ঢাকা ২০ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ৬ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ ৫ আগস্ট সরকারি ছুটির ঘোষণা আসছে ২৫৩ জনের গুমের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন প্রবাসীরা ফেরার সময় শুল্ক ছাড়াই আনতে পারবেন যে ১৯ পণ্য বাংলাদেশকে দুই প্রকল্পে ৬৪০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘এরিক’ ইসরায়েল-ইরান সংঘাত: জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম গ্রেপ্তার বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা প্রচারে লিফলেট বিতরণ ইসলামপুরে শরীর সুস্থ রাখতে কাঁঠালের উপকারিতা

ধারাবাহিকভাবে কমছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৭ মার্চ, ২০২৪,  10:56 AM

news image

ধারাবাহিকভাবে কমছে সঞ্চয়পত্র বিক্রির হার। সঞ্চয়পত্র বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতির কারণে যেখানে জীবনধারণ কঠিন হয়ে যাচ্ছে, সেখানে সঞ্চয়পত্র কিনে টাকা আটকে রাখতে চাইছেন না সাধারণ মানুষ। আয়করসীমা কম থাকা এবং রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হওয়ার কারণেও সঞ্চয়পত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেছে। প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে ব্যাংকের চেয়ে ডাকঘরে সঞ্চয়পত্রের ক্রেতা কম।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি দিন দিন কমছেগতকাল বুধবার রাজধানীর কয়েকটি পোস্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ মানুষ এসেছেন দেশের বিভিন্ন স্থান ও বিদেশে পার্সেল পাঠাতে। কিছু লোক এসেছেন সঞ্চয়পত্রের মুনাফার টাকা নিতে। মাত্র দু-একজন ক্রেতা পাওয়া গেল সঞ্চয়পত্রের। দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর বনানী পোস্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ-ছয়জন লোক সেবা নিতে এসেছেন।

তাঁদের একজন মোবাইল ব্যাংকিং নগদের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে এসেছেন, একজন স্ট্যাম্প কিনতে এসেছেন। বাকি সবাই পার্সেল পাঠাবেন। তাঁদের একজন মো. হোসাইন বলেন, ‘সঞ্চয়পত্র কিনতে আগ্রহী নই। আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কেউ কিনেছে বলে আমার জানা নেই।

একই পোস্ট অফিসে স্ট্যাম্প কিনতে আসেন রেজওয়ান নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক চাকরিজীবী। তিনি বলেন, ‘সঞ্চয়পত্র কিনতে তো টাকা লাগবে, সেটা পাব কোথায়? যে চাকরি করি বা বেতন পাই, এতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাসাভাড়া করে থাকাই তো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’

বনানী পোস্ট অফিসের পোস্টাল অপারেটর আজিজুন নাহার বলেন, ‘আজকে আট লাখ টাকার একটি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। আগের চেয়ে কমেছে না বেড়েছে, এটা বলতে পারছি না। এখন বেশির ভাগ গ্রাহক ব্যাংক থেকে সঞ্চয়পত্র কিনছে।

আমরা ক্যাশ টাকাও নিতে পারি না। সব চেকের মাধ্যমে নিতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘আজকে যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, এটার চেক জিপিওতে পাঠিয়ে দেব। তারপর সেটা ব্যাংকে যাবে। তারপর চেক ইস্যু হবে। এ জন্য গ্রাহকরা পোস্ট অফিসের সিস্টেমটাকে একটু লেংদি মনে করছে। আগে আমরা নিজেরাই সব কিছু করতে পারতাম। আর ব্যাংকে গেলে তাত্ক্ষণিক চেক ইস্যু হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এখানে পার্সেল সেবা বেশি নিচ্ছে। অন্যদিকে সোনালী ব্যাংকের বনানী শাখায় গিয়ে দেখা যায়, লোকজন তেমন নেই। সারা দিনে মাত্র একজন গ্রাহক সঞ্চয়পত্র কিনেছেন।

এই ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার মনে হচ্ছে বেশি বিক্রি হচ্ছে। আজকে পাঁচ লাখ টাকার একটা সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। মুনাফা আগের মতোই। গ্রাহকদের মধ্যে আগ্রহ থাকে সঞ্চয়পত্র করার। অন্যান্য স্কিমের তুলনায় সঞ্চয়পত্রের মুনাফাটা বেশি। এ জন্য যাদের জমানো টাকা আছে, সবাই এটা করতে চায়।

তিনি বলেন, ‘ট্যাক্স রিটার্নে অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপটা জমা দেওয়া গ্রাহকদের জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত টিন ফ্রি। কিন্তু তার পর থেকে টিন শো করতে হয়। ধরুন, পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে কেউ সঞ্চয়পত্র কিনেছেন, তিনি আরো এক লাখ টাকা জমিয়ে ওই টাকার সঙ্গে যুক্ত করতে চান, তখন তিনি পারেন না। টিন সার্টিফিকেট লাগে। এটা যদি ১০ লাখ পর্যন্ত করা যায়, গ্রাহকরা খুশি হবেন, বেশি কিনবেন।’

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যে জানা গেছে, আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গ্রাহকরা টাকা নিয়ে নিচ্ছেন, সেই হারে নতুনভাবে কেউ কিনছেন না। এতে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ কমে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে চলে এসেছে।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের হিসাবে দেখা গেছে, ছয় হাজার ৭৪৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ছয় হাজার ৮৯৩ কোটি ৬৪ টাকা। এতে সেপ্টেম্বর মাসে সরকারের নিট ঋণ ঋণাত্মক হয়ে ১৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। অর্থাৎ, সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেওয়ার চেয়ে আগের সুদ-আসল পরিশোধ বেশি হয়েছিল।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ২১ হাজার ৬৫৬ কোটি পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আসল ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ২২ হাজার ৯২১ কোটি দুই লাখ টাকা। মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর তিন মাসে সরকারের নিট ঋণ ঋণাত্মক হয়ে দাঁড়ায় এক হাজার ২৬৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণের চেয়ে পরিশোধের পরিমাণ বেশি।

গত অর্থবছরের একই সময়ে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৩০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। তার আগের অর্থবছরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল আট হাজার ৫৫৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মানে সরকারের সঞ্চয়পত্র বিক্রি ধারাবাহিকভাবে কমছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যে জানা গেছে, এখন ১১টি স্কিম চালু রয়েছে, যা বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকে এক হাজার ৩০৭টি এবং ডাক অধিদপ্তরের অধীন বিভিন্ন পোস্ট অফিসের এক হাজার ৫০০টি শাখা অফিসের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করা হচ্ছে। পূর্ণ মেয়াদের পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১.৫২ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১.০৪ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১.২৮ শতাংশ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১.৭৬ শতাংশ।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ার বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেকেই সঞ্চয়পত্র ভেঙে ফেলছেন। এতে সঞ্চয়পত্র কমে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, তিনি আর নতুন করে সঞ্চয়পত্র করছেন না। এ জন্য সরকারকে ঋণও পরিশোধ করতে হচ্ছে, কিন্তু নতুন বিক্রি বাড়ছে না। আবার সঞ্চয়পত্রের সুদ বেশি হওয়ায় সরকারও সঞ্চয়পত্রে নানা রকমের কঠোর নিয়ম-কানুন আরোপ করেছে। যার প্রভাবেও বিক্রি কমতে পারে। সূত্র : কালের কন্ঠ 

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম