ঢাকা ১৮ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
সোনারগাঁয়ে বেরিবাঁধ থেকে যুবকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ শপথ ভেঙেছেন: ইশরাক সাভারে অসহায় বিধবা নারীকে আর্থিক সহায়তা দিলেন বিএনপি নেতা খোরশেদ আলম ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তৃনমূল দ্বায়ীত্বশীলদের সাথে পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত জুলাইয়ের মধ্যেই 'জুলাই সনদ' তৈরি করতে পারবো: আলী রীয়াজ ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে যোগ দেয়নি জামায়াত সাগরে তৈরি হচ্ছে বজ্রমেঘ, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত একাত্তরে ৫ রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যা করা মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম আর নেই সচিবালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত ইরানের শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের

ভূঞাপুর উপজেলায় কোরবাণীর পশুর হাটে গরু আছে ক্রেতা খুবই কম

#

২৬ মে, ২০২৫,  2:41 PM

news image

শাহীন খন্দকার: ঈদুল আযহার আর মাত্র বাকি ১০ দিন হলেও গরুর হাট জমেনি। প্রতি বছর কোরবাণীর পশু বেচাকেনা  রমরমা থাকলেও চলতি বছার শুরুতে বেচাকেনা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যাবসায়ীরা। গরু-ছাগলের ব্যাবসায়ীরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায়  ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম! এদিকে ক্রেতারা বলছেন, বাজেটের মধ্যে পছন্দের পশু মেলাতে পারছেন না তারা। তাই এক হাট থেকে অন্য হাটে ছুটতে হচ্ছে এবার। 

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার  মাদারিয় গ্রামের খামারী আরফি হাসান তালুকদার জানিয়েছেন,গত বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তিনি প্রায় ২৬৮টি মোটাতাজা করণ গরু বিক্রি করে ভালো লাভ করেন। চলতি বছর মোটাতাজা গরুর চাহিদা কিছুটা কম থাকায় এবং পশু পালন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৫০টি গরু লালন করেন। 

ইতিমধ্যে ১০০টি গরু বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহে হাটে ৫০টি গরুর মধ্যে মাত্র ৪টি বিক্রি হয়েছে। কোরবাণীর পশু বিক্রি করে আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি। তার খামারের সব চেয়ে বড় গরুটি বিক্রি হয়েছে ২৫ লাখ টাকা দাম চাওয়া হলেও বিক্রি হয়েছে ১৫ লাখ টাকায়। ৮ থেকে ১০ মণ ওজনের গরু ২ থেকে আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে তাকে। অন্যদিকে দাম না পাওয়ায় হতাশ তিনি। ভূঞাপুর যমুনার তীরে গোবিন্দাসী খানুরবাড়ীর খামারীরা মুক্ত খোলা আকাশে যমুনার চরে প্রাকৃতিক ঘাস-কাইশা ও ধানের খেড়, পানা খাওয়া দিচ্ছেন। 

খামারী আরওনজানান দেশী গাভীর বাছুর থেকেই প্রতি বছর পাঁচ লাখ টাকা আয় হয়। অন্যদিকে দেশী গরুতে খরচ কম লাভ বেশী গাভী পালনে। 

এঅঞ্চলের গরুর খামারীরা যমুনায় জেগে উঠা চরে গরু ছেড়ে পালন করে থাকে বলে জানান। বছরের ৬মাস থাকে মুক্ত খোলা আকাশের নিচে আর ৬ মাস বর্ষাকালীন সময়ে বাড়ীতে। খামারী আব্দুল জলিল বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রাকৃতিক ঘাসসহ নেপিয়ের ও গামা ঘাস খাওয়ানোর পাশাপাশি গমের ভূষি-খৈল, ভাতের মাড়সহ বিভিন্ন দানাদার খাবার খেয়ে থাকে। 

তিনি বলেন এই এলাকায় হাজার হাজার গরু  যমুনার চরে সারা দিন ছেড়ে পালন করা হলেও বর্ষায় বাড়ীতে রেখে পালন করা হয়। এ-সময়ে বর্ষা সময়ে  ঘাস পাওয়া যায় না। তাই  পানা, ধানের খেড়সহ ভাত ভাতের মাড়ের পাশাপাশি কিছু দানাদার ও খুদের ভাত খাবার দেওয়া হয় ।  জৈষ্ঠ-বর্ষায় পাওয়া যায় আম প কাঠালের ছোকলা। 

ইকবাল শেখ বলেন, প্রতি বছর বন্যায় যমুনার সঙ্গে জীবন সংগ্রামে এগিয়ে যাওয়ার সাহস যুগিয়েছে দেশী গরুর খামার! খামার থেকে তিনি বাছুর বিক্রি করে খরচ ছাড়া আয় করেন প্রায় ৫ লাখ টাকা।

 কিন্ত চলতি বছর হতাশ তিনি। কারণ সর্ম্পকে বলেন, খামারীরা বিভিন্ন এনজিও ও গ্রামীন ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্র  ঋণ নিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গরুর খামার করেছে। চরবিহারী ও চরচিতলিয়া ও কোণাবাড়ীর দেশী-বিদেশী ছোট বড় গরুর খামারীরা বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে গরুর দাম বেড়েছে। কারণ সম্পর্কে জানালেন, দেশের চলমান পরিস্থিকেই দায়ি করে গরু ব্যাবসায়ীরা।

অপর এক প্রশ্নে আরও বলেন, দেশীয় গরুর পাশাপাশি ভারতীয় গরু মুলত দেশের চাহিদা মেটায়। কিন্ত অর্ন্তবর্তী সরকার আসার পর থেকে দেশে ভারতীয় গরু আসছে না! তবে তিনি আশাবাদী ঈদের আগেই গরু আসা শুরু হবে। জাহিদের একটি দেশী গরুর খামার রয়েছে, যেখান থেকে প্রতি বছর বিক্রি করে এনজিওর কিস্তি দিয়ে আসছেন। সেই সঙ্গে নিজের সংসার চালাচ্ছেন।

বর্তমান গরুর দাম বৃদ্ধি অন্যদিকে আমদানি নেই। জাহিদ বলেন, গত ৩০ বছর যাবত বংশ পরস্পরায় গরুর খামার দেখতে দেখতেই উৎসাহিত এই পেশায় আশায়।

 কিন্ত বর্তমানে গরুর বেচাকেনা আমদানী দুই-ই উচ্চমুল্যকে দায়ি করেন! যে গরু ছিলো ৫০-৬০ হাজার সেই গরু ক্রয় করতে হচ্ছে ৭৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায়।

জাহিদ ুক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ছোট ছোট খামার ছাড়া দেশী গরুর বড় খামার গড়ে উঠে নাই। বর্তমানে যেসব গরু দেখছেন, এই গরু পাবনা ও চট্ট গ্রামের বিভিন্ন খামার থেকে সংগৃহীত। দ্বিতীয়তো ভারত ও বাংলাদেশের গরু ব্যাবসায়িদের অঘোষিত যে গরু আমদানি ব্যাবসা ছিলো ডক্টর ইউনুস উপদেষ্টা পরিষদ দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে! ফলে ব্যাবসিয়ীরা বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। গোবিন্দাসী গরুর হাটের ব্যাবসায়িরা আরও জানিয়েছেন, পাঁচ হাজার ব্যাবসায়ী রয়েছেন ছোট বড় মিলে।

 শাকিল শেখ জানান, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৬ লাখ টাকা লোন নিয়ে গরুর ব্যাবসা শুরু করেন। প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হচ্ছে ৯০০ টাকা। আশা ব্যাংক থেকে নিয়েছেন একলাখ টাকা তাকে সপ্তাহে কিস্তি দিতে হচ্ছে ২৫০০ টাকা।

ঈদ উপলক্ষে গরু মোটাতাজা করণের প্রয়োজন সঠিক ব্যাবস্থাপনা আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সর্ম্পকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু পালন অনুষদের পশু বিজ্ঞান বিভাগের বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ মুজাফ্ফ হোসেন বলেন, প্রয়োজনীয় উপাদান পদ্ধতির সঠিক সময় হচ্ছে বয়সের ওপর ভিত্তি করে সাধারণত ৩ মাসের মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ করা যায়।

অনেক সময় ৪-৬ মাসও লাগতে পারে। গরু মোটাতাজাকরণের জন্য সুবিধাজনক সময় হচ্ছে বর্ষা এবং শরৎকাল যখন প্রচুর পরিমাণ কাঁচা ঘাস পাওয়া যায়। চাহিদার ওপর ভিত্তি করে কোরবানি ঈদের কিছুদিন আগ থেকে গরুকে উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা দিয়ে মোটাতাজাকরণ লাভজনক। গোবিন্দাসী ও নলীন গরুর হাটে এবছর খাসির বেচাকোনা বেড়েছে। 

ভূঞাপুর উপজেলা পশু  অফিসার  বলেন, ভূঞাপুরে ছোট বড় মিলে ৩০টির মতো খামার আছে।  এক প্রশ্নে তিনি বলেন, খামার স্থাপনের জন্য স্থান নির্বাচনে নিম্ন লিখিত বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ শুষ্ক ও উঁচু জায়গা হতে হবে, যাতে খামার প্রাঙ্গণে পানি না জমে থাকে। খোলামেলা ও প্রচুর আলো-বাতাসের সুযোগ থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, খামারে কাঁচামাল সরবরাহ ও উৎপাদিত দ্রব্যাদি বাজারজাতকরণের জন্য যোগাযোগ সুবিধা থাকতে হবে। পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকতে হবে। সুষ্ঠু নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে, পানি, মলমূত্র, আবর্জনা ইত্যাদি। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে সম্প্রসারণের সুযোগ থাকবে।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম