
NL24 News
২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, 9:41 AM

বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটার শাস্তি ভয়াবহ
আল্লাহতায়ালার অপরূপ সৃষ্টি গাছ। বিশ্বের শোভাবর্ধনে গাছের ভূমিকা অপরিসীম। গাছের নির্মল বাতাস মানব জীবনের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। গাছ ও মানুষ একে অপরের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়। আর সেই অক্সিজেন গ্রহণ করে আমরা বেঁচে থাকি। তেমনি প্রশ্বাসের সঙ্গে আমরা যে কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করি তা গ্রহণ করে গাছ বেঁচে থাকে। একটি গাছ বৎসরে প্রায় ১৩ কেজি কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ অপরিহার্য। গাছ আল্লাহতায়ালার গুণগান করে। তার ধ্যানে সর্বদা মত্ত থাকে, সিজদা করে। পরিপূর্ণভাবে প্রভুর হুকুম মেনে চলে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে ‘তুমি কি দেখ না, আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আকাশমণ্ডলীতে ও পৃথিবীতে, সূর্য, চন্দ্র নক্ষত্রমন্ডলী, পর্বতরাজি ও বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও মানুষের মধ্যে অনেকে। ’হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) গাছরোপণ ও পরিচর্যার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে গাছ লাগানোকে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। নবী করিম (সা.) বৃক্ষরোপণ করতে তার উম্মতকে বারবার তাগিদ দিয়েছেন। প্রচুর পরিমাণ গাছ থাকলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে। বিশুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নিয়ে আমরা প্রশান্তি লাভ করি। ফলে মানুষ সহজে রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় না। জমির উর্বর শক্তি ও ফলন বাড়াতে গাছের ভূমিকা অপরিসীম। মহানবী (সা.) কৃষিকাজ ও বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি কোনো মুসলিম বৃক্ষ রোপণ করে অথবা ক্ষেতে ফসল বোনে, মানুষ কিংবা চতুষ্পদ প্রাণী খায়, তাহলে তা তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে। ’ –সহিহ বোখারি: ২৩২০ ও মুসলিম: ৪০৫৫ বৃক্ষরোপণের ক্ষেত্রে হাদিসে বারবার প্রেরণা দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যক্তির লালন-পালনে বেড়ে ওঠা বৃক্ষ থেকে কেউ উপকৃত হলে তার সওয়াব ওই ব্যক্তির আমলনামায় লেখা হবে। লোকটি মারা গেলেও এর সওয়াব সে পাবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি বৃক্ষরোপণ করে তা ফলদার হওয়া পর্যন্ত পরিচর্যা ও সংরক্ষণে ধৈর্য ধারণ করে, তার প্রতিটি ফল যা নষ্ট হয়, তার বিনিময়ে আল্লাহপাক তাকে সদকার নেকি দেবেন। ’ -মুসনদে আহমদ: ১৬৭০২ শিশুর পুষ্টির জন্য মায়ের দুধ যেমন অপরিহার্য, তেমনি পরিবেশ রক্ষার জন্য বৃক্ষ অপরিহার্য। পরিবেশ শান্ত, শীতল ও মনোমুগ্ধকর রাখে মাটি থেকে বেড়ে ওঠা বৃক্ষ। অপ্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন করাকে সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করেছেন নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটবে, আল্লাহ তার মাথা আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবে। ’ –সুনানে আবু দাউদ: ৫২৪১ তবে কোনো গাছ এমন স্থানে অবস্থিত হয় যার জন্য মানুষের চলাফেরায় বিঘ্ন ঘটে, ঘর-বাড়ির ক্ষতি হয় এবং মানুষের দরকারে কাটার প্রয়োজন হয়, তাহলে গাছ কাটতে কোনো নিষেধ নেই। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি এক ব্যক্তিকে দেখেছি জান্নাতে সে ওই গাছের ছায়ায় চলাচল করছে যা সে রাস্তার মোড় থেকে কেটেছিল, যা মানুষকে কষ্ট দিত। ’ -সহিহ মুসলিম: ৫৮৩৭ সমকালীন বিশ্বে পরিবেশবিদরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ লাগানোর প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং বিশ্বকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে আমাদেরও বৃক্ষরোপণের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।