
নিজস্ব প্রতিবেদক
২১ মে, ২০২৫, 10:51 AM
দখল-দূষণে রূপ হারিয়েছে বুড়িগঙ্গা
দোষীদের শাস্তি দাবি
কুচকুচে কালো পানিতে ভেসে যাচ্ছে ময়লার ভেলা। উৎকট দুর্গন্ধ তো আছেই। এমন দূষণেই জর্জরিত বুড়িগঙ্গা। দিনের পর দিন ঢাকার ডাম্পিং হিসেবে ব্যবহৃত হতে হতে আপন রূপটাই হারিয়ে ফেলেছে এই নদী। এমনকি মাটির তলার ১৫ ফিট নিচেও মিলছে প্লাস্টিক বর্জ্য। দেশের আইনে জীবন্ত সত্তার স্বীকৃতি পেলেও নদীরই কোনো নিরাপত্তা নেই।
সদরঘাট, ওয়াইজঘাটসহ নানা স্থানে সুয়ারেজ লাইন দিয়ে নদীতে পড়ছে পুরো ঢাকা সিটির অপরিশোধিত ময়লা পানি। দীর্ঘদিনের অত্যাচারে এখন নদীর পানিই যেন এসব পানির চেয়েও বেশি কালো আর দুর্গন্ধযুক্ত। যার প্রভাবে বুড়িগঙ্গার বড় অংশেই দেখা মেলে না জলজ প্রাণীর। যদিও এলাকাবাসীর এক সময়ের মিঠা পানির মূল উৎসই ছিল এ নদী। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, এই নদীর পানি এক সময় খুব পরিষ্কার ছিল। এখানে বড় বড় মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন নদীটা মরে গেছে। অপর একজন বলেন, নদী দখলের অন্যতম কারণই হলো এতে ময়লা ফেলা।
এক সময়ে মাঝিরা যাত্রী পরিবহনের সঙ্গে বাড়তি আয়ের জন্য মাছ ধরতেন, কিন্তু এখন সেই জায়গা করে নিয়েছে নানা প্লাস্টিক বর্জ্য। এর বাইরে প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে পচা সবজি, ফল এবং বিভিন্ন হোটেল-দোকানপাটের ময়লা-আবর্জনা। একজন বলেন, এক সময় ১০ হাত নীচেও মাছ দেখেছি। মাছ ধরে খেয়েছি। কিন্তু এখন মাছ তো দূরের কথা, মাছের একটা খৈশও নাই। এখন আছে বোতল, শিশি আর প্লাস্টিক। অপর একজন বলেন, এখন মাছ ধরা তো দূরের কথা, পোকাও পাওয়া যায় না। এখন বোতল কুড়িয়ে গরীবরা টুকটাক আয় করে।
দিনকে দিন কমছে নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততা। কমছে পানির প্রবাহও। সব মিলে বুড়িগঙ্গা পাড়ে দাঁড়াতেই যেন দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়। এ দায় কার! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ময়লা ফেলেই ধীরে ধীরে নদী ভরাট করছে দখলদাররা। এমনকি বুড়িগঙ্গার তলার মাটির ১৫ ফিট নিচেও প্লাস্টিক বর্জ্য পাওয়া গেছে।
পরিবেশবিদ অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, নদীগুলোতে মাছের পরিবর্তে প্লাস্টিকের বোতলের পরিমাণ বেশি। আমরা বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরীর বিভিন্ন পয়েন্টে মাটি খনন করে ১৫ ফিট গভীর পর্যন্ত প্লাস্টিকের উপস্থিতি পেয়েছি। এই নদীতে জীবের বসবাসের ইকোসিস্টেম তৈরি হওয়ার মতো অন্তত শুষ্ক মৌসুমে থাকে না।
২০২৩ সালে বুড়িগঙ্গা দখল-দূষণের জন্য প্রায় ২৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাকে দায়ী করে বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী এম আতিকুর রহমান বলেন, নদী রক্ষায় বারবার আইন পরিবর্তন এবং রায় আনা কোনো ফলাফল দেবে না। বরং যে আইন আছে তা কতটুকু প্রয়োগ করা হয়েছে সে বিষয়টি দেখভাল করতে হবে। নদী রক্ষা কমিশনের কাজের অগ্রগতি রাষ্ট্রীয়ভাবে তুলে ধরতে হবে।
পয়ো বর্জ্য কিংবা রাসায়নিক বর্জ্য যেন নিষ্কাশন ছাড়া নদীতে ফেলা না হয় তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি যারা নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি সর্বসাধারণের। সূত্র : সময় সংবাদ