
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৫ এপ্রিল, ২০২৩, 10:32 AM
রাশিয়ায় ডলারকে হটিয়ে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের আধিপত্য
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ নামে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এরপর রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো ধারাবাহিকভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করে। সুইস ব্যাংক থেকে বিদেশে থাকা রাশিয়ার সব ধরনের লেনদেন বা ব্যাংক হিসাবগুলোকে জব্দ করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রথমে কিছুটা বেগ পেলেও পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে তা সামলে নেয় দেশটি। অর্থনীতির গতি সচল রাখতে মিত্র দেশ চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক পরিসর বাড়ায় রাশিয়া। বিনিময় মাধ্যম হিসেবে নিজস্ব মুদ্রাকেই প্রাধান্য দেয় দুই দেশ। এতে সুফলও মেলে। ফলে এক বছরের মধ্যে রাশিয়ার বাজারে লেনদেনের হিসাবে ডলারকে সরিয়ে শীর্ষে উঠে আসে চীনা মুদ্রা ইউয়ান।
মার্কিন সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন বলা হয়েছে, মস্কো এক্সচেঞ্জের দৈনিক লেনদেন হিসাবের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো মাসওয়ারি লেনদেনে ডলারের তুলনায় এগিয়ে ছিল ইউয়ান। মার্চে এ ব্যবধান আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ইউক্রেনে আক্রমণের আগে, রুশ বাজারে ইউয়ান লেনদেনের পরিমাণ ছিল অতি নগণ্য। তবে এখন সেটি অতীত, আগের সব হিসাব ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে মুদ্রাটি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। এ ঘটনায় পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কে চিড় ধরে। যুদ্ধ প্রশ্নে পুরো বিশ্ব আক্ষরিক অর্থেই বিভক্ত হয়ে পড়ে। অস্ত্রের যুদ্ধ বাইরেও শুরু হয় আরেক যুদ্ধ। সে যুদ্ধে অস্ত্র নয়, হাতিয়ার অর্থনীতি। তবে জ্বালানি শক্তির প্রাচুর্য থাকায় পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক যুদ্ধ তেমনটা ফলপ্রসূ হয়নি। উল্টো জ্বালানি সরবরাহকে হাতিয়ার করে পশ্চিমা দেশগুলোকে চরম শিক্ষা দিয়েছে রাশিয়া। বিষয়টিকে ‘জিরো সাম গেম’ বলে অভিহিত করেছেন বিশ্লেষকরা। রাশিয়াকে চাপ প্রয়োগ করতে গিয়ে লাভের লাভ কিছু হয়নি, বরং বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। এ সময় চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হয় দেশটির। গত মাসে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং প্রথমবারের মতো মস্কো সফর করেন। ক্রেমলিনকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সাপ্লাই চেইন, মেগা প্রকল্প, জ্বালানি ও হাই-টেক খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন তিনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, আর্থিক ব্যবস্থায় পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় ক্রেমলিন ও রুশ কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলার ও ইউরোর পরিবর্তে ভিন্ন মুদ্রা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। এক্ষেত্রে এমন দেশগুলোর মুদ্রা ব্যবহার করছে, যারা পশ্চিমাদের বিধি-নিষেধে সমর্থন দেয়নি। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় বছরের শুরুর দিকে ডলারের পরিবর্তে বাজারের লেনদেন ইউয়ানে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি জাতীয় সম্পদ তহবিলের জন্য একটি নতুন কাঠামো তৈরি করে। যেখানে দেশটির সম্পদের ৬০ শতাংশ ইউয়ানে রূপান্তর করা যায়। রাশিয়ার ব্যাংক নিয়মিতভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের সম্পদ রুবল বা মিত্র দেশগুলোর মুদ্রায় রূপান্তরের আহ্বান জানায়। যাতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়ানো যায়। ব্লুমবার্গের তথ্য বলছে, এসব কিছুর পরও রাশিয়ার বাজারে ডলার এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় মুদ্রা হিসেবে রয়ে গেছে। লেনদেন হিসাবে আয়তনের দিক থেকে ইউয়ানের তুলনায় খুব বেশি পিছিয়ে থাকে না আন্তর্জাতিক বিনিময় মুদ্রাটি।বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, যদিও রাশিয়ায় ইউয়ানের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, কিন্তু চীনের মূলধন হিসাব ব্যবস্থাপনা ও বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগগুলো একটি প্রতিবন্ধকতা। বেইজিং আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেদের মুদ্রার লেনদেন বিস্তৃত করতে চায়। অথচ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্যানুযায়ী, গত বছরের শেষের দিকে বৈশ্বিক মুদ্রা রিজার্ভের প্রায় ২ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল ইউয়ানে, যা প্রথম প্রান্তিকের ২ দশমিক ৯ শতাংশের তুলনায় কম। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক করপোরেট পরিষেবা সংস্থা আইটিআই লন্ডনের স্ট্র্যাটেজিস্ট ইস্কান্দার লুৎস্কো বলেন, “এখন রাশিয়ার বাজারে ডলারের সংখ্যা কম। কেননা জ্বালানি তেলের দাম এবং রফতানি কমে যাওয়ায় রাশিয়ার আয় কমেছে। একই সময়ে রাশিয়া থেকে চীনে পণ্য আমদানি বেড়েছে ২৯ শতাংশ, যদিও চীন থেকে রফতানি স্থিতিশীল রয়েছে।” সূত্র: ব্লুমবার্গ