ঢাকা ১৯ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
জাতীয় ট্যালেন্ট হান্ট ক্রিকেটে সাপাহারের ২ শিক্ষার্থী স্বর্ণের দামে বড় পতনের পূর্বাভাস আগামীকাল সচিবালয়ে বিক্ষোভের ঘোষণা ১১ মাসে রাজস্ব আদায় ৩ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা: এনবিআর দেশে ফিরেছেন ২৯ হাজার ৭৩ হাজি ঈদযাত্রার ১২ দিনে সড়কে ঝরল ৩১২ প্রাণ নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন চান রিজভী জনসংযোগ-নিরাপত্তার মিশ্রণে দায়িত্ব পালনে এসএসএফের সদস্যদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান সন্ধ্যায় হাসপাতালে যাবেন খালেদা জিয়া বন্দর নবীগঞ্জে পাষণ্ড স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন

সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিলিন জমিদার ভৈরব চন্দ্র সিংহ বাড়ি

#

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫,  3:18 PM

news image

চান্দিনায় কালের স্বাক্ষী হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে ভবন

সোহেল রানা: ‘জমিদার’। শব্দটির মধ্যে এক ধরণের আভিজাত্য নিহত। মধ্যযুগীয় বাংলার অভিজাত শ্রেণির ভূমি অধিকারীদের পরিচয়ের জন্য নাম হিসেবে শব্দটি ঐতিহাসিক পরিভাষার অন্তর্ভুক্ত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে প্রবর্তিত এক প্রকার ভূমি ব্যবস্থাপনার নামই হচ্ছে জমিদারি প্রথা। এক একটি পরগনা বা অঞ্চলের জমিদাররা তাদের আওতাধীন নিজ এলাকার খাজনা আদায় করে জমিদারি প্রথা পরিচালনা করতেন। কালের বিবর্তনে জমিদারি বিলুপ্ত হলেও তাদের ঐতিহ্যমন্ডিত সেই বাড়িঘরগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আছে।ঠিক তেমনই একটি বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল গ্রামের জমিদার ভৈরব চন্দ্র সিংহ বাড়ি। প্রায় ৮০ বছর আগে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলেও মহিচাইল-পরচঙ্গা পাকা সড়কের পাশে কালের স্বাক্ষী হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে জমিদার ভৈরব চন্দ্র সিংহের স্মৃতি বিজরিত ‘জমিদার বাড়ি’।প্রায় একশ বছর আগে ১৩৩১ বাংলা সনে ইট, পাথর, সিরামিক, চুন, সুরকি ও লোহা দ্বারা তিনতলা বিশিষ্ট জমিদার ভৈরব সিংহের বাসভবন।

বাড়িটির প্রতিটি দেয়ালের অপরূপ সৌন্দর্য্যের নকশা যেন বর্তমান সময়ের জিপসাম নকশাকেও হারমানায়। সামনের অংশগুলোতে সিরামিক এর খন্ডাংশের সুনিপুন কারুকাজে স্পষ্টই অনুমেয় জমিদারের রুচিশীল বিলাসী জীবনের নমুনা। প্রতিটি কক্ষেই জমিদারের চিহ্ন বহন করে। জমিদারের মূল বাড়ির দোতলার একটি কক্ষের কারুকাজ এবং দেয়ালের নকশায় জানান দিচ্ছে যেন জমিদারের 'জলসা বিলাস'। রয়েছে অতিথিশালা। উপর তলায় উঠার প্রবেশদ্বারের সিংহ দরজারটির সিংহ ভাস্কার্যের নেই কোন অস্তিত্ব। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পাথরের উপর রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্য, বেশ কিছু মূল্যবান পাথরসহ আরো কিছু তৈজসপত্র।জমিদারের বিশাল আকৃতির ঐতিহ্যবাহী এই বাড়িটি অযত্ন অবহেলায় খয়ে-খয়ে পড়ছে। তিনতলা ভবনটির উপর থেকে ধ্বসে এখন দেড় তলায় আটকে আছে!

