
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৭ মার্চ, ২০২২, 1:53 PM

চলতি মার্চ মাসে মশা বাড়বে চারগুণ: গবেষণা
গত ছয় মাসের মশার ঘনত্বের মাত্রা, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাত ইত্যাদি পর্যালোচনা করে মশার পূর্বাভাস মডেল তৈরি করে দেখা গেছে, চলতি মাসে মশার ঘনত্ব চরমে পৌঁছাবে। জরুরি পদক্ষেপ না নিলে তা চারগুণ বৃদ্ধি পাবে। সম্প্রতি কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশারের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। গবেষণায় ঢাকা শহরের ছয়টি স্হানকে নমুনা সংগ্রহের জন্য বেছে নেওয়া হয়। এসব এলাকায় গড় ঘনত্বে প্রতি ডিপে (মশার ঘনত্ব বের করার পরিমাপক) ৬০টির বেশি মশা পাওয়া গেছে। যেখানে অন্যান্য সময় ১৫-২০টি মশা পাওয়া যেত। স্হানগুলো হলো-উত্তরা, গুলশান, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, কাঁঠালবাগান ও পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকা।
তবে এই মশাগুলোর অধিকাংশই কিউলেক্স মশা। ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার ঘনত্ব এক শতাংশেরও কম। এ বিষয়ে অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, এই সময়ে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। এই মশা ড্রেন, ডোবা, নর্দমা ও পচা পানিতে জন্মায়। তাই নিয়মিত ড্রেন, নর্দমা, ডোবা ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা উচিত। এদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মশার উপদ্রব বেড়েছে। দিনের বেলা ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে যন্ত্রণার মুখে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। আর রাতে আবাসিক হলে পড়াশোনা ও ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, মশা নিধনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে চলতি মাসে মশার ঘনত্ব আরো চারগুণ বাড়বে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন স্হানের ড্রেন, ডোবা ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার না করা এবং যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থাকায় মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া মশার প্রজনন মৌসুম হিসেবে শীতের সময় এবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে মশক নিধন অভিযানে তেমন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ফলে দিনের পর দিন মশার উপদ্রব বেড়েই চলছে। তবে কয়েকটি হলে সম্প্রতি মশক নিধনের ব্যবস্হা নেওয়া হলেও তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, মুক্তমঞ্চের দক্ষিণ পাশ, শহিদ মিনার সংলগ্ন রাস্তার পাশে, অমর একুশে ভাস্কর্য, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, কেন্দ্রীয় মসজিদের আশপাশ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনে, মুরাদ চত্বর ও টারজান পয়েন্টসহ আরো বেশ কয়েকটি জায়গায় ময়লার স্তূপ গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ড্রেনে দীর্ঘদিন পানি জমে আছে। এসব ময়লার স্তূপ থেকে নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ না করা ও ড্রেনের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্হা না করায় তা পরিণত হচ্ছে মশার প্রজননকেন্দ্রে। এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, ‘মশার কামড়ে হলে থাকতে পারছি না। খোলা স্হানেও ঝাঁকে ঝাঁকে মশা উড়ছে। কোথাও একটু স্হির হলেই মশা কামড়াতে শুরু করে। দাঁড়িয়ে বা বসে দুই মিনিট কথা বলার মতো পরিবেশ নেই। যেখানে যাই সেখানেই মশা। হলে এবং হলের বাইরে মশা বড়ো আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহমান বলেন, হল কতৃর্পক্ষ তাদের জানালে ফগিং মেশিন দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত যারা মশার সমস্যা সম্পর্কে জানিয়েছে তাদেরে ফগিং মেশিন দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহা. মুজিবুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে এস্টেট অফিস প্রত্যেক হলে ফগিং মেশিনের মাধ্যমে স্পে্র করার নির্দেশনা দিয়েছে। হল প্রাধ্যক্ষদেরও সংশ্লিষ্ট মালিদের দিয়ে হলের আশপাশের ঝোপঝাড় কেটে ফেলার জন্য বলা হয়েছে। -সূত্র: সমকাল