ঢাকা ১৯ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
জাতীয় ট্যালেন্ট হান্ট ক্রিকেটে সাপাহারের ২ শিক্ষার্থী স্বর্ণের দামে বড় পতনের পূর্বাভাস আগামীকাল সচিবালয়ে বিক্ষোভের ঘোষণা ১১ মাসে রাজস্ব আদায় ৩ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা: এনবিআর দেশে ফিরেছেন ২৯ হাজার ৭৩ হাজি ঈদযাত্রার ১২ দিনে সড়কে ঝরল ৩১২ প্রাণ নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন চান রিজভী জনসংযোগ-নিরাপত্তার মিশ্রণে দায়িত্ব পালনে এসএসএফের সদস্যদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান সন্ধ্যায় হাসপাতালে যাবেন খালেদা জিয়া বন্দর নবীগঞ্জে পাষণ্ড স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন

বরগুনার উপকূলে জলদস্যুর আতঙ্কে জেলেরা

#

নিজস্ব প্রতিনিধি

১৫ ডিসেম্বর, ২০২১,  10:34 AM

news image

বৈরী আবহাওয়াসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও জীবিকার টানে জেলেরা বঙ্গোপসাগরে পরে থাকেন দিনের পর দিন। স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরে মাছ ধরায় ব্যস্ত থাকলেও শান্তি নেই জেলেদের। আতঙ্কে থাকতে হয় জলদস্যুদের। দস্যুরা নৌকা নিয়ে জেলেদের কাছে গিয়ে ছিনিয়ে নেয় মাছ, তেল, মোবাইল ফোন ও নগদ টাকাসহ সবকিছু। অনেক ক্ষেত্রেই নৌকার মাঝিদের আটকে রেখে বড় অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করে।

এভাবেই বরগুনার উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ১০ হাজার জেলের দস্যুদের অজানা আতঙ্কে দিন কাটছে। সম্প্রতি দস্যুদের হাতে এক জেলের মৃত্যুর পর জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক অনেক বেড়ে গেছে। দস্যুদের হাত থেকে বাঁচতে র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চান জেলেরা। জেলেদের দাবি র্যাবের স্থায়ী ক্যাম্প। গত রবিবার দুপুরে বরগুনার পাথরঘাটা ফিশারিঘাটে জেলেদের নৌকায় বসে কথা হয় মো. হাসান সিকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, সুন্দরবনের জলদস্যু মুক্ত হওয়ার পর এর প্রভাব বরগুনা উপকূলেও পড়ে। যার কারণে দীর্ঘদিন দস্যুমুক্ত ছিলাম। গত ১৫ থেকে ২০ দিন যাবত্ হঠাত্ দস্যুতা বেড়ে গেছে। এখন দস্যুরা এসে সব মাছ লুটপাট করে নিয়ে যায়। তারা প্রথমেই মাঝি ও জেলেদের বেধম মারধর করে। অপহরণের পর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দেওয়া পর্যন্ত নির্যাতন করতে থাকে। হাসান বলছিলেন, বাধ্য হয়ে মহাজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মুক্তিপণের টাকা দিয়ে আসতে হয়। এই দস্যুদের কাউকেই তারা চেনেন না। এমনকি দস্যুদের কারো নামও শুনেননি তারা। হাসান বলেন, দস্যুদের কবলে এখন পর্যন্ত পাঁচবার পড়েছি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, প্রথমে একটি ছোট নৌকা নিয়ে আসে দস্যুদের দু-একজন। পরবর্তিতে তারাই সিগন্যাল দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বড় বোট এসে তাদের বোটকে ঘিরে ফেলে।

এ সময় দস্যুদের সবার হাতেই থাকে অস্ত্র, লোহার রড, লাঠি ও চাপাতি। প্রথমে এসেই দস্যুরা তাদের সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। একে একে সবাইকে বেধম পিটিয়ে বোটের নিচে (ইঞ্জিনের কাছে) আটকে রাখে। এরপর মাঝিকে অপহরণ করে। আমাদের বোটে থাকা মাছ ও ড্রামের তেল সব লুটপাট করে নিয়ে যায়। নিয়ে যায় জালও। হাসান আরো বলেন, তিনি সাগরে জাল টানেন। প্রতি সপ্তাহে আয় হয় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। কোনো কোনো সময় লোকসানের মুখেও পরেন তারা। লোকসানের কারণ জানতে চাইলে অপর জেলে জহির জমাদ্দার বলেন, মহাজন থেকে প্রত্যেকে ১০ হাজার টাকা করে তারা দাদন নেন। ঐ টাকা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের খাবার কিনে দিয়ে তারা সাগরে যান। একটি বোটে ১৫ থেকে ২০ জন করে থাকেন। বোটের সব খরচ মালিক দেন। মাছ ধরে ফেরার পর বোটে থাকা মাছ বিক্রি হয়। মহাজনদের পছন্দের আড়তেই সব মাছ বিক্রি করেন তারা। মালিকের খরচ বাদে যে টাকা লাভ হয় তার অর্ধেক মালিকের। বাকি অর্ধেকের অর্ধেক নৌকার মাঝির। বাকিটা আমরা সবাই মিলে ভাগ করে পায়। ভোলায় ১৬ বছরেও শেষ হয়নি স্মৃতিফলক নির্মাণকাজ ভোলায় ১৬ বছরেও শেষ হয়নি স্মৃতিফলক নির্মাণকাজ  ছগীর ফরাজী নামে একজন জেলে বলেন, তিনি ২৪ বছর যাবত্ বোটে আছেন। অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, একসময় সাগরে অনেক দস্যু ছিল। তারা ডাকাতি করে সব কেড়ে নিত। এমনকি বেধম মারধর করত। এখন আবার নতুন করে বেড়েছে দস্যুদের উত্পাত। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে এক জেলেকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর র্যাবের তত্পরতা শুরু হয়। কয়েক দিন আগে র্যাব জলদস্যুদের গ্রেফতার ও এক জন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেলে এখন কিছুটা কমেছে দস্যুদের উত্পাত। তিনি বলেন, দস্যুরা জেলেদের মারধর করে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এমন জায়গায় নিয়ে যায় প্রথমে চিনতেই পারি না। মহাজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণ নিয়ে এরপর ছেড়ে দেন। পরে মাছ বিক্রি করে সেই টাকা মহাজনদের পরিশোধ করি। এফ রহমান বোটের জেলে খায়রুল আলম বলেন, উপকূলের পশ্চিম পাশে মংলা শিবচর নদী এলাকা। পূর্বে বয়া নদী। আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। যেখানে মাছ বেশি থাকে সেখানেই তারা বোট নিয়ে জাল ফেলেন। কিন্তু দস্যুদের অত্যাচার আর সইতে পারি না।

তারা যে অত্যাচার করে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। কথা না শুনলে মেরে ফেলে। ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে মোটরসাইকেল উদ্ধার ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে মোটরসাইকেল উদ্ধার  জেলে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, সুন্দরবনে র্যাবের অভিযান ও দস্যুদের আত্মসমর্পণের পর বরগুনা উপকূলীয় এলাকায় আস্তানা গেড়েছে জলদস্যুদের অনেকেই। আত্মগোপনে থাকা দস্যুরাই একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে চলেছে বলে জানান অনেক জেলে। পাশাপাশি আত্মসমর্পণ করা দস্যুদের দিকেও বিশেষ নজর রাখতে বলেছেন তারা। জেলেদের দুর্দশার কথা শুনতে গত রবিবার পাথরঘাটায় গিয়েছিলেন র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করেছি। এবার উপকূলেও কোনো দস্যু থাকবে না।’ র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্পের চিন্তা ভাবনাও চলছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, জেলেরা যাতে নির্বিঘ্নে মাছ ধরতে পারেন, সে ব্যাবস্থা করা হবে।  সূত্র: ইত্তেফাক 

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম