
নিজস্ব প্রতিবেদক
১১ ডিসেম্বর, ২০২১, 10:51 AM

ভেস্তে গেছে রাজধানীর ওয়াটার বাস প্রকল্প
রাজধানীতে যানজটের চাপ কমিয়ে চারপাশের নদ-নদীগুলোয় প্রাণ ফেরানোর লক্ষ্যে বৃত্তাকার নৌপথে এগারো বছর আগে ঘটা করে চালু হওয়া ওয়াটার বাস প্রকল্প ভেস্তে গেছে। অব্যাহত লোকসানের মুখে ওয়াটার বাস বিক্রি করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। বুড়িগঙ্গার বাদামতলী ঘাট থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত ওয়াটার বাস চলাচল শুরু হয় ২০১০ সালে। নামানো হয় ১২টি ওয়াটার বাস।
এগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে গেছে সাত বছরের বেশি সময় ধরে। বর্তমানে ১২টি ওয়াটার বাসের মধ্যে ৭টি সচল, বাকি ৫টি অচল। সচল সাতটি ওয়াটার বাসের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান চারটি ভাড়া নিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে যাত্রী পারাপার করছে। একটি চট্টগ্রামে বিআইডব্লিউটিসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যবহার করছেন। অপরটি ডকইয়ার্ডে মেরামতাধীন রয়েছে। বাকিগুলো ফেলে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় এসব ওয়াটার বাস বিক্রির জন্য নিলাম বা টেন্ডার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে উসকানির অভিযোগে গ্রেফতার ৫নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে উসকানির অভিযোগে গ্রেফতার ৫ বিআইডব্লিউটিসির সদ্য প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম বলেন, যাত্রীসেবার উদ্দেশে যে নৌপথ নির্মাণ করা হয়েছিল, সেই লক্ষ্য অর্জন না হওয়া, আয়ের কয়েকগুণ বেশি লোকসান হওয়া এবং সামনের দিনগুলোয় এসব ওয়াটার বাস কাজে লাগানোর কোনো সুযোগ না থাকায় এগুলো বিক্রির আলোচনা চলছে তিনি বলেন, ওয়াটার বাসগুলো টেকসই নয়। এগুলোয় লোকসানের পরিমাণ দিনদিন বাড়ছে। এছাড়া নদীতে ছোট নৌযান ও বালুবাহী জাহাজ চলাচল অসুবিধা হওয়ায় ওয়াটার বাস পুরো গতিতে চালানো যাচ্ছে না। ফলে গন্তব্যে যেতে সময় বেশি লাগছে। মানুষ এত সময় নিয়ে ওয়াটার বাসে চড়তে চায় না। বিআইডব্লিউটিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, ওয়াটার বাস চালুর শুরুতে এ নিয়ে ব্যাপক উত্সাহ-উদ্দীপনা দেখা গেলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই সে উত্সাহে ভাটা পড়ে। ল্যান্ডিং স্টেশনে নিরাপত্তার অভাব, নদীপথে চলাচলে নানা প্রতিকূলতা, নদীর পানি দূষণ, ল্যান্ডিং স্টেশন, ওয়ার্কওয়ে, বনায়ন, নদীর পাড়ের সৌন্দর্য বর্ধন ও নৌঘাট থেকে শহরে চলাচলের যানবাহনের ব্যবস্থা না করায় এ উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। সমস্যার কারণে যাত্রী সঙ্কট দেখা দেওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয় ওয়াটার বাস সার্ভিস। এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, কর্তৃপক্ষ সার্বিকতা নির্ভর পরিকল্পনা না করে তড়িঘড়ি করে ওয়াটার বাস ক্রয় করে। এটা ঘোড়ার আগে গাড়ি কেনার মতো ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, ওয়াটার বাস ভাল উদ্যোগ ছিল। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা এটাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেনি। সে কারণে এই প্রকল্প ভেস্তে গেছে। বৃত্তাকার নৌ-পথে সারা বছরই নাব্য থাকে, তবে শুষ্ক মৌসুমে পানি দুর্গন্ধ থাকে। বর্ষা মৌসুমে তো এটা অনেক জনপ্রিয় করে তোলা যায়। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার আগে সামগ্রিক কোনো পরিকল্পনা ছিল না। ফলে এটি এখন সরকারের মন্দ বিনিয়োগে পরিণত হয়েছে। জানা যায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর বৃত্তাকার নৌপথ সচল করতে ১২টি ওয়াটার বাস ক্রয় করে বিআইডব্লিউটিসি। প্রথম দফায় ৩৫ আসনবিশিষ্ট ২টি ওয়াটার বাস ক্রয় করে ১ কোটি ১১ লাখ টাকায়। দ্বিতীয় দফায় ৮৩ আসনবিশিষ্ট ৪টি ওয়াটার বাস ক্রয় করে ৩ কোটি টাকায় এবং সর্বশেষ ৪৬ আসনবিশিষ্ট ৬টি ওয়াটার বাস ক্রয় করে ৫ কোটি টাকায়। পরীক্ষামূলকভাবে শুরুতে ১০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাদামতলী থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত ওয়াটার বাস নামানো হয়। ২০১৩ সালে সবগুলো বাস চলাচল শুরু করে বৃত্তাকার নৌপথে। কিন্তু ওই সময়েই ওয়াটার বাসগুলো লোকসান গুনতে শুরু করে। ফলে ২০১৪ সালে সেগুলোর চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওয়াটার বাস চালুর আগে বৃত্তাকার নৌপথে নতুন করে ১০টি ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণ করার কথা ছিল। একই সঙ্গে এসব ল্যান্ডিং স্টেশনের সঙ্গে শহরের যোগাযোগের জন্য যানবাহনের আয়োজন করে ওয়াটার বাস চালু করার দরকার ছিল। কিন্তু সেসব কাজ বাস্তবায়নের আগেই ওয়াটার বাস ক্রয় করে চলাচল শুরু করা হয়। ২০২০ সালের মার্চে বাদামতলী-গাবতলী রুট বন্ধ হওয়ার পর বর্তমানে চারটি ওয়াটার বাস (ওয়াটার বাস-৮, ৯, ১০ ও ১১) বুড়িগঙ্গা নদীতে ডিঙ্গি নৌকার পাশাপাশি যাত্রী পারাপার করছে। বিনিময়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ করপোরেশন মাসে প্রতিটি ওয়াটার বাস থেকে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া পাচ্ছে।
সূত্র : ইত্তেফাক