
NL24 News
০৩ মার্চ, ২০২৫, 10:43 AM

রমজানুল মুবারক কল্যাণের ভান্ডার
সিয়াম সাধনার মাস রমজানুল মুবারক। হৃদয় প্রশান্তিকর একটি নাম। এগারো মাস অপেক্ষা শেষে মুমিনের কাঙ্ক্ষিত একটি মাস। চাতক পাখির মতো অপেক্ষার প্রহর গুনে যে মাসের জন্য প্রতিটি মুমিন হৃদয়। রমজানুল মুবারকের কথা ভাবতেই হৃদয়জুড়ে এক স্নিগ্ধ সমীরণ বয়ে যায়। কল্যাণের অফুরন্ত ভান্ডার নিয়ে আসা রমজান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার ওপর আসা শ্রেষ্ঠ নেয়ামতগুলোর অন্যতম।
রমজানের পরিচয়
কোরআন মাজিদে ও হাদিস শরিফে রমজান মাসের পরিচয় দেওয়া হয়েছে চমৎকারভাবে। পবিত্র কোরআন মাজিদে রমজানের পরিচয় দিতে গিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
রমজান মাস হলো সেই মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে। (সুরা বাকারা: ১৮৫)।
হাদিস শরিফে রমজান মাসের পরিচয় দিতে গিয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কাছে রমজান মাস এসেছে, যে মাসটি আদ্যোপান্ত বরকতে পরিপূর্ণ। (সুনানে নাসায়ী- ২১০৬)।
রমজান মাসে করণীয়
রমজান মাসের মৌলিক করণীয় দুটি। এক. দিনের বেলায় সিয়ামসাধনা তথা রোজা রাখা। দুই. রাতের বেলায় কিয়ামুল লাইল তথা তারাবিহর নামাজ পড়া।
পবিত্র কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের মধ্যে কেউ রমজান মাস পেলে সে যেন রোজা রাখে। (সুরা বাকারা : ১৮৫)।
রোজা মানে হচ্ছে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকা। রমজান মাসে রোজা রাখা ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি।
১. আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রসুল- এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা।
২. সালাত কায়েম করা।
৩. জাকাত আদায় করা।
৪. হজ সম্পাদন করা এবং
৫. রমজানের সিয়ামব্রত পালন করা (রোজা রাখা)। (সহিহ বুখারি : ৮)।
রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ হচ্ছে রাতের বেলায় জামাতের সঙ্গে ২০ রাকাত তারাবিহর নামাজ পড়া। হজরত সালমান ফারসি (রা.) বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ রমজানে দিনের বেলায় সিয়ামসাধনা তথা রোজা রাখাকে ফরজ করে দিয়েছেন আর রাতের বেলায় তারাবিহকে তাতাউ তথা সুন্নাহ সাব্যস্ত করে দিয়েছেন। (সহিহ ইবনে খুজাইমা-১৮৮৭)।
রোজা ও তারাবিহর অনন্য পুরস্কার
রমজানুল মুবারকের মৌলিক দুটো আমল রোজা ও তারাবিহ মুমিনের জীবনে অফুরন্ত কল্যাণ বয়ে আনে। ধুয়েমুছে পাকপবিত্র করে দেয় জীবনপাতা।
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে আল্লাহর রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি রমজানে ইমানসহ পুণ্যের আশায় রোজা রাখে, আল্লাহ তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। আর যে রমজানের রাতে ইমানসহ পুণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে (তারাবিহর নামাজ পড়ে) তার আগের গুনাহ? ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি- ৩৭- ৩৮)।
সাহল ইবনু সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘জান্নাতে আটটি দরজা। তার মধ্যে একটি দরজার নাম হবে রাইয়্যান। সাওম পালনকারী ছাড়া অন্য কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ বুখারি- ৩২৫৭)।
একটি বিশেষ সতর্কবার্তা
রমজানের অফুরন্ত কল্যাণ তাদের ভাগ্যেই জুটবে যারা রোজা রেখে সব ধরনের পাপাচার থেকে বেঁচে থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করে। পক্ষান্তরে রোজা রেখেও যারা মিথ্যা, গিবত তথা হারাম কাজ পরিত্যাগ করে না, তাদের পানাহার বর্জনে কোনো উপকার বয়ে আনবে না।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (সহিহ বুখারি-১৯০৩)।
আসুন পাকপবিত্রতার সঙ্গে গুনাহমুক্ত হয়ে রমজান কাটানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করি। রমজানের সৌরভে সুরভিত হই। আল্লাহ তওফিক দান করুন।
লেখক : খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ টঙ্গী, গাজীপুর।