আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঢাকার সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নে মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছেই নৌকা প্রতীক নিরাপদ এমনটা জানালেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। শনিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় পাথালিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের নয়ারহাট গণবিদ্যাপীঠ মার্কেটে আয়োজিত এক উঠান বৈঠকে বক্তৃতাকালে একথা জানান তিনি।

এসময় অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই ২নং ওয়ার্ডকে বলা হয় বিএনপি'র 'কোর সেন্টার'। এরপরও ২০০১এর নির্বাচনে এখান থেকে আওয়ামী লীগই বিজয়ী হয়েছে। কারণ, আওয়ামী লীগের ভিতরে একতা ও সমন্বয় ছিলো, জনগণের ভালোবাসা ছিলো। কিন্তু পরে যখন পারভেজ দেওয়ান পাথালিয়ার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন, তখন থেকে তিনি প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্যও কিছু করেন নাই, পাশাপাশি জনগণের জন্যও কিছু করেন নাই।  এই নয়ারহাট রাস্তাটির কথাই ধরুন, এই রাস্তা দিয়ে কোনো অন্তঃস্বত্তা মহিলা চলাচল করলে হয়তো রাস্তায়ই তার প্রসব হয়ে যাবে! বর্তমান চেয়ারম্যান বিগত দশ বছরে কোনো কাজই করেন নাই।

তিনি আরও বলেন, আমরা চেয়ারম্যান তথা নেতা বানাই কারও ব্যক্তিগত লাভের জন্য না। এলাকার রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, মাদকমুক্ত এলাকা গড়ায় তার ভূমিকা এসব কারণেই চেয়ারম্যান বানানো হয়। কিন্তু এখন পাথালিয়ায় ডাকাতির উপদ্রব বেড়েছে, মাদকে ছেয়ে গেছে এলাকা, তাহলে চেয়ারম্যানের কাজ কি? আইনের শাসন বাস্তবায়নে নেতা কাজ করবেন যা বিগত দশ বছরে আমরা পাথালিয়াবাসী পাই নাই। তাই আগামীতে উন্নয়ন ও আইনের শাসন বাস্তবায়নে পাথালিয়ার চেয়ারম্যান হিসেবে মোয়াজ্জেম হোসেনের কোনো বিকল্প নাই। দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে যদি বলি, আসলে এই নির্বাচনে নৌকা'র কাছে মোয়াজ্জেম ভাই নিরাপদ না; বরং পাথালিয়ায় নৌকা মোয়াজ্জেম এর কাছে নিরাপদ! এই ইউনিয়নে মোয়াজ্জেম বাদে যাকেই নৌকা প্রতীক দেয়া হবে, তিনিই মোয়াজ্জেম এর কাছে নির্বাচনে পরাজিত হবেন এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।  সম্প্রতি ধামরাইতে ইউপি নির্বাচনে এমন ঘটনা আমরা দেখেছি।

পাথালিয়া ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক এর সভাপতিত্বে এবং আশুলিয়া থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি শাহীন দেওয়ানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পাথালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন। 

উঠান বৈঠকে বক্তৃতাকালে পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ ফয়জল হক বলেন, পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে আমি প্রায় ২০ বছর দায়িত্ব পালন করছি। জীবনের এই শেষ সময়ে আমি আর একটা জিনিসই আশা করছি, তাহলো এবার মোয়াজ্জেম কে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাই। আরেকটা কথা, ২৫ বছর ফারুক চেয়ারম্যান ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন; কিন্তু তিনি কোনোদিন বলেন নাই যে পাঁচ পাঁচ বারের চেয়ারম্যান তিনি। কিন্তু পাথালিয়ার বর্তমান চেয়ারম্যান এবং তার লোকজন বলে বেড়ায় যে তারা তিন তিন বারের চেয়ারম্যান।  নির্বাচনে জিতে চেয়ারম্যান হয়েছেন তো মাত্র একবার, বাকি দুইবার কিভাবে হয়েছেন সেটা পাথালিয়াবাসী সবাই জানে। আমরা তিন তিন বারের চেয়ারম্যান হতে চাই না, মোয়াজ্জেম মাত্র একবার হোক। সে একবার হতে পারলেই দেখিয়ে দিবে আসলে চেয়ারম্যান কাকে বলে। তাই নৌকা প্রতীক পাক আর না পাক, পাথালিয়ার আগামী চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেমই হবে ইনশা আল্লাহ। 

আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য মোঃ মোখলেসুর রহমান জানান, পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হবার পর মোয়াজ্জেম হোসেন সাহস নিয়ে তিল তিল করে এই সংগঠনকে গুছিয়ে এনেছে। সে জনগণের জন্য কাজ করেই আজ জনগণের জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছে। দল মোয়াজ্জেম এর জন্য কি করবে আমি জানি না, তবে আমরা নির্বাচন ছাড়বো না। পাথালিয়া ইউনিয়নের প্রতি ওয়ার্ডেই মোয়াজ্জেম এর লোক রয়েছে, তারা তাকে ভালোবাসে এবং চেয়ারম্যান হিসেবে চায়, তাদের জন্যই আমরা নির্বাচন করবো। 

আশুলিয়া থানা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু তার বক্তব্যে জানান, পাথালিয়ার বর্তমান চেয়ারম্যান নিজ স্বার্থে সবসময়েই সময়োপযোগী রাজনীতি করেন। যখন যাকে দরকার তাকে ব্যবহার করে পরে ফেলে দেন। এই রাজনীতি পাথালিয়ার মানুষ আর পছন্দ করে না। তাই, আমরা যে যেখানে যে অবস্থায়ই আছি, সবাই যদি আমরা একাত্ম হয়ে মোয়াজ্জেমের হতে পারি তাহলেই কেবল পাথালিয়ার চেয়ারম্যান পরিবর্তন করা সম্ভব।আর আমরা পারবো না কেনো? তিন বছর যদি পাহারা দিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান কে বানাতে পারি, তবে দশ বছরে কি মোয়াজ্জেম কে বানাতে পারবো না?

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, হয়তোবা আমরা আবেগে অনেকসময় বলে থাকি যে, নৌকা না পেলেও নির্বাচন করবো। এটা এজন্য বলা হয় যখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়। গতবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিয়ম অনুযায়ী তৃণমূলের সকল ভোট এবং ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের ৬ ভোটের ভিতর আমি ৫ ভোট পেয়েও চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পাইনি। কিন্তু আমি এককভাবে নির্বাচন না করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি। এটা কিন্তু পাথালিয়াবাসী জানে এবং তারা সেটা ভুলে নাই। এবারেও পাথালিয়া ইউনিয়নের মেজরিটি মানুষের 'ম্যান্ডেট' নিয়ে এবং আওয়ামী লীগ ও সকল সহযোগী সংগঠন আমার সাথে থাকা সত্ত্বেও যদি এই নির্বাচনে টিকেট না পাই, হয়তোবা আমরা এই আরিচা রোড বন্ধ করে দেবো, আমরা আর কিন্তু ধৈর্য্য ধরবো না। গণভবন কিন্তু বেশী দূরে নয়।

তিনি বলেন, আজকে অযোগ্য নেতাদের নৌকা প্রতীক দিয়ে আমাদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতীককে অপমান করেছে যারা, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি- আমাদের যোগ্য নেতাদেরকেই দলীয় প্রতীক দিতে হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কিন্তু সংগ্রামের রাজনীতি করে এসেছে। আমরা সেই মুজিব সৈনিক যারা আন্দোলন করতে শিখেছে, রক্ত দিতে শিখেছে। আমরা প্রয়োজনে আরও রক্ত দেবো এবং এবারে নমিনেশন নিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ। আপনারা আমার পাশে থাকবেন,  নৌকা প্রতীক কিভাবে আনতে হয় তা আপনারা দেখবেন।

এসময় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন আরও জানান, আপনারা নেতৃবৃন্দ হয়তো ভাবছেন, কেনো আমরা এটা করছি? তার কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এমন কোনো অনুষ্ঠান নাই যা পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করে না। অথচ গতবার চেয়ারম্যান পদে দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, তিনি গেলো ১৫ আগষ্ট উপলক্ষে তার নয়ারহাটের ব্যক্তিগত কার্যালয় কিংবা সরকারি কার্যালয় পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদে কোনো অনুষ্ঠানই করেন নাই!! এবারও তাকেই যদি দল মনোনয়ন দেয়, তাহলে পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এবং পাথালিয়াবাসীকে আপনারা চিনেন নাই। আপনারা আমাদেরকে বাধ্য করবেন না যেন ভিন্ন প্রতীক নিয়ে আমি মোয়াজ্জেম হোসেনকে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী হতে হয়।

উঠান বৈঠকে এসময় অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন- মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমিনুল হক ভুলু, আওয়ামী লীগ নেতা রহিম বাদশাহ, ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক, পাথালিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সুমন মন্ডল পন্ডি, পাথালিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন জুলহাস, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুর মোঃ নুরু প্রমুখ। উঠান বৈঠকে এসময় ২নং ওয়ার্ডে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আদন্ন ইউপি নির্বাচনে পাথালিয়ার চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মোয়াজ্জেম হোসেনের প্রতি তাদের সমর্থন প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে এসময় সাংবাদিকগণ সহ পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।