
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ এপ্রিল, ২০২২, 3:10 PM

বিদেশ পাঠানোর নামে ঢাকায় ডেকে ‘ধর্ষণ’
তিনি জানান, নবম শ্রেণির গন্ডি পার হয়েছিলেন কামরুল আহম্মেদ (৪২)। যদিও তার নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। ২০১৯ সালে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই যায় সে। সেখানে মানবপাচারের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে দুবাইয়ের রেসিডেন্স ভিসা অর্জন করে। সেখানে একটি প্রাইভেটকার কিনে নিজেই ভাড়ায় গাড়ি চালাতেন। তবে করোনা মহামারীর কারণে ওই প্রাইভেটকারটি বিক্রি করে ২০২১ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে পুনরায় প্রতারণা এবং মানবপাচার শুরু করেন এই প্রতারক। যদিও তার জনশক্তি রপ্তানির কোন লাইসেন্স নেই। সে বিভিন্ন ট্যুরিস ও ট্রাভেলসের সঙ্গে যোগাযোগ করে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে লোক পাঠাতেন। বেকার যুবকদের টার্গেট করে জনপ্রতি ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা নিয়ে ভুয়া ভিসা এবং ভুয়া টিকেট সরবরাহ করতেন। ভুক্তভোগীরা বিমানবন্দরে গিয়ে প্রতারিত হয়ে তাদের টাকা ফেরত চাইলে নানা ধানাই-ফানাই করতেন কামরুল। কৌশল হিসেবে সে ঘনঘন অফিসের ঠিকানা পরিবর্তন করতেন।-সূত্র: আরটিভি অনলাইন
সম্প্রতি প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতা কামরুল আহম্মেদসহ (৪২) চার সদস্যকে সদস্য গ্রেফতার করে র্যাব। অভিযানে বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট, জাল ভিসা ও টিকেট তৈরির জন্য ব্যবহৃত কম্পিউটার উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার বাকি সদস্যরা হলেন- মো. খালেদ মাসুদ হেলাল (৩৬), তোফায়েল আহম্মেদ (৩৮), মো. জামাল (৪২)। গ্রেপ্তার কামরুলের নামে চট্রগ্রাম কোর্টে একটি চেক জালিয়াতির মামলা এবং মৌলভীবাজার কোর্টে ডাচ বাংলা ব্যাংকে ১৮ লাখ টাকার একটি মামলা রয়েছে। তার বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে ৩৮ লাখ টাকার ওপরে আছে বলে জানা গেছে। লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারী ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ভুক্তভোগী জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মো. সাইফুল ইসলাম শান্ত নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সাইফুল যৌতুক বাবদ তার কাছ থেকে ধাপে ধাপে ৫ লাখ টাকা আদায় করে তাকে ছেড়ে দেন। এরপর ভুত্তভোগী বিদেশ যাওয়ার জন্য দালাল তোফায়েলের শরণাপন্ন হয়। তার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তোফায়েল ভুক্তভোগীকে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদিআরব পাঠানোর প্রলোভন দেখায়।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মুলহোতাসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ২৭ টি পাসপোর্ট, ১ টি মনিটর, ১ টি সিপিইউ, ১ টি মাউস, ১ টি কীবোর্ড, ১ টি ইউপিএস, ১০০ টি ভিসার কপি, ১২৫ টি টিকেট, ৪ টি মোবাইল ফোন, ২ টি ফরম বই কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা এবং ১ টি প্রিন্টার উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়- কামরুলের অন্যতম সহযোগী আসামী জামাল মাহবুব ইন্টারন্যাশনালের এ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার। মাহবুব ইন্টারন্যাশনাল মানবপাচারের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় বিএমইটি কর্তৃক তাদের লাইসেন্স ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। একমাস পূর্বে মাহবুব ইন্টারন্যাশনালের এমডি মানবপাচারের দায়ে র্যাব-৩ এর হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। জামাল সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পাঁচ বছর ধরে সে কামরুলের সঙ্গে প্রতারণা এবং মানবপাচারের কাজ করে আসছে। গ্রেপ্তার খালেদ ২০০১ সাল থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর সৌদিআরবে ছিল। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ফেরত এসে সে রাজনগর মৌলভীবাজারে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু এই ব্যবসায় সে সফল হতে না পেরে কামরুলের সঙ্গে প্রতারণা ও মানবপাচারের কাজে যোগ দেয়। সে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। গ্রেপ্তার তোফায়েলের পেশা একজন গাড়িচালক। এছাড়াও মৌলভীবাজারে তার সিএনজি পার্টস এবং ডেকোরেটরসের ব্যবসা রয়েছে। লোভে পড়ে সে কামরুলের সঙ্গে প্রতারণা ও মানবপাচারের কাজে যোগ দেয়। কামরুলের বড় ভাইয়ের মাধ্যমে কামরুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। উদ্ধার হওয়ার ভুক্তভোগী গ্রেপ্তার তোফায়েলের গ্রামের দুর সম্পর্কের আত্মীয়। তোফায়েলের নামে এর আগে একটি চুরি মামলা রয়েছে।