
NL24 News
০৩ জুন, ২০২৪, 12:48 PM

পৌরসভার পাঁচ সড়কের তিনটিই যেন মরণ ফাঁদ জনদুর্ভোগ চরমে
চান্দিনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি: কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভার রাস্তা—ঘাটের বেহাল দশায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। পৌরসভার সড়কে যাতায়াত করতেই চালক ও যাত্রীদের পিলে চমকে যাচ্ছে। পুরো পৌরসভার সড়কগুলোতে গেলে বুঝার উপায় নেই যে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশ! পৌরসভার এরূপ গুরুত্বপূর্ণ প্রধান ৫টি সড়কের মধ্যে ৩টি সড়ক শুধু যান চলাচল নয়, মানুষ চলাচলের অনুপযোগী। আরও একটি সড়কের কিছু অংশ কাজ করা হলেও বাকি অংশ পড়ে আছে আগের মতো। শুধু কুমিল্লা জেলা নয়, বাংলাদেশে এর চেয়ে খারাপ রাস্তা আর আছে কিনা সন্দেহ আছে। দীর্ঘদিন এভাবে পড়ে থাকলেও সড়কগুলো সংস্কারে কারও কোন উদ্যোগ নেই। অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে জনদুর্ভোগের অপর নাম যেন চান্দিনা পৌর এলাকার সড়ক।
প্রতিটি সড়কে বড় বড় গর্ত, কার্পেটিং উঠে গেছে অন্তত আরও ২—৩ বছর আগে, কোথাও কোথাও মেকাডম এরও অস্তিত্বও নেই। সামান্য বৃষ্টি পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী। সড়কগুলোর এতোটাই করুন অবস্থা যেন’ কেউ একবার ওই সড়ক হয়ে কোথাও গেলে দ্বিতীয়বার যেতে চায় না। বড় বড় এই ভাঙ্গায় প্রায়ই উল্টে যায় বিভিন্ন যানবাহন। ভাঙ্গা সড়ক গুলো দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকার হাজার হাজার বাসিন্দাদের। বিধ্বস্ত এই সড়কগুলো দিয়ে ছোটবড় যানবাহন চলাচল করলেই সুরকি গুলো গুঁড়ো হয়ে কোয়াশার মত উড়ছে ধুলা বালু। ধুলার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ যাত্রীসহ আশেপাশের বাড়ি—ঘরের মানুষ। নাক মুখে মাস্ক ব্যবহার কিংবা কাপড় চেপে ধরলেও ধুলাবালি থেকে রেহাই পাচ্ছে না মানুষ। ভোগান্তির সঙ্গে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুকিও। ধুলা থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় বাসিন্দা ও দোকানিরা প্রতিদিন দুই থেকে তিন বার পানি ছিটিয়ে যাচ্ছেন সড়কে। এমন পরিস্থিতিতে দূর দূরান্তের মানুষ পৌর এলাকায় প্রবেশ করলেই চমকে উঠেন। ‘এমন রাস্তা বাংলাদেশের আর কোথাও আছে কিনা’ এমন প্রশ্ন জাগে যাত্রী ও যানবাহনের চালক সহ সবার মনে।
১৪.২০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের চান্দিনা পৌরসভায় প্রধান সড়ক রয়েছে প্রায় ১৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে উপজেলার সদরের সাথে বা পুরাতন গ্রেন্ড ট্রাংক রোডের সাথে সংযুক্ত আছে ৪টি প্রধান সংযোগ সড়ক। যে সড়কগুলো নিজ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ পাশ্ববতীর্ উপজেলার সাথে যোগাযোগের অন্যতম সড়ক।
সড়কগুলোর মধ্যে চান্দিনা—খোসবাস সড়ক, চান্দিনা—বরকইট সড়ক, চান্দিনা—বাড়েরা সড়ক। এর মধ্যে চান্দিনা—খোসবাস সড়কটির এতোটাই খারাপ অবস্থা মানুষ খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ওই সড়ক যাতায়াতও করেন না। ওই সড়ক হয়েই অধিকাংশ মানুষ পৌর ভবনেও যাতায়াত করে। ওই সড়কের পাশে রয়েছে চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ কলেজ, চান্দিনা ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ ও একটি এতিমখান। এছাড়াও রয়েছে পৌরসভার প্রধান গরুর হাট। ভাঙ্গা সড়কের কোথাও কোথাও পৌর কতৃর্পক্ষ সড়কের বিভিন্ন স্থানে পুরাতন ভবনের ভাঙ্গা অংশ ফেলে জোড়াতালি দেয়ার চেষ্টা করে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যেন এ এলাকায় কোন অভিভাবক নেই এমনকি রাস্ট্রেরও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না সড়ক সংস্কারে। এই সড়কগুলো দিয়ে চলাচল যানবাহন চালকদের অভিযোগ একদিন গাড়ী চালাইলে পরের দিন ওয়ার্কসপে নেয়া লাগে। কয়েক দিন পর পরই শুনে আসছি, টেন্ডার হইতাছে, বাজেট হইছে ইত্যাদি। কিন্তু রাস্তার মধ্যে এক মুঠ বালু পর্যন্ত ফালায় না কেউ।
সিএনজি অটোরিক্সা দিয়ে চলাচল যাত্রীরা জানান, বাড়ি থেকে চান্দিনা বাজারের দূরত্ব মাত্র ২ কিলোমিটার। সিএনজিতে ১০টাকা ভাড়া বর্তমানে ২০ টাকায়ও নিতে চায় না। আবার এমন অবস্থা হয় অনেক সময় দাঁড়িয়ে থেকেও সিএনজি পাওয়া না। কারণ চালকরা গাড়ী গুলো ঘুরিয়ে রামমোহন সড়ক হয়ে চান্দিনায় যাতায়াতা করে। ২ কিলোমিটার সড়ক ৫ কিলোমিটার ঘুড়ে, তারপরও সড়ক নামের এই দুর্ভোগে কেউ যেতে চায় না।
১৯৯৭ সালে গঠিত হয় চান্দিনা পৌরসভা। দীর্ঘ ২৭ বছরে ১২ গুন বেড়েছে পৌরসভার উন্নয়ন বাজেট। ‘গ’ শ্রেণীর ওই পৌরসভাটি ২০০৯ সালে ‘খ’ শ্রেণীতে উন্নীত হয়। ‘ক’ শ্রেণীর উন্নতি হওয়াও প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরেও উন্নত হয়নি পৌরসভার রাস্তা—ঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থার।
চান্দিনা পৌর মেয়র শওকত হোসেন ভূইয়া জানান, পৌরসভার ফান্ড ও সরকারি বরাদ্দ না থাকায় সড়কগুলো সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। সড়কগুলোর যে অবস্থা আমি কেন, সবার কাছেই খারাপ লাগে। স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত’র সহযোগিতায় সরকারি ফান্ডের ব্যবস্থা হয়েছে। আগামী এক দেড় মাসের মধ্যে ৩টি সড়কই টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রত্যাশা করছি।