ঢাকা ১৮ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
সোনারগাঁয়ে বেরিবাঁধ থেকে যুবকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ শপথ ভেঙেছেন: ইশরাক সাভারে অসহায় বিধবা নারীকে আর্থিক সহায়তা দিলেন বিএনপি নেতা খোরশেদ আলম ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তৃনমূল দ্বায়ীত্বশীলদের সাথে পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত জুলাইয়ের মধ্যেই 'জুলাই সনদ' তৈরি করতে পারবো: আলী রীয়াজ ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে যোগ দেয়নি জামায়াত সাগরে তৈরি হচ্ছে বজ্রমেঘ, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত একাত্তরে ৫ রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যা করা মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম আর নেই সচিবালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত ইরানের শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের

রমজানুল মোবারকের প্রস্তুতি

#

৩১ মার্চ, ২০২২,  4:30 PM

news image


অধ্যক্ষ কাজী মোঃ আবদুল হান্নান 

রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের দুই মাস আগে থেকেই রমজান লাভের দোয়া করতেন—‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ) নিঃসন্দেহে এই দোয়া ছিল রমজানের জন্য নবীজি (সা.)-এর মানসিক প্রস্তুতি। উল্লিখিত হাদিসের আলোকে বুজুর্গ আলেমরা বলেন, ‘রজব হলো বীজ রোপণের মাস, শাবান পানি সিঞ্চনের মাস আর রমজান ফসল ঘরে তোলার মাস।’ নিম্নে রমজানের প্রস্তুতিমূলক কিছু কাজের বিবরণ তুলে ধরা হলো।

প্রস্তুতি গ্রহণের সর্বোত্তম সময় : হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, মুমিন রজব মাস থেকে রমজানের প্রস্তুতি শুরু করবে। তবে যারা রজব থেকে শুরু করতে পারেনি, তাদের জন্য সর্বোত্তম সময় শাবান মাস। মহানবী (সা.) শাবান মাসের ব্যাপারে যারা উদাসীন তাদের সতর্ক করেছেন। উসামা বিন জায়িদ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘...রাসুল (সা.) বলেন, রমজান ও রজবের মধ্যবর্তী এ মাসের ব্যাপারে মানুষ উদাসীন থাকে। এটা এমন মাস, যে মাসে বান্দার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমি চাই, আল্লাহর কাছে আমার আমল এমন অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার।’ (সুনানে নাসায়ি)

বেশি বেশি রোজা রাখা : শাবান মাসে মহানবী (সা.) অধিক পরিমাণে রোজা রাখতেন। সুতরাং মুমিন ব্যক্তি রোজা রেখে রমজানের প্রস্তুতি নিতে পারেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে রমজান ছাড়া কোনো মাসে পুরো মাস রোজা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা পালন করতে দেখিনি।’ (সহিহ বুখারি)

বিশেষ করে কারো যদি বিগত রমজানে কোনো রোজা কাজা হয়ে থাকে তা আদায় করে নেওয়া উত্তম। তবে মনে রাখতে হবে, নবীজি (সা.) রমজানের এক বা দুই দিন আগে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। (সহিহ বুখারি)

কাজ গুছিয়ে রাখা : রমজান ইবাদতের মাস। তাই রমজানের আগেই যদি পারিবারিক, ব্যাবসায়িক ও পেশাগত কাজগুলো গুছিয়ে রাখা যায়, তবে রমজানে অধিক সময় ইবাদতে মগ্ন থাকা যাবে। বিশেষত নারীরা সাংসারিক কাজ গুছিয়ে রাখলে তাঁরা ইবাদতে বেশি সময় দিতে পারবেন।

জাকাত ও দানের প্রস্তুতি : মহানবী (সা.) রমজানে বেশি বেশি দান করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজানে তিনি আরো অধিক দানশীল হতেন, যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস) তাই রমজানে দানের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। যদিও জাকাত প্রদানের নির্ধারিত কোনো মাস নেই। তবু আলেমরা বলেন, রমজানে জাকাত আদায়ের মাধ্যমে ব্যক্তি অধিক সওয়াবের অধিকারী হতে পারেন।

কোরআন পাঠ ও তাহাজ্জুদ : রমজানে মহানবী (সা.)-এর দুটি প্রিয় আমল ছিল কোরআন তিলাওয়াত ও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা। রমজানে নবীজি (সা.) তাঁর পরিবারকে তাহাজ্জুদের জন্য ডেকে দিতেন। আর আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রমজানের প্রতি রাতেই জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন এবং তাঁরা পরস্পরকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন।’ (সহিহ বুখারি)

চাঁদের হিসাব রাখা : রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে শাবান মাসের চাঁদের হিসাব রাখতেন এবং অন্যদের উৎসাহিত করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের খুব হিসাব করতেন। এ ছাড়া অন্য কোনো মাসের এত হিসাব করতেন না। এরপর রমজানের চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন। আকাশ মেঘলা থাকার কারণে চাঁদ দেখা না গেলে শাবান মাস ৩০ দিনে গণনা করতেন, অতঃপর রোজা রাখতেন। ’ (সুনানে আবু দাউদ)

প্রস্তুতি কেন নেব : রমজান মাসকে অধিক ফলপ্রসূ করতে রমজানের আগে প্রস্তুতি নেওয়ার কারণ হলো—নিজেকে ইবাদত-বন্দেগি ও সাধনার জন্য প্রস্তুত করা। যেন রমজানের আগেই আলস্য দূর হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য আল্লাহর তাওফিক লাভ করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আমার উদ্দেশে চেষ্টা-সংগ্রাম করে আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)

আল্লাহ সবাইকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দিন। আমিন।


logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম