
NL24 News
০২ আগস্ট, ২০২৫, 12:42 PM
সন্দ্বীপের ইউএনও মংচিংনু মারমার প্রথম মাস: জনবান্ধব কাজে মানুষের আস্থা
কেফায়েত উল্লাহ কায়সার : সন্দ্বীপ বাংলাদেশের একটি প্রাচীন দ্বীপাঞ্চল, ঐতিহ্যে গৌরবময় হলেও দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন ও প্রশাসনিক সেবার ক্ষেত্রে অবহেলার শিকার। এমন বাস্তবতায় সদ্য যোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মংচিংনু মারমা দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম মাসেই যে ধরনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা শুধু সন্দ্বীপ নয় প্রান্তিক ও দুর্গম অঞ্চলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার একটি সম্ভাবনা জায়গা তৈরি হয়েছে। ৪ জুলাই সকালে বৈরী আবহাওয়ায় সাগর পাড়ি দিয়ে সন্দ্বীপে আগমন এবং এর কয়েকদিন পর কাদা মাড়িয়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় উড়িরচরে গিয়ে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন ও হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যোগদান—এটি নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং একজন দায়িত্বশীল প্রশাসকের কর্তব্যবোধের প্রকাশ। এই একটি ঘটনায়ই বোঝা যায়, তিনি মাঠপর্যায়ে থেকে মানুষের পাশে থাকতে প্রস্তুত।
সন্দ্বীপে তাঁর দায়িত্বগ্রহণের পরের সময়টি ছিল কর্মকাণ্ডে ঠাসা—ভূমি অফিসে দালালচক্রের বিরুদ্ধে অবস্থান, ২৮৪টি রহস্যজনক মহিষের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও উন্নয়ন তদারকি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ—সব মিলিয়ে তাঁর প্রশাসনিক দৃষ্টি যে সর্বত্র বিস্তৃত, তা স্পষ্ট। এ ছাড়া, ফেরি চলাচলে মাছ ধরার জালের বাধা দূরীকরণে বাস্তবভিত্তিক সমাধান, জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় স্পিডবোট অনুমতি, পরিচ্ছন্নতা অভিযান, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ—এসব পদক্ষেপ তাঁকে একজন গতিশীল, দায়িত্বশীল ও মানবিক প্রশাসকের পরিচয় দিয়েছে। ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত আইন-শৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে শতভাগ নিশ্চিতকরণ, গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ, অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, উন্নয়ন প্রকল্পে জবাবদিহিতা—
এসব বিষয় তাঁর শাসনব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গিকে নাগরিকবান্ধব ও অংশগ্রহণমূলক করে তুলেছে। একজন ইউএনও এক মাসেই কতটা প্রভাব ফেলতে পারেন—সন্দ্বীপের এই অভিজ্ঞতা তার প্রমাণ। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ ও কর্মতৎপরতায় যদি জনপ্রতিনিধি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ জনগণ একসঙ্গে এগিয়ে আসে, তবে সন্দ্বীপ শুধু সম্ভাবনাময় দ্বীপই থাকবে না, বাস্তব উন্নয়নের একটি রোল মডেলে পরিণত হতে পারে। মংচিংনু মারমার এ ধরনের নেতৃত্ব স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় একটি আশার আলো। তবে, প্রশ্ন থাকে—এই গতিশীলতা কতদিন থাকবে? প্রশাসনিক বদল বা রাজনৈতিক চাপ কি একে স্তব্ধ করবে?
আমরা চাই, এই ধরনের সুশাসন ও মানবিকতা বছরজুড়ে বজায় থাকুক। কেন্দ্রীয় প্রশাসন থেকেও এমন কর্মকর্তাদের উদ্যোগকে উৎসাহিত ও রক্ষা করতে হবে। তাহলে সত্যিকার অর্থে জনগণের কাছে প্রশাসন হয়ে উঠবে ‘জনগণের সেবা প্রদানে নিয়োজিত একটি প্রতিষ্ঠান’—কথার চেয়ে বাস্তবের প্রতিচ্ছবি। আর তখন জনবান্ধব প্রশাসন জনমানুষের আস্থার প্রতীকে পরিণত হবে।