ঢাকা ২০ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ৬ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ ৫ আগস্ট সরকারি ছুটির ঘোষণা আসছে ২৫৩ জনের গুমের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন প্রবাসীরা ফেরার সময় শুল্ক ছাড়াই আনতে পারবেন যে ১৯ পণ্য বাংলাদেশকে দুই প্রকল্পে ৬৪০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘এরিক’ ইসরায়েল-ইরান সংঘাত: জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম গ্রেপ্তার বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা প্রচারে লিফলেট বিতরণ ইসলামপুরে শরীর সুস্থ রাখতে কাঁঠালের উপকারিতা

নাব্য সংকটে অকার্যকর হয়ে পড়ছে দক্ষিণের নৌপথ

#

নিজস্ব প্রতিনিধি

২৪ জানুয়ারি, ২০২২,  10:20 AM

news image

ছবি : সংগৃহীত

দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নৌ-রুটে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযান।দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নৌ-রুটে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযান। শুষ্ক মৌসুমে নাব্য সংকটের কারণে ক্রমেই অকার্যকর হয়ে পড়ছে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নৌ-রুট। লঞ্চগুলো টার্মিনালে নোঙর করতে পারছে না। লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযানকে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ৪১ উপজেলার কোটি মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। দক্ষিণাঞ্চলের ৮৮টি নৌ-রুটের মধ্যে শুকনো মৌসুমে ২৭টি রুট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বাকি ৫৭টি রুটেও ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযান চলাচল করছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া এ নৌপথগুলো সচল রাখতে ড্রেজিংই একমাত্র উপায়। কিন্তু প্রতি বছর শুকনো মৌসুম আসার আগেই বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক ড্রেজিং কার্যক্রম চলতে থাকলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

প্রথম শ্রেণির নৌপথের জন্য কমপক্ষে ৯ থেকে ১২ ফুট এবং ২য় শ্রেণির নৌপথের জন্য ৭ থেকে ৯ ফুট পানি প্রয়োজন। কিন্তু নাব্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি রুটে যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। এসব রুটে চলাচলরত লঞ্চগুলোর মাস্টারদের অভিযোগ, ড্রেজিং চলমান থাকলেও তা সঠিক স্থানে হচ্ছে না। এতে করে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে।  সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শুকনো মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকেই নদীবেষ্টিত দ্বীপ উপজেলা মেহেন্দিগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী লাহারহাট রুটে লঞ্চ চলাচল ব্যাহত হতে থাকে। সেখানে দুই-তিনটি ড্রেজার চালু থাকলেও দীর্ঘদিনেও নাব্য সংকট সমস্যার সমাধান হয়নি। বর্তমানে মাসকাটা নদীর পাতারহাট স্টিমারঘাটে লঞ্চ ভিড়তে পারছে না। নৌ-বন্দর থেকে প্রায় ৩০ মিনিটের দূরত্বের সিমনির চরে ট্রলার, নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শুকনো মৌসুমের শুরু থেকেই মাসকাটা নদীতে দুটি ড্রেজার দিয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃ‌র্পক্ষ প্রভাবশালীদের সুবিধা অনুযায়ী ড্রেজিং করে থাকে। অন্যদিকে নাব্য সংকটে মাঝ নদীতে লঞ্চ আটকে যাচ্ছে, নৌকায় যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী হিজলা উপজেলাগামী লঞ্চগুলোও নাব্য সংকটে কখনোই যথাসময়ে সেখানে পৌঁছাতে পারছে না। হিজলায় চলাচলরত এমভি ইঞ্জাম লঞ্চের মাস্টার জানান, শুকনো মৌসুমের পর থেকেই বন্দরে লঞ্চ ভেড়ানো খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বরিশাল থেকে হিজলার কালীগঞ্জ পৌঁছাতে বিভিন্ন স্থানে নাব্য সংকট থাকায় সময়ক্ষেপণের পাশাপাশি ঝুঁকিও বেড়েছে। লঞ্চ ব্যবসায়ীরা জানান, নাব্য সংকটের কারণে দিনে দিনে রুটগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি রুটে লঞ্চ পৌঁছাতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা দেরি হওয়ায় যাত্রীর সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময়ে লঞ্চ চলাচল আরো কমে আসবে। দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ রুটগুলোর পাশাপাশি ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটের বিভিন্ন স্থানে ডুবোচর জেগে ওঠায় লঞ্চ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ড্রেজিং না হওয়ায় ঘন কুয়াশায় সরু চ্যানেল দিয়ে যাতায়াতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদীতে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং কার্যক্রম চালু থাকলেও সমন্বয়ের অভাবে তা কোনো কাজে আসছে না। একাধিক লঞ্চের মাস্টাররা জানান, মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া, মল্লিকপুর ও কালীগঞ্জ, বামনার চর থেকে লাল খয়রাবাদ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার, চাঁদপুরের শেওড়াবয়া বা মাঝের চর চ্যানেলসহ এসব এলাকার পার্শ্ববর্তী স্থানে অসংখ্য ডুবোচর রয়েছে। মেঘনার চাঁদপুরের হাইমচর থানার মাঝ বরাবর নতুন করে দুটি ডুবোচর জেগে উঠেছে। সেখানে আগে সাত থেকে আট মিটার পানি ছিল। বর্তমানে ডুবোচরের কারণে চ্যানেলটি ছোট হয়ে গেছে। বর্তমানে এ স্থান থেকে ডানদিকে সরে লঞ্চ চালালে উলটো দিক থেকে আসা লঞ্চগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষের আশঙ্কাও বেড়ে যাচ্ছে। ডুবোচর দুটি হাইমচর ও হরিণা ফেরিঘাটের নিচে অবস্থিত। সেখানে এক স্থানে বয়া দেওয়া আছে আর অন্য জায়গায় বয়া নেই। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে। ভাটার সময় পানি কমে গেলে লঞ্চ চলাচল আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, ফলে জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। বিআইডব্লিউটিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মো. মিজানুর রহমান ভূঁইয়া জানান, সারা দেশের নৌপথ ড্রেজিংয়ের জন্য সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস), লঞ্চের মালিক, মাস্টারসহ সংশ্লিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতে ড্রেজিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল নদীবন্দর, বাকেরগঞ্জের কারখানা নদী, কবাই, গারুরিয়া, ডামুডিয়া, লাহারহাট, ভেদুরিয়া, মেহেন্দিগঞ্জসহ বিভিন্ন নদীতে মোট ১৫টি ড্রেজার দিয়ে কার্যক্রম চলছে। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে যেভাবে দ্রুতগতিতে মাস্টার লঞ্চ চালিয়ে থাকেন শুকনো মৌসুমে সেভাবে লঞ্চ পরিচালনা করা যাবে না। তিনি যেসব জায়গায় ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান আছে এবং পলি জমে আছে সেসব স্থানে লঞ্চের গতি কমিয়ে চলাচলের পরামর্শ দেন। মেহেন্দিগঞ্জের মাসকাটা নদীর বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও জাতীয় নদী রক্ষা আন্দোলন বরিশাল বিভাগীয় আহ্বায়ক মো. রফিকুল আলম বলেন, ড্রেজিং কার্যক্রমে সমন্বিত উদ্যোগ নেই। নদীগুলোকে রক্ষা করতে হলে প্রথমে হাইড্রোলজিক্যাল সমীক্ষা চালিয়ে নদীর মানচিত্র তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।
-সূত্র: ইত্তেফাক 

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম