ঢাকা ২০ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ৬ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ ৫ আগস্ট সরকারি ছুটির ঘোষণা আসছে ২৫৩ জনের গুমের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন প্রবাসীরা ফেরার সময় শুল্ক ছাড়াই আনতে পারবেন যে ১৯ পণ্য বাংলাদেশকে দুই প্রকল্পে ৬৪০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘এরিক’ ইসরায়েল-ইরান সংঘাত: জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম গ্রেপ্তার বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা প্রচারে লিফলেট বিতরণ ইসলামপুরে শরীর সুস্থ রাখতে কাঁঠালের উপকারিতা

দোয়া কবুল হওয়ার রহস্য

#

০৮ জুলাই, ২০২৪,  11:22 AM

news image

আরবি ‘দোয়া’ শব্দের অর্থ প্রার্থনা করা, আপন রবকে একান্তে ডাকা, তার সামনে নিজ সত্তাকে পেশ করা, নিজের প্রয়োজন-আরজি তুলে ধরা। হাদিস শরিফে দোয়াকে বলা হয়েছে ইবাদতের মগজ বা মূল। দোয়ার মধ্যে রবের সামনে বান্দার আবদিয়াত ও দাসত্ব পূর্ণরূপে প্রকাশ পায়। এসময় বান্দা আল্লাহ ছাড়া সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে, সব উপায়-উপকরণ পেছনে ঠেলে একমাত্র দয়াময় প্রতিপালকের সামনে হাজির হয়। নিজের দীনতা ও হীনতা স্বীকার করে রবের সামনে নিজ অসহায়ত্ব ও মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করে। নিজ সত্তা ও ক্ষমতা সবকিছু তুচ্ছজ্ঞান করে কায়োমনে ধরনা দেয় প্রভুর দরবারে। এ জন্যই দোয়াকে বলা হয়েছে ইবাদতের মগজ। বরং বলা হয়েছে ‘দোয়াটাই ইবাদত’। নোমান ইবনে বশির (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ এরপর নবীজি (সা.) সুরা মুমিনের ৬০ নম্বর আয়াত তেলাওয়াত করেন- ‘তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, তোমরা আমার কাছে দোয়া কর, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। নিশ্চয়ই অহংকারবশে যারা দোয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তারা অপমানিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ১৪৭৯; জামে তিরমিজি, হাদিস নম্বর ২৯৬৯)। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা তিবি (রহ.) বলেন, ‘দোয়া হচ্ছে আল্লাহর কাছে বান্দার সর্বোচ্চ বিনয় প্রদর্শন এবং তাঁর কাছে নিজের মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করার মাধ্যমে তারই কাছে আশ্রয় গ্রহণ করা।’ (তোহফাতুল আহওয়াজি, ৯ম খণ্ড, ২২০ পৃষ্ঠা)। দোয়া শ্রেষ্ঠ ইবাদতের একটি। মহান রবের আনুগত্যের অংশ দোয়া। সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহকে যে যত বেশি চিনতে পেরেছেন সে তত বেশি দোয়ায় মশগুল হয়েছেন। দুঃখজনক সত্য হচ্ছে, অধিকাংশ মানুষ বিপদে পড়ার পর দোয়া করে। এটা ভুল পন্থা। মুমিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সুখ ও আনন্দ সর্বাবস্থায় দোয়ার প্রতি যত্নশীল হওয়া।  আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে, বিপদ ও সংকটের সময় আল্লাহ তার দোয়া কবুল করুন, সে যেন সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের সময় বেশি বেশি দোয়া করে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস নম্বর ৩৩৮২)।  বান্দা যখন দোয়া করে তখন সে তার সবকিছু আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে সাহায্যপ্রার্থী হয়। তার প্রয়োজন পূরণে আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ নির্ভরশীল হয়। সে এ বিশ্বাস থেকেই আল্লাহমুখী হয়। আল্লাহ ছাড়া আর কারও প্রতি সে মনোনিবেশ করে না। বন্দেগির এ দৃশ্যটি অসাধারণ। আল্লাহতায়ালা কাকুতি-মিনতি করে প্রার্থনাকারীকে পছন্দ করেন। ভরসাকারীকে পছন্দ করেন। একনিষ্ঠ ইবাদতকারীকে পছন্দ করেন।  নিরুপায় বান্দার দোয়া থাকে ইখলাসে পূর্ণ। সে দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না। মানুষের এ নিরুপায় অবস্থায় আশ্চর্য এক রূপ ফুটে ওঠে। সে তার হৃদয়-মন ও জিহ্বা দিয়ে আল্লাহমুখী হয়ে যায়। পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা রেখে আল্লাহর কাছে চায়। নিরুপায় ব্যক্তির দোয়া কবুলের পেছনের রহস্য এটাই। দুনিয়ায় যখন সে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হাত তুলে, আসমানে তখন তার জন্য মুক্তির ব্যবস্থা হয়। কারণ সে এখন সত্যিকারের বিশ্বাসী হয়েছে। সে এখন বিশ্বাস করছে পৃথিবীর কোনো কিছুই তার কাজে আসবে না, তার ভরসা একমাত্র আল্লাহতায়ালা। শেষ করছি দোয়া কবুলের আশার বাণী শুনিয়ে।  আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আমি আমার বান্দার সঙ্গে তার দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে আচরণ করে থাকি। বান্দা যখন আমায় ডাকে আমি তার ডাকে সাড়া দিই।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ২৬৭৫)।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পীরসাহেব, আউলিয়ানগর।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম