বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়ছে পোশাক খাতে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট তাদের কার্যাদেশ কমিয়ে দিয়েছে; এমনকি আগের কার্যাদেশের পণ্য বিলম্বে জাহাজীকরণের কথা জানিয়েছে এ দেশের উদ্যোক্তাদের। গতকাল তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে চলছে অর্থনৈতিক অস্থিরতা। খাদ্য মূল্যস্ফীতি হু হু করে বাড়ছে। বিশ্বের ১৫৩টি দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮১ শতাংশ। আর বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে পোশাক খাতে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইউরোপ ও আমেরিকায় চরম মূল্যস্ফীতির কারণে বিশ্ববাজারে পোশাক বিক্রি কমেছে। অনেক ক্রেতা দুই থেকে তিন মৌসুমের পোশাক বেশি ক্রয় করেছেন। ফলে স্টক অর্ডার বেশি হওয়ায় কার্যাদেশ কম এবং বিলম্বে পণ্য জাহাজীকরণের কথা বলছেন। আবার অনেক ক্রেতা অক্টোবরের কার্যাদেশ নভেম্বর-ডিসেম্বরে শিফট করছেন। ’য়ালমার্টের সঙ্গে কাজ করেন চট্টগ্রামের বিকেএমএর পরিচালক সামশুল আজম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পণ্য বিক্রি কম হওয়ায় ওয়ালমার্টের ওয়্যার হাউসে এখন পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য রয়েছে। এ জন্য তারা এই মুহূর্তে কার্যাদেশ কমিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া তার প্রতিষ্ঠানের কিছু পোশাক বিলম্বে শিপমেন্ট করার পরামর্শ দিয়েছে, যেসব পণ্য চলতি মাসে নেওয়ার কথা ছিল। এগুলো আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া এই সময় আগামী ক্রিসমাস উপলক্ষে যে ধরনের কার্যাদেশ পাওয়ার কথা সেই তুলনায় কার্যাদেশ নেই বললেই চলে। বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদুল্ল্যাহ আজিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বৈশ্বিক মন্দার কারণে বিশ্বব্যাপী পোশাকের বিক্রি কমেছে। দেশে এই মৌসুমে যে পরিমাণ কার্যাদেশ পাওয়ার কথা এর চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কম। ওয়ালমার্ট তাদের পণ্য পাঠানো সাময়িক স্থগিত করার কথা জানিয়েছে। তবে এই পর্যন্ত অর্ডার বাতিলের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। এদিকে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ায় পোশাক উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে অন্তত ২০ শতাংশ। বাড়তি খরচ সামাল দেওয়ার উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না পোশাক কারখানার মালিকরা। অন্যদিকে দেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরকারি তথ্য সরবরাহকারী সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের তথ্য বলছে, জুলাই শেষে জোটে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮.৯ শতাংশ। এটা গত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর পোশাকের একক প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি এখন ৯.১ শতাংশ। রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কারণে এসব দেশে পোশাকের চাহিদা কমছে।বিকেএমইএ সহসভাপতি ফজলে এহসান শামিম বলেন, ‘অর্ডার বাতিলের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এটা সাধারণত করে না। কারণ এটা নৈতিক ব্যবসার পরিপন্থী। এ জন্য উদ্যোক্তাদের আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে অর্ডার কিছু কমালেও এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের চীনবিরোধী মনোভাব বাংলাদেশের জন্য সহায়ক। ’