ঢাকা ২৪ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চাই : গভর্নর ইসরাইলের সাথে যুদ্ধবিরতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ইরানের একনেকে ৮৯৭৪ কোটি টাকার ১৭ প্রকল্প অনুমোদন দেশের ৫৭ কলেজের নাম পরিবর্তন সরকারি চাকরিজীবীদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি নগর ভবনে ইশরাক সমর্থকদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২ ঠাকুরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মেয়ে নিহত সাতক্ষীরায় স্বাস্থ্য সহকারীদের ৬ দফা দাবিতে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালিত অবশেষে যুদ্ধবিরতি নিয়ে মুখ খুললেন নেতানিয়াহু কোনো ধরনের মবকেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না: ডিএমপি কমিশনার

ডেঙ্গু: হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ, হিমশিম চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ জুন, ২০২৫,  11:54 AM

news image

রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে। এসব রোগীর বড় অংশ আসছে ঢাকার বাইরে থেকে। ঢাকার বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৮৫ জন চিকিৎসাধীন। বাড়তি রোগীর সামাল দিতে চিকিৎসক ও নার্সদের চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে।  এদিকে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ে ৩৯২ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই যদি কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ বছর ৮ হাজার ১৫০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে জুনের ২৩ দিনে সেবা নিয়েছেন ৩ হাজার ৮০৫ জন। মে মাসে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৭৭৩ জন। সে হিসাবে আগের মাসের তুলনায় জুনের ২৩ দিনেই রোগী হয়েছে দ্বিগুণের বেশি। এদিকে জানুয়ারি থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদের মধ্যে জুনের প্রথম ২৩ দিনে ১১ জনের মৃত্যু হয়। জুনের ৩ হাজার ৮০৫ রোগীর মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৪ দশমিক ৭১ শতাংশ রোগী মিলেছে বরিশাল বিভাগে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরে ১৭ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩ শতাংশ এবং ঢাকা মহানগরের বাইরে ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ রোগী পাওয়া গেছে। বাকি ১৭ দশমিক ১২ শতাংশ অন্য বিভাগে। রাজধানীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড), শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে শয্যার চেয়ে বেশি রোগীর সেবা দিচ্ছে। ঢামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় ২০ শয্যার আলাদা ওয়ার্ড করা হয়েছে। সেখানে বর্তমানে ৬৮ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত মাসে এই হাসপাতালে রোগী ছিলেন ৩৩ জন। জুনের শুরু থেকে রোগী বাড়ছে।  চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, শয্যা সংকট, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি ও অতিরিক্ত রোগীর চাপ সবকিছু মিলিয়ে হাসপাতালগুলোর সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফারুক আহাম্মদ জানান, অনেক সময় এক শয্যা দুই রোগীকে রাখতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সাধ্যমতো সেবা দিতে, তবে এই চাপ আরও বাড়লে সামাল দেওয়া কঠিন হবে। ঢামেক হাসপাতালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে মেডিসিন ওয়ার্ড পর্যন্ত উপচে পড়া ভিড়। ডেঙ্গু রোগীর অধিকাংশই জ্বর, বমি ও শরীরে ব্যথা নিয়ে আসছেন। জরুরি বিভাগে একসঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী অপেক্ষায় রয়েছেন। হাসপাতালের বরান্দায় অন্তত ১৫ জন রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। মেডিসিন ওয়ার্ডের এক নার্স বলেন, তিন দিন ধরে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। পুরোনো রোগী ছাড়তে না পারায় নতুনদের জায়গা দিতে পারছি না।

কামরুল হাসান নামের এক রোগীর বাবা আতিকুর রহমান বলেন, দুপুর থেকে হাসপাতালে ঘুরছি। কোথাও শয্যা পাচ্ছি না। ছেলের জ্বরের সঙ্গে রক্তপাত শুরু হয়েছে, খুব ভয় পাচ্ছি। শেষে বারান্দার একটা খালি জায়গায় বসিয়ে রেখেছি। ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করছেন, কিন্তু এত রোগীর ভিড়ে সময় মতো সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দীর্ঘ সময় লাগছে। একই অবস্থা রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি কভিড-১৯ হাসপাতালে। বর্তমানে ২০ রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ১০ জন। এর আগের মাসে একজন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন।  হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল তানভীর আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু রোগী জুন থেকে বাড়তে শুরু করেছে। তবে আমাদের ৩৫০ শয্যা এখন রোগীর সেবার জন্য প্রস্তুত।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার উৎস মূলত প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, ফুলের টব, নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ কিংবা ড্রেনে জমে থাকা পানি। কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, বর্ষা শুরুর আগেই ব্যাপক পরিচ্ছন্নতা অভিযান, মশার লার্ভা ধ্বংস, নিয়মিত ফগিং এবং জনসচেতনতা কার্যক্রম না চালালে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এবার যেভাবে মৌসুমের শুরুতেই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তাঁর মতে, শুধু হাসপাতালভিত্তিক প্রস্তুতি নয়, বরং কমিউনিটি লেভেলে মশা নিয়ন্ত্রণ ও বাসার আশপাশ পরিষ্কার রাখা এখন সবচেয়ে জরুরি। তা না হলে পরিস্থিতি দ্রুতই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, অনেক রোগী দেরিতে হাসপাতালে আসছেন, তখন অবস্থা অনেকাংশে জটিল ও বিপজ্জনক হয়ে যায়। ফলে দ্রুত তাদের শক বা ফুসফুস ফুলে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হচ্ছে, তখন সঠিক চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। এ বছর ঢাকায় ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের  মৃত্যু বেশি। সূত্র : দৈনিক সমকাল 

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম