
নিজস্ব প্রতিনিধি
১৯ মে, ২০২৫, 4:30 PM

প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ; গাজীপুরে গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের হুমকি
গাজীপুরের গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারি কার্যক্রমে নিজের স্বার্থসিদ্ধি না হওয়ায় সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমাসহ অন্যান্য প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে। গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গাজী-(ডি-৩) ২০১৮-২০১৯ নম্বর স্মারকে এস এইচ জয়েন্ট ভেঞ্চার নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভূমি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল এনওএ প্রদান করা হয়। এরপর ২৫ এপ্রিল চুক্তিপত্র সম্পাদন করে কাজের সাইট হস্তান্তর করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল এবং সময়মতো কাজ সম্পন্ন করতে তাকে বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে কাজ শুরু হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির অগ্রগতি সন্তোষজনক ছিল না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বারবার সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন এবং এ সংক্রান্ত চিত্র বিভিন্ন প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ঠিকাদারকে একাধিকবার তাগিদ দেওয়া হলেও কার্যকর অগ্রগতি দেখা যায়নি। এক বছর পাঁচ মাস পরও কাজ শেষ না হওয়ায় তাকে চিঠির মাধ্যমে তিন কর্মদিবসের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। ব্যর্থ হলে চুক্তি বাতিল ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সরকারি অফিসিয়ালভাবে জানানো হয়েছিল।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি সময় বাড়ানোর আবেদন জানায় এবং শর্তসাপেক্ষে ৬১৯ দিন সময় বাড়ানো হয়। তবুও কাজ সম্পন্ন হয়নি। এরপর ২০২১ সালের ২২ এপ্রিল গাজী-১৪০৫ স্মারকে তাকে ২৮ দিন কাজ বন্ধ রাখার কারণ জানতে চাওয়া হয়। এটি 'জেনারেল কন্ডিশন অব কন্ট্রাক্ট'-এর ৮৯ ধারা অনুযায়ী একটি মৌলিক চুক্তি লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হয়। তাই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নোটিশ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে প্রকল্পের অন্যান্য কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারি বিধি অনুযায়ী অনুমোদন গ্রহণের পর দীর্ঘ দুই বছর ছয় মাস পেরিয়ে ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর এস এইচ জয়েন্ট ভেঞ্চার-এর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয় (স্মারক নং: পিপিসি ২৫.৩৬.০০০০.৪১০.১৪.০০২.১৪৯৪২৮ উশা-২)। চুক্তি বাতিলের পর ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিষ্ঠানটির সত্ত্বাধিকারী প্রতিশোধমূলকভাবে প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
প্রকল্পের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিপিপিতে বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রায় ২৪.৫ কোটি টাকার পরিবর্তে মাত্র ১২.৫ কোটি টাকায় প্রকল্পের কাজ প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। অভিযোগ সম্পর্কে সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিস্তারিত মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করেন, তবে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলার এবং দপ্তরের রেকর্ড পর্যালোচনার অনুরোধ জানান। অন্যদিকে গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক পূর্ববর্তী সরকার আমলে এই বিভাগে প্রভাব বিস্তার করতেন। নানা সুযোগ-সুবিধা নিতেন এবং কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়ে কাজ আদায় করার চেষ্টা করতেন। বর্তমানে ইচ্ছামতো কাজ করতে না পারায় হুমকি ও অপপ্রচার চালাচ্ছেন, যা পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এস এইচ জয়েন্ট ভেঞ্চারের সত্ত্বাধিকারীর বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।