ঢাকা ২১ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
এ পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন ৩৬ হাজার ৬০১ হাজি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮ সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত এশিয়া কাপ আর্চারিতে সোনা জিতলেন বাংলাদেশের আলিফ পরমাণু ইস্যুতে ‘রেড লাইন’ স্পষ্ট করল ইরান সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ৬ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ ৫ আগস্ট সরকারি ছুটির ঘোষণা আসছে ২৫৩ জনের গুমের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন প্রবাসীরা ফেরার সময় শুল্ক ছাড়াই আনতে পারবেন যে ১৯ পণ্য বাংলাদেশকে দুই প্রকল্পে ৬৪০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘এরিক’

রংপুরে চাঞ্চল্যকর হত্যার ক্লু উদঘাটনসহ গ্রেফতার ২-ভ্যান ও মোবাইল উদ্ধার

#

নিজস্ব প্রতিনিধি

০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২,  8:32 PM

news image

রংপুর জেলার মিঠাপুকুরে চাঞ্চল্যকর ভ্যান চালক মিয়াজান হত্যা মামলার ক্লু উদঘাটনসহ দুই আসামীকে গ্রেফতার করেছে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ। সেই সাথে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত এবং ভিকটিমের ভ্যান ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে। অত্র মামলার ভিকটিম মৃত মিয়াজান মিয়া (৪২) পেশায় একজন ভ্যান চালক। তিনি মিঠাপুকুর গড়ের মাথা-ফুলবাড়ী রাস্তায় নিয়মিত ভ্যান চালাতেন। গত ২০ জানুয়ারী বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৪টায় রংপুর জেলার মিঠাপুকুরের চেংমারী (পশ্চিমপাড়া) গ্রামের মৃত নমির  উদ্দিন পাইকার এর ছেলে ভ্যান চালক মিয়াজান মিয়া (৪২), 

উক্ত ব্যাটারী চালিত ভ্যান নিয়ে বের হয়ে আর বাসায় ফিরে আসে নাই। বাসায় ফিরে না আসলে পরিবারের লোকজন সারারাত খোজাখুজি অব্যাহত রাখেন। পরের দিন ২১ জানুয়ারী সকাল ৭টার দিকে ভিকটিমের লাশ মিঠাপুকুর থানাধীন ৮নং চেংমারী ইউনিয়ন এর রামেশ্বরপুর গ্রামে একটি আম বাগানে গাছের সাথে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। হত্যাকারীরা তাঁর ব্যাটারি চালিত ভ্যান  এবং মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায়। এ ঘটনায় বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ও  প্রিন্ট মিডিয়ায় হত্যাকান্ডটি বেশ গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা হয়। মৃত মিয়াজান মিয়ার স্ত্রী রোমানা বেগম @ লালমাই বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের নামে মিঠাপুকুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন- মামলা নং-২১, তাং- ২১.০১.২২, ধারা-৩৯৪/৩০২/২০১/৩৪  দঃ বিঃ। মিঠাপুকুর থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক হত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং ভিকটিমের হওয়া মোবাইল ফোন এবং ভ্যান উদ্ধারে অভিযানে নামে। এরই ধারাবাহিকতায় রংপুর জেলার  সুযোগ্য পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরীর দক্ষ দিক-নির্দেশনায়, সার্কেল এএসপি মোঃ কামরুজ্জামান পিপিএম-সেবা (মিঠাপুকুর-পীরগঞ্জ), ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোঃ জাকির হোসেনের সরাসরি তদারকিতে অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই এনামুল হক এর সার্বিক প্রচেষ্টায় অন্যান্য অফিসার ফোর্সদের সহায়তায় গতকাল ২ জানুয়ারী দুপুরে  মিঠাপুকুর থানাধীন রামেশ্বরপুর থেকে আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু ওই গ্রামের মোঃ আতিয়ার রহমানের ছেলে 

মোঃ মনিরুজ্জামান @ মনির (১৭) কে আইনের হেফাজতে নেয়া হয়। এ সময় তার কাছ থেকে নিহত মিয়াজান মিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। মনিরের দেয়া তথ্য মতে তার বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মাফলার উদ্ধার করা হয়। মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার দেয়া তথ্যমতে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অপর আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু একই থানাধীন কাশিমপুর সরকারপাড়া গ্রামের মোতালেব হোসেন এর ছেলে মোঃ মেহেদি হাসান @ সানি (১৬), কে তার নিজ বাড়ি থেকে আইনের হেফাজতে নেয়া হয়। এরপর মেহেদির দেয়া তথ্যমতে রংপুরের গঙ্গাচড়া থানাধীন গজঘন্টা ইউনিয়নের একটি গ্যারেজ থেকে নিহত মিয়াজানের ছিনতাই হওয়া ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়। আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশুদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মনিরুজ্জামান এবং মেহেদি হাসান উভয়ই গত ইং ২০২১ সালের  এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তারা খুব ভালো বন্ধু এবং একই সাথে চলাফেরা করে। তাদের কাছে কোন টাকা না থাকায় তারা তাদের সমস্যার কথা প্রতিবেশী (পলাতক আসামী) একই এলাকার মোঃ মুকুল মিয়ার ছেলে মোঃ বুলবুল আহমেদ (২৬) কে জানালে বুলবুল তাদের একটি পরিকল্পনার কথা বলে, তারা যাত্রীবেশি একটি ভ্যান ভাড়া করবে এবং এরপর নির্জন জায়গায় গিয়ে চালকের কাছ থেকে জোরপূর্বক ভ্যান কেড়ে নিয়ে যাবে। এরপর বুলবুল উক্ত ভ্যান বিক্রি করবে এবং এর বিনিময়ে বুলবুল তাদের প্রত্যেককে ৫ হাজার করে টাকা দিবে।

ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী বুলবুল, মেহেদি এবং মনির গত (২০ জানুয়ারী'২২) রাত আনুমানিক ১০টার দিকে মোসলেম বাজারে আসে কিন্তু সব ভ্যান চালক তাদের পরিচিত হওয়ায় তাদের উদ্দেশ্য সফল হচ্ছিল না। তবুও তারা তাদের শিকারের সন্ধানে অপেক্ষা করতে থাকে। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে ভিকটিম মিয়াজান মিয়ার ভ্যানে মেহেদি, বুলবুল এবং মনির যাত্রীবেশে উক্ত ভ্যানে ওঠে পড়ে এবং পাগলারহাটের দিকে যেতে থাকে। এরপর পাগলার হাট আসার আগেই ভরসা কোম্পানিস্থ আমবাগানের পাশে নির্জন জায়গায় আসলে পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বুলবুল তার মাফলার ভিকটিম মিয়াজানের গলায় পেচিয়ে ধরে এবং মিয়াজানসহ ভ্যানটি নিয়ে মুল রাস্তা থেকে ৩০০ মিটার দূরে আমবাগানে নিয়ে যায়। সেখানে গলায় মাফলার পেচিয়ে তিন জন মিলে মিয়াজান কে হত্যা করে।  এরপর তারা মিয়াজানের হাত-পা তারই ভ্যানে থাকা দড়ি দিয়ে আমগাছের সাথে বেধে রাখে। এরপর তারা ভ্যানটি নিয়ে রাতেই রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া থানাধীন গজঘন্টা এলাকায় চলে যায়। পরের দিন ২১ জানুয়ারী তারা ভ্যান বিক্রি করে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। স্বাভাবিক ভাবে ২২ জানুয়ারী তারা মিয়াজানের জানাযাতেও অংশগ্রহণ করে। মিয়াজান এর হত্যাকারীরা গ্রেফতার হওয়ায় নিহত মিয়াজানের পরিবারসহ এলাকাবাসী খুবই খুশি হয়েছেন। পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশুরা স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। 

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম