
নিজস্ব প্রতিনিধি
০৯ মার্চ, ২০২২, 3:55 PM

সমন্বয়হীনতাই চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ
বাংলাদেশের বানিজ্যিক রাজধানী এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ঢাকার পরেই দেশের জাতীয় অগ্রগতির প্রধানতম নগরী,তাই চট্টগ্রামের উন্নয়ন এর দায়িত্ব স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দেখেন। কিন্তু নানান কারণে বা দাফতরিক সমন্বয় না থাকার কারণে সরকারের গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ ও নকশার জটিলতা, সমন্বয়হীনতা, দক্ষ জনশক্তির না থাকা এবং কাজের ধীর গতির কারণে সুফল মিলছে না সহসা। চলমান মেগাপ্রকল্পের অধীনে নগরীর ৪০টি খালের মুখে রেগুলেটর স্থাপনের কাজ চলছে এই খালগুলোর মধ্যে ২৩টির প্রবাহ হয় কর্ণফুলী নদীতে ও ৩টির হালদা নদীতে এবং ১৪টির প্রবাহ বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। রেগুলেটরের ভৌত কাজের জন্য এসব খালের মুখে বাধ দেওয়া হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমের আগে মাত্র ৫টি রেগুলেটর কার্যকর করা সম্ভব হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া বর্ষা ও জোয়ারের পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে নগরীর ৩৬টি খাল খনন, সংস্কারের কাজ চলছে। ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতায় ১৮টি খালের কাজ শেষ হচ্ছে না। ২০১৭ সালের আগস্টে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে 'চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন' প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। ২০১৮ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের বড় বাধা ভূমি অধিগ্রহণ। অনুমোদনের সময় ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ ছিল দেড়গুণ যা আইন সংশোধন পরবর্তীতে তিন গুণ নির্ধারণ করা হয়। তাই প্রকল্পের নির্ধারতি ৬ হাজার ৫১৬ কাঠা ভূমির মধ্যে মাত্র ৩০০ কাঠা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এই জটিলতায় নগরীর মির্জাখাল, ত্রিপুরাখাল, গয়নাছড়া খাল, ডোমখালী খাল, মহেশখাল, চাক্তাইখাল, চাক্তাই ডাইমেনশন খাল, হিজড়া খাল, বদরখাল, নোয়াখাল, শিতলঝর্ণা খাল, চশমাখালসহ ১৮টি খালের খনন, সম্প্রসারণ ও সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হয়নি। ফলে সহজেই শহর থেকে পানি নামবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। খালের পাড়ের মোট ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ১৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার সম্পন্ন হয়েছে। পাহাড়ি বালু আটকানোর জন্য ৪২টি সিলট্র্যাপের মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে ১৫টির। সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড সূত্রে জানা যায় "প্রকল্পের আওতায় মরিয়মবিবি, কলাবাগিচা, টেকপাড়া, ফিরিঙ্গিবাজার ও মহেশখালের মুখের রেগুলেটর চলতি বর্ষার আগেই কার্যকর করা যাবে।" এবং ইতিমধ্যেই বিদেশ থেকে রেগুলেটর এবং গেট আনা হয়েছে। এছাড়া বর্ষার আগেই সবকটি খাল থেকে মাটি অপসারণ করা হবে যেন পানি প্রবাহে সমস্যা না হয়।" ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল দুই হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে 'কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ' প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। সিডিএর প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর, দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার চাক্তাই, খাতুনগঞ্জসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার জলবদ্ধতা নিরসনে ১২টি খালের মুখে রেগুলেটর ও পাম্প হাউজ স্থাপনের কথা রয়েছে প্রকল্পের অধীনে। এরমধ্যে ১০টি খালের কাজ চলছে। তবে চলতি বর্ষা মৌসুমের আগে রেগুলেটর এবং খালগুলো কার্যকর করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাস বলেন, "কোভিড পরিস্থিতি এবং অর্থ সংকটের কারণে কাজ ব্যহত হচ্ছে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় বিষয়গুলো জানানো হয়েছে। ২০১৪ সালের ২৪ জুন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পেলেও প্রায় সাত বছর ধরে ঝুলে থাকা প্রকল্পটি গত বছরের ২৭ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়। ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হলেও ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় ভৌত কাজ শুরুই হয়নি। প্রকল্প পরিচালক চসিক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরহাদুল আলম বলেন, জমি বুঝে পেতে আরো মাস ছয়েক লাগবে। এরপর খাল খননের কাজ শুরু হবে।