
NL24 News
২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, 3:11 PM
ভন্ড মুসলমান (মুনাফিক) এর পরিচয় ও শাস্তি
কে. হোসাইন:
"মুনাফিক" হচ্ছে আরবি ভাষা। যার অর্থ একজন প্রতারক বা "ভন্ড ধার্মিক" ব্যক্তি।
যে প্রকাশ্যে ইসলাম চর্চা করে, কিন্তু গোপনে তার অন্তরে কুফরী বা পবিত্র গ্রন্থের নির্দেশনার প্রতি অবিশ্বাস লালন করে।
ইসলামের কিছু আনুষ্ঠানিক ইবাদত পালন করলেই মুসলিম হওয়া যায় না। মুসলিম হতে গেলে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিটি কথার প্রতি গভীর আস্থা ও বিশ্বাস থাকতে হবে এবং সে অনুযায়ী পৃথিবীতে চলতে হবে। যারা মুখে বলে যে, তারা আল্লাহর বিধানকে বিশ্বাস করে কিন্তু তাদের অন্তর একথার ওপর স্থির নয়, ইসলামের পরিভাষায় তাদেরকে বলে মুনাফিক।
পবিত্র কোরআনের শুরুর দিকেই আল্লাহতায়ালা বলেন- ‘মানুষদের মাঝে কিছু লোক আছে যারা বলে আমরা আল্লাহতায়ালা ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি আসলে এরা মোটেই ঈমানদার নয়।’ -সুরা বাকারা, আয়াত-৮
এই লোকগুলো সমাজে মুসলিমদের সামনে ঈমানের দাবি করে। তারা শুধু মুখে ইসলামের কালেমা পড়ে। মুখের ভাষায় তারা মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে এবং বলে আল্লাহতায়ালা ও পরকালের প্রতি তারা বিশ্বাসী। কিন্তু তাদের অন্তরে এই বিশ্বাস বদ্ধমূল নয়। তাই আল্লাহতায়ালা বলেছেন এরা ঈমানদার নয়। তবে তারা কেন এই কথা বলে?
এ প্রশ্নের জবাবে মহান আল্লাহরাব্বুল আলামিন বলেন- ‘তারা আল্লাহ এবং ঈমানদারগণকে ধোঁকা দেয়। অথচ এতে তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না অথচ তারা তা অনুভব করতে পারে না।’ -সুরা বাকারা, আয়াত-৯
মুনাফিকরা ঈমানদার ব্যক্তিদেরকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য দরবেশের মতো পোশাক পরিধান করে। তাদের বেশ ভুষা দেখলে মনে হবে এ ব্যক্তি নিশ্চয় আল্লাহর প্রিয় বান্দা। ইসলামী পোশাক বলতে যা বুঝায় তা তারা যথাযথভাবেই পরিধান করে। তাদের টুপি দাড়ি আর আলখেল্লা দেখে বুঝার উপায় থাকে না যে, তারা মুনাফিক। তারা কথার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত মিষ্টি মধুর কথা বলে। কথা শুনলে মনে হবে এই মানুষের দ্বারা কোনো পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া অসম্ভব।
মুনাফিকরা এরকম চাকচিক্যতা প্রদর্শন করবে সে কথা আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করে বলেন- "আপনি যখন তাদেরকে দেখেন, তখন তাদের দেহাবয়ব আপনার কাছে প্রীতিকর মনে হয়। আর যদি তারা কথা বলে, তবে আপনি তাদের কথা শুনেন। তারা প্রাচীরে ঠেকানো কাঠসদৃশ্য। প্রত্যেক শোরগোলকে তারা নিজেদের বিরুদ্ধে মনে করে। তারাই শত্রু, অতএব তাদের সম্পর্কে সতর্ক হোন। ধ্বংস করুন আল্লাহ তাদেরকে। তারা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছে"? -সুরা মুনাফেকুন, আয়াত-৪
মহান আল্লাহতায়ালা মুনাফিকদের এরকম কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ্য করে বলেন, ‘মুনাফেক নর-নারী সবারই গতিবিধি একরকম; শিখায় মন্দ কথা, ভাল কথা থেকে বারণ করে এবং নিজ মুঠো বন্ধ রাখে। আল্লাহকে ভুলে গেছে তার, কাজেই তিনিও তাদের ভূলে গেছেন নিঃসন্দেহে মুনাফেকরাই নাফরমান।’ -সুরা তাওবা, আয়াত-৬৭
মুনাফিকদের শাস্তির ঘোষণা দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন- ‘ওয়াদা করেছেন আল্লাহ, মুনাফেক পুরুষ ও মুনাফেক নারীদের এবং কাফেরদের জন্যে দোযখের আগুনের-তাতে পড়ে থাকবে সর্বদা। সেটাই তাদের জন্যে যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্যে রয়েছে স্থায়ী আযাব।’ -সুরা তাওবা, আয়াত-৬৮
জাহান্নাম এমন একটি ভয়াবহ জায়গা যা বর্ণনা করে কোনো মানুষকে বুঝানো সম্ভব নয়। জাহান্নামীদের খাবার দেওয়া হবে গলিত রক্ত, পুঁজ এবং কাঁটাযুক্ত ফল এবং তাদেরকে পান করতে দেওয়া হবে ফুটন্ত গরম পানি; যা তাদের নাড়ি ভুঁড়িকে ছিঁড়ে দিবে। আল্লাহতায়ালা মুনাফিকদেরকে এমন ভয়াবহ আজাবের স্থান জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন এবং তারা সেখানে চিরদিন অবস্থান করবে। সেখানে তাদের অবস্থা এমন হবে যে, তারা মৃত্যু কামনা করবে কিন্তু তাদের মত্যু হবে না।
আল্লাহতায়ালা মানুষ ও জীন জাতিকে তার ভালোকাজ ও পাপকাজের অনুপাতে তাদেরকে জান্নাতে ও জাহান্নামের বিভিন্ন স্তরে রাখবেন।
এক্ষেত্রে মুনাফিকদের স্থান হবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন- ‘এ মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করবে, তুমি সেদিন তাদের জন্যে কোনো সাহায্যকারী খুঁজে পাবেনা।’ -সুরা নিসা, আয়াত-১৪৫
মুনাফিকরা এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে আল্লাহতায়ালা ও ঈমানদারদের সাথে প্রতারণা করে চিরস্থায়ী জীবনের জন্য জাহান্নামকে কিনে নিয়েছে।
অতএব, মুনাফিকদের জীবনযাপনের চাকচিক্য, ক্ষমতা ও অর্থসম্পদ দেখে বিভ্রান্ত না হয়ে, তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলাই প্রকৃত মুমিন ব্যাক্তির পরকাল নিরাপদ।
হে আল্লাহ, আমাদের সবঠিক বুঝবার ও সঠিক ইসলাম পালন করবার ভাগ্য নির্ধারণ করুন, আমিন।