ঢাকা ১৮ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
জনসংযোগ-নিরাপত্তার মিশ্রণে দায়িত্ব পালনে এসএসএফের সদস্যদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান সন্ধ্যায় হাসপাতালে যাবেন খালেদা জিয়া বন্দর নবীগঞ্জে পাষণ্ড স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন আরেক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তুরিন আফরোজ হোলি আর্টিজানে হামলা: ৭ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ভবন ধস, দগ্ধ ৬ সরকারি পর্যায়ে ভারত থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ ১৩ ছক্কায় যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাক্সওয়েলের ‘তাণ্ডব’ ব্যাংক মালিকদের দখলে ঋণের ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি ঢাকার ১৩ ওয়ার্ড ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে

ব্যাংক মালিকদের দখলে ঋণের ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ জুন, ২০২৫,  11:14 AM

news image

দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালকদের নেওয়া ঋণের স্থিতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা, যা গত আগস্ট শেষে ছিল ২ লাখ ৩৫ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে মাত্র চার মাসের ব্যবধানে পরিচালকদের ঋণ কমেছে ৫৯ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। মূলত, সরকার পরিবর্তনের পর বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অনেক পরিচালক বাদ পড়ায় তাদের ঋণ কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক খাতে পরিচালকদের লুটপাট চলে দীর্ঘদিন ধরে। এই লুট থামাতে নিজ ব্যাংক থেকে পরিচালকদের ঋণ নেওয়ার বিষয়ে কঠোর আইন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে না পেরে অন্য ব্যাংকের পরিচালকদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে একে অন্যের ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ হাতিয়ে নেন। অন্য ব্যাংকের যেসব পরিচালকের মাধ্যমে সুবিধা নেন, তাদের আবার নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ ছাড়ে সহায়তা করেন ব্যাংক পরিচালকরা। এক কথায় মিলেমিশে লুটপাটে নেমেছিলেন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। গত আগস্টে সরকার বদলের মাসে তা ছিল ২ লাখ ৩৫ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। আর এসব পরিচালকের ২০২০ সালে ভাগাভাগির ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা। অথচ এস আলমের ‘ব্যাংক সাম্রাজ্য পত্তনের’ আগে ২০১৬ সালে ব্যাংক পরিচালকদের ঋণ ছিল মাত্র ৯০ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক খাত নিয়ন্ত্রণে এস আলম গ্রুপের আবির্ভাবের পর মাত্র ৮ বছরে পরিচালক ঋণ ছাড়িয়ে যায় ২ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আট বছরে ঋণ বেড়েছে প্রায় ১৬০ শতাংশ। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘যেসব ব্যাংক থেকে বিভিন্নভাবে ঋণ বেরিয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে এরই মধ্যে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শুরু করেছে। আমার জানামতে, ব্যাংক কোম্পানি আইনে পরিচালকদের ঋণ সংক্রান্ত আইনটিতে দুর্বলতা আছে। এজন্য তারা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে বিভিন্নভাবে ঋণ বের করে নিয়ে যাচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে যাতে আইনের এ ধরনের অপব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।’ অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ব্যাংকের মোট পরিচালকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭০০। তবে তাদের মধ্যে সমঝোতাভিত্তিক বড় অঙ্কের ঋণ অনিয়মে জড়িত শখানেক পরিচালক, যারা ছিলেন এস আলম, বেক্সিমকো, নাসাসহ হাতেগোনা ১১টি গ্রুপের ‘এজেন্ট পরিচালক’। কিন্তু গত আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর ব্যাংক খাতে এসব গ্রুপের ক্ষমতা খর্ব হয়। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে বাদ পড়ে তাদের পরিচালকরা। যদিও অনেকে শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হিসেবে এসব ব্যাংকে রয়েছেন। সেই হিসেবে তাদের পরিচালক ঋণের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এতে আগস্ট থেকে ডিসেম্বরে মাত্র চার মাসে পরিচালক ঋণ ৬০ হাজার কোটি টাকা কমে ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসে। মূলত ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়ায় এমনটি ঘটেছে। সামনে আরও কমার আভাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের হিসাবে এই ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিভিন্ন ব্যাংক পরিচালকদের সবচেয়ে বেশি সুবিধা বা ঋণ দিয়ে শীর্ষ অবস্থানে ছিল এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক। এই ব্যাংক থেকে পরিচালকরা ঋণ নিয়েছেন প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা। এর পরের অবস্থানে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালকরা ঋণ নেন ১০ হাজার কোটি টাকা। বেক্সিমকো গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন পরিচালকরা নেন ১০ হাজার কোটি। এ ছাড়া সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে পরিচালকরা ঋণ নিয়েছেন ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, এস আলম, বেক্সিমকো, নাসা গ্রুপসহ শক্তিশালী ব্যবসায়িক গ্রুপগুলো রাজনীতির অপব্যবহার এবং আইনের ফাঁকগুলোর সুযোগ নিয়ে অনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে, যা দেশের পুরো আর্থিক খাতকে গুরুতর ঝুঁকিতে ফেলেছে। আটটি ব্যাংকের যেসব পরিচালক এ ধরনের ঋণের সঙ্গে জড়িত, তারা সম্মিলিতভাবে দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন দিয়েছেন। আর তারা একে অপরের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন ৪৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, তাদের পরিশোধিত মূলধন ঋণের মাত্র পাঁচ শতাংশ। ব্যাংক খাতে অনিয়মের মূলত পুরোধা ছিলেন বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। তিনি ২০১৭ সালে নগ্নভাবে ব্যাংক দখল করে এসব অন্যায়কে উসকে দেন। এ ছাড়া নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ছিলেন ব্যাংক খাতের আরেক আতঙ্ক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০১৪ সালের এক সার্কুলার অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের পরিচালকদের নিজ নিজ পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান কালবেলাকে বলেন, ‘ব্যাংক খাতে আগস্টের আগে যা ঘটেছে তা সবার জানা। বিশেষ করে কয়েকটি গ্রুপ ব্যাংকের বারোটা বাজিয়েছে। আর পরিচালকদের ঋণ কোন ব্যাংক থেকে কত, তার পুরো হিসাব কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশ করে না। তবে আগস্টের পটপরিবর্তনে ব্যাংক খাত ঘুরে দাঁড়াতে সব চেষ্টা চলমান। সামনে ভালো কিছু ঘটবে।’

সূত্র : দৈনিক কালবেলা 

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম