইচ্ছাকৃতভাবে তারাবির পর খাবার খেয়ে শুয়ে পড়া এবং সাহরি ত্যাগ করা শুধু রসুলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাত পরিপন্থি নয় বরং ইহুদি-খ্রিস্টানদের অনুসরণ বটে। তাই সুন্নত হচ্ছে পরিমিত সাহরি খাওয়া।

পরিমিত সাহরি খাওয়া :- ইসলাম ধর্ম মধ্যপন্থা পছন্দ করে, সাহরি বাদ দেওয়া ইসলামে গ্রহণীয় নয়, সাহরিতে রোজার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তাকওয়ার কথা ভুলে যাওয়াও ভালো কাজ নয়। একদিকে সাহরি খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু মানুষ বাড়াবাড়িতে লিপ্ত। একেবারে ফজরের আজান পর্যন্ত সাহরিতে ব্যস্ত থাকে। রমজানের শেষ রাতের মতো মূল্যবান সময়ও আল্লাহর দরবারে দোয়া-মোনাজাত ও তাহাজ্জুদের প্রতি লক্ষ নেই। 

অন্যদিকে কিছু মানুষ আবার ছাড়াছাড়িতে ব্যস্ত। শেষ রাতে ঘুম থেকে ওঠার ভয়ে তারাবিহর পরই খাবার খেয়ে রোজার নিয়তে শুয়ে পড়ে। ইসলামে বাড়াবাড়িও নেই, ছাড়াছাড়িও নেই। ইসলাম ভারসাম্যপূর্ণ ধর্ম। যেমনভাবে শেষ রাতে ঘুম থেকে ওঠার ভয়ে তারাবিহর পর খাবার খেয়ে শুয়ে পড়া ইসলাম পছন্দ করে না। তদ্রুপভাবে শেষ রাতের মতো মূল্যবান সময়কে শুধু সাহরিতে কাটিয়ে দেওয়াও পছন্দ করে না। পরিমিত সাহরি খেয়ে তাহাজ্জুদ ও দোয়া-মোনাজাতে ব্যস্ত থাকাই একান্ত কাম্য। 

এছাড়াও একটি সাধারণ ভুল হলো, কেউ সাহরি মিস করলে, সেদিন রোজাই ছেড়ে দেয়। সাহরি খাওয়া শুধু সুন্নত, রোজার শর্ত নয়। সাহরি মিস করা রোজা কাজা করার জন্য শরয়ি অজুহাতও নয়। তাই সাহরি মিস করার কারণে রোজা ভঙ্গ করা আদৌ উচিত নয়, বরং সাহরি না খেয়েই রোজা রাখা জরুরি ও ফরজ। 

আমাদের সমাজে আরও একটি সাধারণ ভুল হলো, প্রায়শই সাহরি খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে, ফজরের নামাজের প্রতি লক্ষ নেই। অনেকেরই ফজরের নামাজ ছুটে যায়, নামাজের জামাত তো ছুটেই। এজন্য সাহরি খেয়ে কখনো শুয়ে পড়বে না, ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমাতে যাবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের মাহে রমজানের যথাযথ মূল্যায়ন করা এবং ইসলামের মধ্যপন্থার চেতনা অনুযায়ী আমলগুলো উন্নত করার তওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : সিনিয়র শিক্ষক,মদিনাতুল উলুম মাদরাসা, বসুন্ধরা, ঢাকা।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম