
নিজস্ব প্রতিনিধি
০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, 5:05 PM
গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গরু দৌড় প্রতিযোগিতা
একসময় প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গরু দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো। কালের বিবর্তনে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিযোগিতা। গরু দৌড় প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে বাড়িতে বাড়িতে আয়োজন করা হতো পিঠাপুলির। অতিথিদের ভীড় বাড়তে থাকতো কয়েক দিন আগে থেকেই। উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়ে যেতো। তবে এখন আগের মতো গরু দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় না। সময়ের সাথে সাথে বদলে গেছে জীবন। তবুও প্রতিবছর ঢাকার নবাবগঞ্জে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী গরুর দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের বিলপল্লী, যন্ত্রাইল ও শোল্লা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে খেলার মাঠে আকর্ষণীয় এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে।
দোহার-নবাবগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জজেলাসহ আশেপাশের এলাকা থেকে নানা আকারের, নানা রঙের শতাধিক গরু নিয়ে আসেন সৌখিন প্রতিযোগিতারা। এটা দেখতে ভিড় করে হাজারও নারী-পুরুষ। এ যেন মানুষেরই মিলন মেলা। যান্ত্রিক জীবনে হাঁপিয়ে উঠা মানুষজন অল্পকিছু সময়ের জন্য হলেও এ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। পরিবার পরিজন নিয়ে গরু দৌড় দেখতে আসেন সবাই। গরু দৌড়কে কেন্দ্র গড়ে আশপাশের মানুষের মনে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। শত বছরের ঐতিহ্যবহন করে এই গরু দৌড়। প্রতিযোগিতা উপলক্ষে সেখানে বসে দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলা। এ যেন হিন্দু, মুসলিম সববয়সী নারী-পুরুষের মিলনমেলা। বারুয়াখালী ইউনিয়নের ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘গরু দৌড় প্রতিযোগিতা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। যুগযুগ ধরে পৌষ মাসের শাকরাইন উপলক্ষে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এটি আমরা প্রতিবছর উপভোগ করি।’ পুরাতন বান্দুরা গ্রামের আব্দুল ওহাব বলেন, ‘বছরে দুইবার আমরা গরু দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে আসি। এই গরু দৌড় একটা ঐতিহ্যবাহী খেলা। প্রাচীন কালের সংস্কৃতির অংশ এটি। আমাদের বাড়িতে গরু দাবড়ান উপলক্ষে আত্মীয়রা বেড়াতে আসে।’ বড় গোল্লা গ্রামের বাপ্পি গমেজ বলেন, ‘ গরু দৌড় দেখতে হাজার হাজার মানুষ ভীড় করে বিলপল্লী মাঠে। বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী এই গরু দৌড় প্রতিযোগিতা। প্রতি বছর আমরা গরু দৌড় দেখতে আসি’। কালের পরিক্রমায় অনেকটা হারিয়েই যেতে বসেছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য গরু দৌড় প্রতিযোগিতা। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে প্রতি বছরের মতো এবারও ঢাকার নবাবগঞ্জে গরু দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বাংলা পঞ্জিকা হিসাবে পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়। মেলা উপলক্ষ্যে কয়েক দিন আগে থেকে আশপাশের বাড়িগুলোতে বাড়তে থাকে অতিথির সংখ্যা। তাদের আপ্যায়নের জন্য রকমারি পিঠাপুলির আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতা দেখতে দুপুর ১টার পর থেকেই নানা বয়সী মানুষ দলে দলে ছুটে আসে। মুহূর্তে মাঠের চারপাশ ভরে যায়। অনুষ্ঠানস্থলকে ঘিরে বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গ্রাম্য মেলা বসে। মেলায় দোকানিরা খাবারের রকমারি পসরা সাজিয়ে বসেন। সেখানেও উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। গ্রাম-বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী গরু দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন জনম জনম ধরে অব্যাহত থাকুক-এমনটিই প্রত্যাশা সবার।