ঢাকা ১৮ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
জনসংযোগ-নিরাপত্তার মিশ্রণে দায়িত্ব পালনে এসএসএফের সদস্যদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান সন্ধ্যায় হাসপাতালে যাবেন খালেদা জিয়া বন্দর নবীগঞ্জে পাষণ্ড স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন আরেক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তুরিন আফরোজ হোলি আর্টিজানে হামলা: ৭ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ভবন ধস, দগ্ধ ৬ সরকারি পর্যায়ে ভারত থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ ১৩ ছক্কায় যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাক্সওয়েলের ‘তাণ্ডব’ ব্যাংক মালিকদের দখলে ঋণের ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি ঢাকার ১৩ ওয়ার্ড ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে

ঢাকার ১৩ ওয়ার্ড ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ জুন, ২০২৫,  11:11 AM

news image

ডেঙ্গুর প্রাক-মৌসুম জরিপ

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা প্রতি বছর তিনটি জরিপ পরিচালনা করত। কিন্তু বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জরিপগুলো করা হয়নি। বিগত এক বছরে মাত্র একটি জরিপ পরিচালনা করেছে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। সেই জরিপে ঢাকা নগরীর ১৩টি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি পাওয়া গেছে। প্রাক মৌসুমে করা সেই জরিপ মৌসুম শুরুর পরও প্রকাশ করা হয়নি। ফলে সংশ্লিষ্টরা সচেতন হওয়ার সুযোগ পাননি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনস্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে যত গবেষণা ও জরিপ থাকবে, সেটি নিয়ন্ত্রণ করা তত সহজ হবে। বিভিন্ন জরিপের প্রাপ্ত ফল বিশ্লেষণ করে রোগ বিস্তারের কোন পর্যায়ে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, সেটি নিরূপণ করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, প্রাক-মৌসুম জরিপ পরিচালনা করা হতো মৌসুমের আগে এডিসের সামগ্রিক পরিস্থিতি অনুধাবন ও সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য। মৌসুম জরিপ করা হতো সেই সময়ের ঝুঁকি বোঝা ও সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য, আর মৌসুম-পরবর্তী জরিপ পরিচালনা করা হতো সংক্রমণের স্থায়িত্ব বা কতটা দীর্ঘ হবে, সেটা বোঝার জন্য। এভাবে তিন বা পাঁচ বছরের জরিপের ফল বিশ্লেষণ করে একটা রোগতাত্ত্বিক প্যাটার্ন পাওয়া যায়, যা থেকে রোগটি নিয়ন্ত্রণে সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব। অধ্যাপক বে-নজির বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের হঠাৎ করে ওপি (অপারেশনাল প্ল্যান) বন্ধ করার হঠকারী সিদ্ধান্তে শুধু ডেঙ্গু নয়, দেশে সব ধরনের সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। প্রাক-মৌসুম জরিপের ফলে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ছয়টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছয়টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার ব্রুটো ইনডেক্স (লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ) ২০-এর বেশি। এ ছাড়া সাতটি ওয়ার্ডে মধ্যম পর্যায়ের ঝুঁকি রয়েছে। এ ওয়ার্ডগুলোতে ব্রুটো ইনডেক্স ১০-এর বেশি। এ ছাড়া ১৯টি ওয়ার্ড নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ এবং আটটি ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স শূন্যের কোঠায় রয়েছে। অর্থাৎ ওই ওয়ার্ডগুলোতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়নি। এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাতটি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। মধ্যম পর্যায়ের ঝুঁকিতে রয়েছে ১৮টি ওয়ার্ড এবং স্বল্পঝুঁকিতে ১৯টি ওয়ার্ড। এ ছাড়া দক্ষিণ সিটির ১৫টি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়নি। উভয় সিটিতেই এডিস মশার লার্ভা সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে বহুতল ভবনে ৫৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ ছাড়া ১৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবনে, একক বাড়িতে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, সেমিপাকা বাড়িতে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ফাঁকা স্থানে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিকভাবে রোগতাত্ত্বিক জরিপ ও বিশ্লেষণ না করায় চলতি বছরে দেশের ডেঙ্গুর গতিপ্রকৃতি বোঝা সম্ভব হচ্ছে না। এতে এই মৌসুমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ অনেকটা কঠিন হয়ে পড়বে। এরই মধ্যে জেলা পর্যায়ে রোগটির মারাত্মক বিস্তার ঘটতে শুরু করেছে। সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আমরা ভাবছি। এরই মধ্যে স্থানীয় সরকার সচিবের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বরিশাল এলাকায় পানি জমে থাকায় সেখানে সংক্রমণ বাড়ছে। আমাদের কাছে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট আছে। তবে মনে রাখতে হবে সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বিগত বছরের (২০২৪) চিত্রে দেখা যায়, তখনো সবচেয়ে বেশি লার্ভ পাওয়া গিয়েছিল বহুতল ভবনে ৪২ দশমিক ৩৩ শতাংশ, নির্মাণাধীন ও একক বাড়িতে ২১ শতাংশের কিছু বেশি, সেমিপাকা বাড়িতে ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং খালি জায়গায় ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। গত বছরের আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছিল ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সী ১৫ হাজার ১১০ জন; ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী ১৪ হাজার ৬৩ এবং ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সী ১৩ হাজার ১৩৫ জন। এ ছাড়া সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছিল ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৫৬ জনের এবং ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সী ৫২ জনের। গত ১০ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬ হাজার ৬০ জন এবং মৃত্যু হয়েছিল ১৪ জনের; ২০১৭ সালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ অনেকটাই কম ছিল। ওই বছর আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৭৬৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছিল আট জনের। এ ছাড়া ২০১৮ সালে আক্রান্ত হয় ১০ হাজার ১৪৮ এবং মৃত্যু ২৬ জনের; ২০১৯ সালে আক্রান্ত ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন, মৃত্যু ১৭৯ জনের; ২০২০ সালে আক্রান্ত ১ হাজার ৪০৫ এবং মৃত্যু সাতজনের; ২০২১ সালে আক্রান্ত ২৮ হাজার ৪২৯ জন, মৃত্যু ১০৫ জনের; ২০২২ সালে আক্রান্ত ৬২ হাজার ৩২৮ জন, মৃত্যু ২৮১ জনের। ২০২৩ সালে আক্রান্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন, মৃত্যু ১ হাজার ৭০৫ জনের এবং ২০২৪ সালে আক্রান্ত ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন, মৃত্যু ৫৭৫ জনের। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৪৬৬ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। এদিকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রোগটিতে নতুন করে ২৪৪ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ে মৃত্যুর তথ্য নেই। আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরিশালে ১৩৮ জন। সূত্র : দৈনিক কালবেলা 

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম