
নিজস্ব প্রতিনিধি
৩০ জানুয়ারি, ২০২২, 11:14 AM

বাগেরহাটে চিকিৎসক সংকটে বাড়ছে রোগীদের দূর্ভোগ
বাওয়ালী ও বনজীবিরাও চিকিৎসা নিতে আসেন এই হাসপাতালে। ১৯৭০ সালে ৫০ শয্যা নিয়ে বাগেরহাট শহরের মুনিগঞ্জ এলাকায় এই হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। ২৭ বছর পরে ১৯৯৭ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয় এই হাসপাতালকে। একশ শয্যায় উন্নীত হলেও ২৪ বছর ধরে ৫০ শয্যার জনবল নিয়ে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। বর্তমানে ৫০ শয্যার জনবলও অর্ধেকে নেমে এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালে কনসালট্যান্টের ১২টি পদের মধ্যে ৭ টি এবং মেডিকেল অফিসারের ১২ টি পদের ১০টি পদ শূন্য রয়েছে। কনসালটেন্টের শূন্য পদের মধ্যে রয়েছে সিনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারী, গাইনী, চক্ষু, এ্যানেস্থাসিয়া, জুনিয়র কনসালটেন্ট অর্থোট্রমেটিক, কার্ডিওলজি, রেডিওলজি। মেডিকেল অফিসারদের মধ্যে ডেন্টাল সার্জন, ইউনানী মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার, প্যাথলজিস্ট, রেডিওলজিস্টের পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া একজন নার্সিং সুপারভাইজার, একজন হেলথ এডুকেটর, ২০ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ২ জন কার্ডিওগ্রাফার, ৪ জন সহকারি নার্স এবং একজন অফিস সহায়কের পদ শূন্য রয়েছে। কাঙ্খিত চিকিৎসক না থাকায় প্রতিদিনিই দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের ফিরে যেতে দেখা যায়। সংকট পূরণে আরও বেশি উদ্যোগী হওয়ার দাবি রোগী ও রোগীর স্বজনদের। মোসাঃ লাকি আক্তার বলেন, বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ গরীব মানুষরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। কিন্তু এখানে আসলে এই ডাক্তার নেই, ওই ডাক্তার নেই, শুধু নেই আর নেই। রামপালের মত প্রত্যন্ত এলাকা থেকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে আসার পরে তাকে বিনা চিকিৎসায় খুলনা বা অন্য কোথাও যেতে হয়, তারা মত বিড়ম্বনা আর কিছুই নেই। অতিদ্রুত এই হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান এই নারী জন প্রতিনিধি। নুসরাত জাহান নামের এক নারী বলেন, কিডনির সমস্যায় শ্বশুরকে নিয়ে আসছিলাম হাসপাতালে। কিন্তু ডাক্তাররা বললেন এখানে কোন চিকিৎসা হবে না, খুলনা নিয়ে যান। তাই চলে যাচ্ছি। মোঃ দেলোয়ার হোসেন নামের রোগী বলেন, অনেক রোগীর জন্য তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি টয়েলেট। তার মধ্যে একটি নষ্ট। দুটি টয়েলেট পয়নিস্কাসনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। অনেক সময় লাইন লেগে যায়। কখনও কখনও টয়েলেটের সামনে কাপড়েও কেউ কেউ মলত্যাগ করে ফেলেন। জরুরী ভিত্তিতে এই সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন। পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি নুর আহমেদ নামের এক রোগী বলেন, টাইফয়েড নিয়ে কয়েকদিন ধরে ভর্তি রয়েছি। প্রতিদিন একজন চিকিৎসক দেখেন। কোন পরিবর্তন হয় না। মনে হয়, আমার এই রোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই এখানে। মিজান হাওলাদার নামের এক রোগী বলেন, কোন রোগী দুপুর ১২টায় ভর্তি হলে, তাকে পরের দিন সকালে একজন চিকিৎসক দেখেন। এই সময়ে রোগী কষ্টে মরে গেলেও নার্স ছাড়া কোন চিকিৎসক পাওয়া যায় না। একদিন পরে রোগী দেখার এই সংস্কৃতি থেকে বের হতে পারলে সরকারি হাসপাতালের প্রতি মানুষের আস্তা বৃদ্ধি পাবে। স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ডাক্তার না থাকার কারণে প্রতিদিনই অনেক রোগীকে এই হাসপাতাল থেকে খুলনাসহ বিভিন্ন বড় শহরে যেতে দেখা যায়। মঞ্জুরীকৃত পদ অনুযায়ী এই হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগ দিলে মানুষের আর খুলনা যেতে হবে না বলে দাবি করেন তারা। বাগেরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শেখ আদদান হোসেন বলেন, বাগেরহাট সদর হাসপাতালে অনেকদিন ধরেই চিকিৎসক সংকট রয়েছে।