শীতের সকালে গরম ভাত আর সজের পাতা কাঁচা মরিচে দিয়ে গোল বেগুন ভর্তা শুধু জামালপুরেই না- এর স্বাদ যেন সারাদেশের বাঙালির মুখে মুখে। দিন দিন এই বেগুনের চাহিদা বেড়েই চলছে। এই বেগুন লাভজনক হওয়ায় চাষ বেড়েছে দ্বিগুণ। চরাঞ্চলের কৃষকরা শীতের ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেগুন গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। জামালপুর জেলার ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ এবং সদর উপজেলার লক্ষীরচর, তুলশীপুর, নরুন্দি, ইটাইল, হাজীরপুরে চরাঞ্চলে গোল বেগুনের ব্যাপক চাষ করা হয়েছে। গোল বেগুন লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন গোল বেগুন চাষে। এ বছর শীতের শুরু থেকেই গোল বেগুন বাজারে উঠছে।

প্রথম দিকে দামও ভালো পেয়েছেন কৃষকরা। প্রতিমণ গোল বেগুন বিক্রি হয়েছে ২ হাজার টাকা থেকে ২৫শ টাকায়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা গোল বেগুন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে এখন আমদানি বেশি হবার ফলে বাজারে বেগুনের দাম নেমে এসেছে। প্রতিমণ গোল বেগুণ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়। এতে হতাশায় পড়েছেন না বেগুন চাষিরা। কারণ অন্য বেগুনের চাহিদার চেয়ে গোল বেগুনের দাম বাজারে সবসময়ই বেশি থাকে। কৃষকরা আরো বলছেন  তেল, সার কিটনাশকের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বেগুনের জমিতে পানি দিতে শ্রমিক খরচ বেশি। বর্তমান বাজার অর্ধেকে নেমে এসেছে। আবার কোন কোন বেগুন টালে দেখা দিয়েছে পোকার আক্রমণ। কৃষকরা বলেন, প্রচন্ড শীতের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

শীত কমলে বা একটু বৃষ্টি হলে পোকাজনিত সমস্যা চলে যাবে। সেই সাথে প্রতিটি গাছে নূতন করে পাতা গজিয়ে জোয়ারে প্রতিটি গাছ আবারো পরিপুষ্ট হয়ে যাবে।সরিষাবাড়ি উপজেলার আওনা ইউনিয়নের কুলপাল চরের গোল বেগুন চাষি ইলিয়াস জানান, বেগুনের চাষ ভালো হয়েছে। ফলনও ভালো। খরচ বেশি বর্তমানে বাজার অর্ধেকে নেমে এসেছে।তেল সার কিটনাশকের দাম বেশি। তারপরও শুরুতেই খরচ উঠেছে। আশা করছি দ্বিগুন লাভ হবে। জগন্নাথগঞ্জ পুরাতনঘাটের তারাকান্দি বিক্রেতা সোলায়মান হোসেন বলেন, অন্য বেগুনের চেয়ে গোল বেগুনের ক্রেতার আগ্রহ বেশি। এছাড়া গোল বেগুনের চাহিদা সারা বছরই থাকে। তাই দোকানে অন্য বেগুন না রাখলেও ক্রেতার ব্যাপক চাহিদার ফলে গোল বেগুন দোকানে রাখতে হয়। পুরুষ মহিলা যে কোনো ক্রেতাই দোকানে আসে কেউই গোল বেগুন ছাড়া যায় না। তিনি প্রতিদিন দুই থেকে তিন মণ গোল বেগুন বিক্রি করেন।  অপর চাষি মুকুল মিয়া বললেন, প্রথম প্রথম ক্ষেত থেকেই খুচরা পাইকাররা তাদের চাহিদা মতো গোল বেগুন কিনে নিতেন। এখন আমদানি বেশি হবার ফলে বাজারে নিতে হয়। বাজারে অন্য বেগুনের দিকে পাইকারদের নজর না থাকলে গোল বেগুনের যাদু ক্রেতা বিক্রেতা দুজনই আকৃষ্ট করে রাখে।  তিনি আরো জানান, প্রতি বছরের মতো এ বছরও দেড় বিঘা জমিতে গোল বেগুনের চাষ করেছেন। যতদিন পর্যন্ত সার, পানি দেয়া যাবে ততদিন চলবে বেগুনের ফলন। জামালপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নিতাই চন্দ্র বণিক বলছেন, জামালপুরে গোল বেগুন লাভজনক হওয়ায় দিন দিন কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। জেলা এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে শাকসবজির চাষ বেশি হয়েছে। এ বছর জেলায় ১৭ হাজার ৫ শ হেক্টর জমিতে শাক সবজির চাষ হয়েছে। আর গোল বেগুন চাষ করা হয়েছে ৪ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। জেলার সাতটি উপজেলাতেই কম বেশি গোল বেগুনের চাষ হচ্ছে। তাছাড়া গোল বেগুনের জমিতে পোকার আক্রমণও কম হয়।