ভবনটির দরজা জানালা নেই বললেই চলে। পরিত্যক্ত কক্ষগুলোতে এখন অদরকারী অপ্রয়োজনীয় মালামাল রাখার উপযুক্ত স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাড়িটির ছাদের অবস্থাও নাজুক। সামান্য বৃষ্টির পানিও চুইয়ে পড়ে কক্ষগুলো ভাসিয়ে দেয়। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাসা বেঁধেছে অনেক পরগাছা। তবে এই বাড়িটিই মনে করিয়ে দেয় ভৈরব চন্দ্র সিংহের জমিদারি প্রথার গল্প। পরিবারের কিছু প্রবীন লোক মুখে জমিদারের অনেক জীবন-কাহিনি বর্তমান প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্পের মত। নানা শিল্পকর্মে নির্মিত এই জমিদার বাড়িটি রক্ষায় আজও এগিয়ে আসেনি কেউ।প্রায় ৯৫ বছর আগে চার পুত্র সন্তান রেখে জমিদার ভৈরব চন্দ্র সিংহ মারা যাওয়ার পর কেউ ধরে রাখতে পারেনি জমিদারের বিশাল সাম্রাজ্য। জমিদারের নাতি অন্যের মিষ্টি দোকানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করার মতোও নিদারুন ঘটনা রয়েছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে। জানা যায়,

বাংলার বর্ষপঞ্জির হিসাব মতে জমিদার ভৈরব চন্দ্র সিংহ ১২৫৯ সালে মহিচাইল গ্রামের সিংহ বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। জমিদারি প্রথা চলাকালীন সময়ে তিনি মাধাইয়া থেকে মহিচাইল সড়ক নির্মাণ করেন। নিজের বাড়ির কাছে তৎ সময়ে খনন করেছিলেন বিশাল দিঘি। কথিত আছে, ওই দিঘি খননকালে মাটি কাটার শ্রমিকরা পাাশের যে গর্তের পানিতে কোদাল ধুইতেন, সেই কোদাল ধোয়ার গর্তটি একটি পুকুরে পরিণত হয়। যারপর থেকে ওই পুকুরটি কোদাল ধোয়া পুকুর হিসেবে জনশ্রুতি রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার আগেই ১৩৩৬ বাংলা সনে পরলোক গমন করেন জমিদার ভৈরব চন্দ্র সিংহ। তাঁর অবর্তমানে কেউ জমিদারি চেয়ারে বসতে পারেননি। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে জমিদারের বিশাল সাম্রাজ্য হাত ছাড়া হতে শুরু করে।

তারই মাঝে মহিচাইল বাজার সংলগ্ন এলাকায় এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় গড়ে উঠা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মহিচাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভূমি দান রয়েছে জমিদার ভৈরব চন্দ্র সিংহের পরিবারের। জমিদারের ছেলেদের পর নাতিরাই কষ্টে দিনাতিপাত করার ঘটনা রয়েছে। এ যেন ‘সকালের রাজা, বিকালের ভিখারীর’ গল্পের মতো।তাঁর চার পুত্র সন্তান। যথাক্রমে জামিনী কান্তি সিংহ, জগৎ চন্দ্র সিংহ, কামিনী কান্ত সিংহ ও হলধর সিংহ। তাদের মধ্যে জগৎ চন্দ্র সিংহ ও কামিনী কান্ত সিংহ এর কোন ওয়ারিশ নেই। বড় সন্তান জামিনী কান্ত সিংহ এর সন্তান অর্থাৎ জমিদার ভৈরব সিংহের নাতি নারায়ণ চন্দ্র সিংহ অত্যন্ত কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তবে অপর ছেলে হলধর চন্দ্র সিংহ এর ছেলে ভূষণ চন্দ্র সিংহ সরকারি চাকুরী করে অবসরে আছেন।

তার সন্তানরাও উচ্চ শিক্ষিত হয়ে ঢাকায় চাকুরী করার সুবাদে তিনি এখন ঢাকায় থাকেন।জমিদার ভৈরব চন্দ্র সিংহ এর পরিবারের সদস্য মহিচাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সমর চন্দ্র সিংহ জানান, মহিচাইল জমিদার বাড়ি এখন শুধুই নামে। জমিদারের রেখে যাওয়া শেষ স্মৃতি নিজের বাস ভবনটি ছাড়া তেমন কিছুই নেই। বিগত সময়ে অনেক সংবাদ কর্মীরা জমিদার বাড়ির স্মৃতি চিহ্ন রক্ষায় অনেক নিউজ করেছেন। কিন্তু কার্যত কোন কিছুই হয়নি। পরিবারের লোকজনেরও তেমন সামর্থ নেই ঐতিহ্য রক্ষা করার। সরকারের তরফ থেকে ‘জমিদার বাড়ি’ রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করলে পরবর্তী প্রজন্মও জমিদার ও জমিদারি প্রথা সম্পর্কে অনেক কিছু জানার সুযোগ থাকবে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লা বিভাগের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক একেএম সাইফুর রহমান জানান, চলতি মাসেই চান্দিনাতে আমাদের জরিপ চলবে। ওই জরিপকালীন সময়ে পরিদর্শণ করে কি ধরণের ব্যবস্থা নেয়া যায় তা নিয়ে আমরা কাজ করবো। 

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম